খুলনা ডেস্ক:
খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১১ সালে, একনেকের অনুমোদনের মধ্য দিয়ে। শুরুতে ২০১৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারিত হলেও বাস্তবে কাজের গতি ছিল খুবই ধীর। বারবার সময় বাড়ানো এবং বাজেট সংশোধনের ফলে দীর্ঘ ১৪ বছর পর এসে প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে। সময় বাড়ানো হয়েছে আটবার, আর ব্যয় বেড়েছে ১৪৪ কোটি টাকা—যার ফলে প্রকল্পের মোট ব্যয় এখন দাঁড়িয়েছে ২৮৮ কোটি টাকায়।
নতুন এই কারাগার এখন প্রায় সম্পূর্ণ। চলতি জুন মাসেই এটি হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। মূল হস্তান্তরের তারিখ ছিল ২৫ মে, কিন্তু কিছু অসম্পূর্ণ কাজ থাকায় তখন তা সম্ভব হয়নি। এখন আশা করা হচ্ছে, জুন মাসের মধ্যেই নতুন ভবনটি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। জনবল নিয়োগ সম্পন্ন হলে, নতুন কারাগারে বন্দি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
পুরোনো কারাগারটি নির্মিত হয়েছিল ১৯১২ সালে, ভৈরব নদীর তীরে। ধারণক্ষমতা মাত্র ৬৭৮ জন হলেও বর্তমানে সেখানে ১ হাজার ৪০০’র বেশি বন্দি থাকছেন। জরাজীর্ণ এ ভবনে বন্দিদের বসবাস ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই নতুন কারাগার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নতুন কারাগারটি নির্মিত হয়েছে রূপসা সেতু বাইপাস সড়কের জয় বাংলা মোড়ের কাছে, প্রায় ৩০ একর জায়গার ওপর। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী এটি ৪ হাজার বন্দির জন্য তৈরি হলেও প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার বন্দির জন্য অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ভবিষ্যতে নতুন অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ রয়েছে।
কারাগারটির নির্মাণধর্মী ধারণা সম্পূর্ণ ভিন্ন—এটি একটি সংশোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ব্যারাক, কিশোর-কিশোরীদের জন্য আলাদা আবাসন, নারীদের জন্য হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড। পাশাপাশি রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, স্কুল, ডাইনিং, বিশাল লাইব্রেরি, আধুনিক স্যালুন ও লন্ড্রি সুবিধা। নারী বন্দিদের মধ্যে যারা শিশু সন্তানসহ রয়েছেন, তাদের জন্য রয়েছে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার।
পুরো কারাগার এলাকা সাজানো হয়েছে একটি অভিজাত আবাসিক এলাকার আদলে। টাইলস বসানো ফুটপাত, সবুজ গাছগাছালি, ফুলের বাগান—সব মিলিয়ে ভেতরের পরিবেশ কারাগারের চেয়ে অনেক বেশি শান্তিপূর্ণ ও গঠনমূলক। প্রতিটি ব্যারাকের চারপাশে রয়েছে আলাদা সীমানাপ্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দিরা অন্যদের সঙ্গে মিশতে না পারেন। পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমানাপ্রাচীর ছাড়াও ভেতরে রয়েছে ওয়াকওয়ে, ড্রেনেজ, সৌরবিদ্যুৎ, পয়োবর্জ্য শোধনাগার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সব নির্মাণ কার্যক্রম প্রায় শেষ। কেবল কিছু টুকিটাকি কাজ, যেমন রঙের প্রলেপ, হস্তান্তরের আগে সম্পন্ন করা হবে। কারা কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ৬০০ জন নতুন জনবলের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে, যা বর্তমানের ২০০ জনবল দিয়ে সম্ভব নয়। স্থাপনা বুঝে পেলেই নতুন কারাগার চালুর প্রক্রিয়া শুরু হবে।
দীর্ঘ অপেক্ষার পর খুলনার নতুন কারাগার চালুর দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এটি শুধু বন্দিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ই নয়, বরং একটি আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে সমাজে নতুন বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।