এ দিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছেন, ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর “ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ” থেকে পরিচালকদের পর্ষদসহ সকল সভায় উপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ৪৩ নাম্বার সার্কুলার জারির পর হাইব্রিড পদ্ধতিতে মিটিং করার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি সকল তফশিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক/ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সার্কুলারের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। এই সার্কুলার জারির পর কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান-এ জাতীয় কোন সভা আয়োজন করে তা অবশ্যই বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডির সার্কুলার লঙ্ঘন হবে। এ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি লঙ্ঘন করে হাইব্রিড পদ্ধতিতে এসবিএসির বার্ষিক এ সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন , এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে।
এদিকে ,এসবিএসি বলছে ,বাংলাদেশ সিকিউরিটি এন্ড এক্সেচেঞ্জ কমিশনের ১০ মার্চ ২০২১ এর নির্দেশনা অনুযায়ী তারা হাইব্রিড পদ্ধতিতে এজিএম করেছে। অপরদিকে ,বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানিয়েছে , ৫ আগস্টের পর দেশে সব কিছুতে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। হাইব্রিড পদ্ধতিতে এজিএম করার অনুমোদন থাকার অর্থ হলো ব্যাংকগুলোর পলাতক পরিচালকদেরকে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রাখার পথ তৈরী করে দেয়া।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, স্বৈরাচার হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর রাজনৈতিক বিবেচনায় যে কয়টি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এর মধ্যে এসবিএসি একটি ।কৃষি,গ্রামীণ অর্থনীতিকে গুরুত্ব ও সেবায় নতুনত্ব আনার শর্তে ২০১৩ সালে সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংককে (এসবিএসি) অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মৃণাল কান্তি দেবনাথ, তালুকদার আব্দুল খালেক , এজেডএম শফিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হােসেন, আব্দুল কাদের মোল্লাসহ বিশ্বস্ত কয়েকজন আ.লীগ নেতা বা ব্যবসায়ী এ ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালক হন । ৫ আগস্টে হাসিনার পতনের আগে ও পরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালকদের বেশির ভাগই পালাতক রয়েছে । কেউ দেশে থাকলেও তারা নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল ব্যাংকটি। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের একটি বড় অংশই ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকায় ব্যাংকটিতে সব সময়ই প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের ঘাটতি ছিল। নিয়মিত কার্যক্রমে পরিচালকদের অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংকটিতে এ পর্যন্ত মেয়াদ পূর্তির আগেই ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের পদত্যাগ করতে হয়েছে। গত একযুগের কার্যক্রমে ব্যাংকটির পাঁচ জন এমডির চারজনই মেয়াদ পূর্তির আগেই পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়,ব্যাংকটির ব্যালেন্সশীটেও তথ্য গোপনের প্রবণতা রয়েছে এ ব্যাংকটিতে। পলাতক সাবেক ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরি প্রতিষ্ঠানকে অর্ধশত কোটি টাকার বেশি লোন দিলেও তা প্রকাশ করেননি এসবিএসি ব্যাংক। জাভেদের প্রতিষ্ঠান ও এসবিএসির বালেন্সশীটে অনুসন্ধান করে এ তথ্যের সততা খুঁজে পাওয়া গেছে। তথ্য গোপনের এ বিষয়ে ব্যাংকের সিএফও মান্নান বেপারীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন মিডিয়ার সাথে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুল্লহিল গালিব। আসাদুল্লাহিল গালিবের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন করেন ,এ তথ্য প্রকাশ বাধ্যতামূলক কিনা? এর জবাবে তার কাছে জানতে চাওয়া হয় নয় কোটি টাকার লোন গ্রাহকের তথ্য ব্যালেন্সশীটে উল্লেখ করা হলেও ৫৯ কোটি টাকার গ্রাহকের তথ্য কেন বাদ দেয়া হয়েছে এ প্রশ্ন করা তিনি জানান,এ প্রতিষ্ঠানটি নিয়ম অনুযায়ী বড় গ্রাহকের আওতায় পড়ে না । এ কারণে সে প্রতিষ্ঠানটি ব্যালেন্স শিটে বড় লোন গ্রাহকের তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে, ব্যাংকটির পরিচালক এজেডএম শফিউদ্দীন শামিম হাসিনার পতনের আগেই দেশ ত্যাগ করে দীর্ঘদিন পলাতক রয়েছেন। বিআরপিডির ২০২৪ সালের সার্কুলার নং ৪৩ জারি হওয়ার তিন মাসের মধ্যে তার পরিচালক পদ স্থগিত হয়ে যাওয়ার বিধান ছিল, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম পলাতক পরিচালকদের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে কোন বিষয়ে অবহিত করেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।