অপরাধের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানী-বারিধারা
মাদক,নারী ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও এলিট শ্রেণির বেহায়াপনা চরমে
ঢাকার অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারায় প্রতিদিন রাত নামলেই শুরু হয় অপরাধের ভিন্ন এক জগৎ। নামী-দামী নাইটক্লাব, মদের বার, শিসা লাউঞ্জ, স্পা সেন্টার ও অবৈধ গেস্ট হাউজগুলো এখন পরিণত হয়েছে মাদক, নারী ব্যবসা, অশ্লীল নাচ-গান, জুয়া ও চাঁদাবাজির অভয়ারণ্যে।
নাইট ক্লাব ও বারের দৌরাত্ম্য
আবাসিক বাড়ি ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠেছে একাধিক নাইটক্লাব।
• কোয়ালিটি ইন হোটেল, গুলশান নর্থ ক্লাব, অর্চিড নাইট ক্লাব, নরডিক ক্লাব, লোকি বার, লা-ডিপ্লোমা ক্লাব, লেকভিউ বার, কিংফিশার রেস্টুরেন্ট বারসহ একাধিক ক্লাবে রাতভর চলে মদ, অশ্লীল নাচ-গান ও দেহ ব্যবসা।
• আরএম সেন্টারের “র, ক্যানভাস” বার, হোটেল সুইট ড্রিমে রয়েছে ক্লাব বার স্পা, হোটেল শেরিনায় রয়েছে বার, স্পা, ডান্স ক্লাব—এসব স্থানে ভোররাত পর্যন্ত চলে অশ্লীল কর্মকাণ্ড।
• অভিযোগ রয়েছে, অনুমোদিত মদ ছাড়াও এসব ক্লাবে অননুমোদিত এলকোহল বিক্রি হয়। নারীদের টোপ বানিয়ে ধনাঢ্য অতিথিদের প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও প্রায়শ ঘটে।
শিশা লাউঞ্জের আড্ডখানা
গুলশান-বনানী এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে শিসা লাউঞ্জ।

• Montaña Lounge, Mint Club, The Mirage, Melange Coffee N Conversation, Dhaka Regency Shisha World, Hotel Lakeshore Bar, 32 Degree Lounge, Haze, Beloved Hookah Loungeসহ বনানীর ১১ নম্বর রোডজুড়ে অসংখ্য শিসা বার রয়েছে।
• এসব লাউঞ্জে গভীর রাত অবধি চলে তরুণ-তরুণীদের আড্ডা, মাদক সেবন ও অশ্লীলতা।
গুলশান-বনানী এলাকায় কয়েক শত স্পা সেন্টার,কার্যত দেহ ব্যবসার আস্তানায় পরিণত হয়েছে।
গুলশান স্পা সেন্টার,রোড নং-৪১,বাড়ি নং-৭/এ, গুলশান স্পা থাই ,গুলশান রয়েল থাই রোড নং-৫৫, গুলশান এক্সক্লুসিভ স্পা সেন্টার, জি স্পা সেন্টার বনানী, বনানী থাই স্পা, ব্লিচ স্পা বিডি,গোল্ডেন থাই স্পা বনানী, গুলশান-২ এর ২৪ নং রোডের ৯১/বি বাড়িতে রয়েছে একাধিক স্পা সেন্টার তন্মধ্যে প্যারাডাইস স্পা, গিভ লাইভ স্পা, এলিট স্পা, লাক্সারি স্পা সহ গুলশান এলাকায় রয়েছে কয়েক শত মাসাজ স্পা সেন্টার। গুলশান বনানী এলাকায়। আগে থেকে বুকিং দিয়ে সময় নির্ধারন করতে প্রতিবেদক জি স্পার হট লাইন নাম্বারে কথা হলে জানায় তাদের কালেকশনে রয়েছে একাধীক যুবতী নারী পছন্দ মত রুমে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। চাইলে স্পা সার্ভিসের পাশাপাশি সব ধরনের সেবা নেওয়া সম্ভব। মাসাজের আড়ালে চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ।
গুলশান স্পা সেন্টার, গুলশান রয়েল থাই, এক্সক্লুসিভ স্পা, জি স্পা, বনানী থাই স্পা, গোল্ডেন থাই, প্যারাডাইস স্পা, গিভ লাইভ স্পা, এলিট স্পা, লাক্সারি স্পা সহ বহু প্রতিষ্ঠানে আগে থেকে বুকিং দিলে “বিশেষ সেবা” পাওয়া যায়।
প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগে একাধিক স্পা কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, স্থানীয় পুলিশ, সাংবাদিক ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চলছে।

আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ গেস্ট হাউজ চলছে অনৈতিক কর্মকান্ড।
গুলশান বনানী এলাকায় অবৈধ গেষ্ট হাউজের দৌরাত্ব। আবাসিক বাসা বাড়ি ভাড়া নিয়ে চলছে অবৈধ গেষ্ট হাউজ,ঘন্টা চুক্তি রুম ভাড়া দেওয়ার পাশাপাশি উঠতি বয়সের নারী দিয়ে চলছে দেহ ব্যবসা, গুলশানের ৬৮/এ নং রোডে রয়েছে রিরা গেষ্ট হাউজ, গুলশান ২৪নং রোডে রয়েছে ইস্টার্ণ গেষ্ট হাউজ,গুলশান-২ এর ৩৩ নং রোডের ৬/এ বাড়িতে রয়েছে গেস্ট হাউজ,স্পা সেন্টার। এসব স্পার অন্তরালে চলছে দেহ ব্যবসা মাদক বানিজ্য ও সেবন । মাঝে মধ্যে প্রশাসন অভিযান চালালেও ম্যানেজ করে পূনরায় একই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে অসাধু চক্র।মাঝে মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেও অল্প সময়ের মধ্যেই পুনরায় ব্যবসা শুরু হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগঃ
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এসব স্থানে টার্গেট করে নারীদের মাধ্যমে অতিথিদের ফাঁদে ফেলা হয়। সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে জিম্মি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয়। তবে লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই থানায় অভিযোগ করেন না।

সাধারণ মানুষের অভিমত
ঢাকার এলিট এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারা এখন অপরাধের অঘোষিত রাজধানী। মাদক, নারী ব্যবসা, অশ্লীলতা, প্রতারণা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা হাতবদল হচ্ছে। মাঝেমধ্যে অভিযান হলেও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় অপরাধচক্র দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে।