খুলনা ডেস্ক:
খুলনা শহরে ভূগর্ভস্থ পানির সংকট ক্রমেই তীব্র আকার নিচ্ছে। মার্চ মাস থেকে শহরের অনেক এলাকায় হস্তচালিত নলকূপে পানি ওঠা বন্ধ হয়ে গেছে, এমনকি গভীর উৎপাদক নলকূপেও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। গত ১০ বছরে খুলনায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১.৯৮ মিটার থেকে নেমে গেছে ৪.০৪ মিটার পর্যন্ত। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে খুলনা ওয়াসা নতুন করে ৭৫টি গভীর উৎপাদক নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে। নতুন এই পাম্পগুলো দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার এবং অন্যান্য সময়ে দিনে ৫০ লাখ থেকে আড়াই কোটি লিটার পানি উত্তোলনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য ইতোমধ্যে গত ২৭ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।
তবে পানিসংকট সমাধানে এই উদ্যোগকে অনেক গবেষক দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হিসেবেই দেখছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী সতর্ক করে বলেন, ভূগর্ভের মিষ্টি পানির স্তর দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং এটি পুনরায় রিচার্জ হতে ৩৫ থেকে ৪০ বছর সময় লাগে। অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে ভবিষ্যতে সেই শূন্যস্থান দখল করতে পারে লবণাক্ত পানি, যা দক্ষিণাঞ্চলের পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করবে।
বর্তমানে খুলনার প্রতিদিনের পানি চাহিদা ২৪ কোটি লিটার, যেখানে ওয়াসা সরবরাহ করতে পারছে মাত্র সাড়ে ৮ কোটি লিটার। এর মধ্যে মধুমতী নদী থেকে পরিশোধিত পানি আসে প্রায় ৬ কোটি লিটার এবং বাকি পানি তোলা হয় ৩৮টি গভীর নলকূপ থেকে। নগরবাসীর বাকি প্রয়োজন মেটানো হয় ব্যক্তিগত পাম্পের মাধ্যমে।
ওয়াসার তথ্যমতে, খুলনায় প্রতিদিন ভূগর্ভ থেকে ১৩ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি উত্তোলনযোগ্য। এই পরিমাণের মধ্যে ৭৫ শতাংশ উত্তোলনের অনুমোদন রয়েছে ওয়াসার, অর্থাৎ প্রতিদিন ১০ কোটি লিটার পানি তোলার সুযোগ রয়েছে। তবে নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় এপ্রিল-মে মাসে নদীর পানি কম সরবরাহ করা সম্ভব হয়, ফলে তখন ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলনের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে।
নগরীতে বর্তমানে ৭৬ হাজারের বেশি ভবনের মধ্যে ওয়াসার সংযোগ রয়েছে প্রায় ৪৩ হাজারটিতে। বাকি এলাকায় সংযোগ সম্প্রসারণ ও পানির সংকট মোকাবিলায় পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ এর আওতায় কাজ করছে ওয়াসা। প্রকল্পের ফোকাল পারসন মো. কামাল হোসেন আশ্বাস দিয়েছেন, এই উদ্যোগ ভূগর্ভস্থ পানির ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে না এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী পরিচালিত হলে তা নিরাপদ থাকবে।
তবে পরিবেশবিদদের মতে, পরিকল্পনার পাশাপাশি পানির ব্যবহার ও সংরক্ষণেও সচেতনতা জরুরি। ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত না হলে খুলনাবাসীকে ভবিষ্যতে ভয়াবহ পানি সংকটের মুখোমুখি হতে হতে পারে।