খুলনা ডেস্ক:
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৭ বছরের কিশোর ইমন তালুকদার। বৃহস্পতিবার সকালে ইমনের গ্রামের বাড়ি ভেড়ার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শোকের ছায়া পুরো পরিবার ও পাড়ায়। একটি টিনের ঘরে বসে আছেন ইমনের মা রোকসানা বেগম—চোখের পানি শুকিয়ে গেছে, কিন্তু মুখে কোনো শব্দ নেই। সন্তান হারানোর যন্ত্রণা যেন তাকে নিঃশেষ করে দিয়েছে। আশপাশে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।
ইমন ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সে ছিল মধ্যম। বড় ভাই অসুস্থ, বাবা আজাদ তালুকদারও শারীরিকভাবে অক্ষম। সংসার চালাতে তিনি মাঝে মাঝে ভ্যান চালালেও সেটা ছিল অনিয়মিত। পরিবারের সব খরচ, ছোট ভাই-বোনের পড়ালেখা, এমনকি অসুস্থ বাবার চিকিৎসাও কোনোমতে চালাত ইমন। গোপালগঞ্জ শহরের মুন্সি ক্রোকারিজ নামের দোকানে কাজ করত সে। কিন্তু সেই সংসারের হাল ধরার ছেলেটিই গতকাল আর ফিরে আসেনি।
ঘটনার দিন সকালে ইমন প্রতিদিনের মতো কাজে যায়। দোকানের মালিক তাকে দেড়শ টাকা দিয়ে ছুটি দিয়ে দেন। এরপর ইমন বাসায় না ফিরে চলে যায় সংঘর্ষস্থলে। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয় সে। স্থানীয় লোকজন তাকে দ্রুত গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। পরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ সকালে তাকে গোপালগঞ্জ পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ইমনের মামাতো ভাই রানা ভূঁইয়া জানান, ইমন শেষ মুহূর্তে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল। কিন্তু তার ওপর যে নির্মম নির্যাতন হয়েছে, সেটা ভিডিওতে দেখেছেন সবাই। গুলি করার পরেও তাকে পাড়ায় ধরে মারা হয়—এই নির্মমতা সহ্য করতে পারছেন না পরিবারের কেউই।
প্রতিবেশী রাজু তালুকদার বলেন, ইমন শুধু একটি ছেলে ছিল না, সে ছিল পরিবারের আশার আলো। তার মৃত্যুতে শুধু একটি প্রাণই থেমে যায়নি, থেমে গেছে একটি পুরো পরিবারের ভবিষ্যৎ।
অবশেষে বাকরুদ্ধ রোকসানা বেগম হঠাৎ বলে ওঠেন, "এখন আমার সংসার বাঁচাবার মতো আর কেউ নাই। ছাওয়াল মরসে শুইনা ওর বাপ পাগল হইয়া চইলা গেছে। চারটা-পাঁচটা ছেলেমেয়ে লইয়া থাকার কোনো পথ নাই, বাঁচার কোনো উপায় নাই। আমার ছেলেরে যেমন গুলি কইরা পাড়ায় মাইরা ফালাইছে, আমি এর বিচার চাই।"