শুক্রবার, অক্টোবর ৩, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ভাঙ্গায় সালিশ বৈঠক চলাকালে সংঘর্ষে নিহত-১ আহত-২০   * ভাঙ্গায় মোটরসাইকেল-নছিমনের সংঘর্ষে নিহত-১   * প্রাণ-আরএফএল’র ভিশন এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৪, ব্যবহারকারীরা আতঙ্কে   * রাজউকে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত   * অপরাধের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানী-বারিধারা   * ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য দেশ সম্পূর্ণ প্রস্তুত: প্রধান উপদেষ্টা   * শেরপুর সদর ভূমি অফিসে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য   * কর্পোরেট গ্রুপে বাড়ছে ভ্যাট অব্যাহতির অপব্যবহার   * নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে এনসিপিসহ ৬ রাজনৈতিক দল   * জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউটে“র কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম তুহিনের এতো সম্পদের উৎস কি?  

   অর্থ-বাণিজ্য
কর্পোরেট গ্রুপে বাড়ছে ভ্যাট অব্যাহতির অপব্যবহার
  Date : 22-09-2025
Share Button

বিশেষ প্রতিবেদক:

দেশে রাজস্ব ঘাটতির অন্যতম বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভ্যাট অব্যাহতির অপব্যবহার। কয়েকটি বড় কর্পোরেট গ্রুপ কৌশলে এই বিশেষ সুযোগের অপব্যবহার করে সরকার, রাজস্ব বিভাগকে বেকায়দায় ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসা সহজীকরণ ও দ্বৈত কর এড়ানোর লক্ষ্যে দেওয়া ভ্যাট রেয়াত সুবিধা এখন গলার কাটা হয়ে দাঁড়িছে বলছে বিশেষজ্ঞরা।

ভ্যাট অব্যাহতির ক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল বা যন্ত্রপাতি কিনতে গিয়ে যে ভ্যাট দিতে হয়, তা পরবর্তীতে বিক্রির ভ্যাট থেকে সমন্বয় করার সুযোগ দেওয়া হয়। শুধু খুচরা পর্যায়েই নয়, বড় কর্পোরেট গ্রুপের মধ্যে ভ্যাট রেয়াত ও ফাঁকির কারণে সরকারের রাজস্ব ঘাটতি বড় আকার হচ্ছে। এনবিআর’র তদন্তে বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অনিয়ম উঠে আসছে। যা বাজেট ও উন্নয়ন কার্যক্রমে অনাকাঙ্খিত চাপ সৃষ্টি করছে।

এই সুযোগকে অনেকে রাজস্ব ফাঁকির হাতিয়ার হিসেবে নানাভাবে হচ্ছে ভ্যাট রেয়াতের অপব্যবহার। ১. ভুয়া চালান তৈরি করে কাঁচামাল কিনেইনি, অথচ চালান দেখিয়ে রেয়াত গ্রহণ। ২. ইনপুট-আউটপুট গরমিল করে আসল উৎপাদন ও বিক্রির হিসাব না মিলিয়ে বেশি রেয়াত নেওয়া। ৩. রপ্তানিমুখী শিল্পে একদিকে শুল্ক ছাড় নেওয়া হয়, আবার ভ্যাট রেয়াত ও দাবি করে দ্বৈত সুবিধা নেয়। ৪. অনেক কর্পোরেট গ্রপ রয়েছে পণ্য বা কাঁচামাল আমদানীর সময় ভ্যাট রেয়াত পাওয়া পণ্যের সাথে অন্য ভ্যাটযুক্ত পণ্যও খালাস করে নেয়। ৫. অতিরিক্ত আমদানির কাগজপত্র দেখানো, কাঁচামাল আমদানি হিসেবে বেশি দেখিয়ে ইনপুট ভ্যাট দাবী করে। ৬. স্টকপাইলিং ও দাম পুনঃক্যালিব্রেশন ৭. বাজেট ঘোষণার আগে পুরনো মূল্যে ভ্যাট হিসাব করে পরে বাড়তি মুনাফা দেখে সেটার কর না দেওয়া হয় ৮. সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কৃত্রিম লেনদেন করে গোষ্ঠীভিত্তিক ভ্যাট ক্রেডিট স্থানান্তর করে ইনপুট ভ্যাট বাড়িয়ে দেখায়।

রেয়াতের অপব্যবহার কর্পোরেট গ্রুপগুলোয় অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার সাথে অসাধু কর্মকর্তাদের নিজেদের অনৈতিক সুবিধা নেওযার কারণে সরকারের বিরাট রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশে কয়েকটি কর্পোরেট গ্রুপ যেমন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রাণ-আরএফএল ও ওয়ালটন গ্রুপকে সবচেয়ে বেশি ভ্যাট রেয়াত পাওয়া প্রতিষ্ঠান বলা হচ্ছে। এদের বিশাল আমদানি, উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রমের কারণে ভ্যাট রেয়াত ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়ার সুযোগও তাদের সবচেয়ে বেশি।

যেসব ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠান বা এমন প্রতিষ্ঠান ভ্যাট রেয়াত নিয়েছে, সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রেয়াত নিয়েছে কেউকেউ। অন্যদিকে মনোপলি করে কেউ যেনো এধরনের শিল্প করতে না পারে বা সমকক্ষ কেউ না আসতে পারে এজন্য রেয়াত পাওয়া পণ্যে অন্যদের জন্য বেশি শূল্ক নির্ধারণ করে রেখেছে। কাজেই সব কিছু পূন: পর্যবেক্ষণ করে সময়ের প্রয়োজনের সাথে সমন্বয় করে রেয়াত নির্ধারণ করা উচিত।

অভিযোগ রয়েছে, অপ্রয়োজনীয় বা সামঞ্জস্যহীন পণ্যকে রেয়াত পণ্যে গণ্য করে বাজারজাত করা হচ্ছে। যেমন, কর্পোরেট গ্রপের কেউ প্লাস্টিকের টেবিল চেয়ার আসবাব বা অন্য সামগ্রী যা মানানসই নয় সেসব যদি এগ্রো প্রডাক্ট ধরে ভ্যাট রেয়াত নিয়ে থাকে যা মূলত ব্যবহার হয় অফিস আদালত এবং বাণিজ্যিক কর্মকান্ডে। আবার প্লাস্টিক বা একই ধরনের যেসব মেটালিক সামগ্রী এগ্রো পণ্যের বা ভ্যাট এক্সামপসন পণ্যের আওতাভুক্ত সেগুলো সরাসরি আমদানী করেও ভ্যাট রেয়াত নেয় এবং নিজস্ব শোরুমে নিজেদের পণ্য হিসেবে বিক্রয় করে। এগুলো পর্যবেক্ষণ করে ভ্যাট ফাঁকি ধরার দায়িত্ব ভ্যাট গোয়েন্দা বিভাগের।

উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে শিল্পায়ন করতে হবে। কিন্তু ছোটো ছোটো শিল্প কারখানার কাজ করছে বড় শিল্পসমৃদ্ধ কর্পোরেট গ্রুপ। এতে যেমন ভ্যাট ফাঁকি, কারচুপি কৌশল বাড়ছে তেমনি আদায়ে ভারসম্য হীনতা তৈরি হয়েছে। শুধু তাই নয়, আদায়ে স্বচ্ছতা না থাকা ও ফাঁকি বেড়ে যাওয়ায় ক্রমে বড় আকারে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। ফলে ভ্যাটের হার বাড়ানো হচ্ছে। এতে সঠিকভাবে ভ্যাট দেওয়াদের উপর আরো চাপ পড়ে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সঠিকভাবে ভ্যাট দেওয়ার সুযোগে তৈরি না হওয়ায় ন্যায্যভাবে ভ্যাট দেওয়াদেরও নিজেদের বাঁচাতে ফাঁকির পথ বেছে নিতে হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বড় গ্রুপগুলো অনেক সময় ইনভয়েসে হেরফের করে বা উৎপাদন-বিক্রির হিসাবের গরমিল দেখিয়ে অতিরিক্ত রেয়াত নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এতে কর ফাঁকি ধরা কঠিন হয়ে পড়ে, কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেন জটিল ও ব্যাপক। ভ্যাট রেয়াত ব্যবস্থার অপব্যবহার না ঠেকাতে পারলে রাজস্ব ঘাটতি আরও বাড়বে। বর্তমানে লক্ষ্য পূরণে ঘাটতি কয়েক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যার একটি বড় অংশ এ ধরনের ফাঁকি থেকে আসছে বলেঅিভিজ্ঞমহল মনে করছে।

ভ্যাট রেয়াত একটি ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা, কিন্তু এর স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে “রেয়াত” পরিণত হয় “ফাঁকিতে। ফাঁকি দেওয়া কর্পোরেট গ্রপে সরকার যদি স্বচ্ছ অডিট ও কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে ভ্যাট রেয়াতের নামে রাজস্ব দুর্বৃত্তায়ন চলতেই থাকবে, আর বাড়তেই থাকবে জাতীয় রাজস্ব ঘাটতি।

 



  
  সর্বশেষ
প্রাণ-আরএফএল’র ভিশন এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ ৪, ব্যবহারকারীরা আতঙ্কে
অপরাধের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানী-বারিধারা
শেরপুর সদর ভূমি অফিসে দালাল সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য
কর্পোরেট গ্রুপে বাড়ছে ভ্যাট অব্যাহতির অপব্যবহার

প্রধান সম্পাদক: মতিউর রহমান , সম্পাদক: জাকির হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক এসএম আবুল হাসান। সম্পাদক কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড, ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২০১৯ ফকিরাপুল , ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: জামান টাওয়ার (৪র্থ তলা) ৩৭/২ পুরাণা পল্টন, ঢাকা ১০০০
ফোন: ০১৫৫৮০১১২৭৫, ০১৭১১১৪৫৮৯৮, ০১৭২৭২০৮১৩৮। ই-মেইল: bortomandin@gmail.com, ওয়েবসাইট: bortomandin.com