খুলনা ডেস্ক:
খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালে ডায়ালাইসিস মেশিন বিকল হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কিডনি রোগীরা। হাসপাতালটিতে স্থাপিত ২৮টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে প্রায় ১৩-১৪টি দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে রোগীদের অপেক্ষার তালিকা, অনেকেই নিয়মিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা তাদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। ডায়ালাইসিস নির্ভর রোগীদের জন্য সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার এই চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি হলেও, মেশিন সংকটের কারণে অনেককে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে ব্যয়বহুল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, জরুরি বিভাগে যাওয়ার পথজুড়ে দুর্গন্ধের পাশাপাশি মশা ও মাছির উৎপাত মারাত্মকভাবে বেড়েছে। এতে সংক্রমণের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ডায়ালাইসিস ছাড়াও প্যাথলজির একাধিক পরীক্ষা বন্ধ থাকায় রোগীদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এনজিওগ্রাম ও হার্টে রিং পরানো সেবাও মাসের পর মাস বন্ধ রয়েছে।
একাধিক রোগী ও স্বজন জানান, চিকিৎসা চালিয়ে যেতে গিয়ে অনেকেই বিক্রি করে ফেলেছেন গৃহস্থালির জিনিসপত্র, জমি ও স্বর্ণালংকার। খালিশপুরের আল-আমিন নামের এক কিডনি রোগী জানান, চিকিৎসার খরচ চালাতে তিনি পৈতৃক জমি ও স্ত্রীর গয়না বিক্রি করেছেন। এখন চিকিৎসা চালু থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে।
হাসপাতাল পরিচালকের বক্তব্য অনুযায়ী, জনবল সংকট এবং আউটসোর্সিং কন্ট্রাক্ট বাতিল হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনার কারণে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। একইসঙ্গে ডায়ালাইসিস মেশিনগুলো পুরনো হওয়ায় নিয়মিত বিকল হচ্ছে। ২৮টি মেশিনের মধ্যে গড়ে ১৬-১৭টি সচল থাকলেও বাকিগুলো একবার সচল হয়ে আবার বিকল হয়ে যাচ্ছে।
সেবা ব্যাহত হওয়ার পেছনে যন্ত্রপাতি সংকট ছাড়াও রয়েছে রি-এজেন্ট সরবরাহে দেরি। ব্লাড সুগার ও ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। এনজিওগ্রাম ও হার্ট রিং পরানোর যন্ত্রপাতিও বিকল হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মে মাসের ১৬ তারিখের মধ্যে কিছু যন্ত্র মেরামত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মশার উপদ্রব প্রসঙ্গে জানানো হয়েছে, সিটি করপোরেশন মাঝে মাঝে ধোঁয়া ছড়ালেও নিয়মিত স্প্রে না হওয়ায় মশার সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যায়। সিসিইউ ও ডায়ালাইসিস ইউনিটেও মশার উৎপাত দেখা যাচ্ছে, অনেক স্বজন নিজেরাই মশারি টানিয়ে নিচ্ছেন।
২০২৩ সালে এই হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেশন হয়েছে ১৪ হাজার ১৯টি এবং প্রায় ৯ হাজার রোগী কিডনি রোগে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে এত বড় রোগীর চাপ সামলাতে হাসপাতালের প্রস্তুতি একেবারেই অপ্রতুল। সাম্প্রতিক নাম পরিবর্তনের পরেও সেবার মানে কোনো উন্নতি না হওয়ায় অনেকেই হতাশ। রোগীরা বলছেন, এই ‘বিশেষায়িত’ তকমা এখন কেবলই একটি নামমাত্র পরিচিতি—বাস্তবে হাসপাতালটি নিজেই যেন এক মুমূর্ষু রোগীতে পরিণত হয়েছে।