|
গরমে নাজেহাল রাজধানীবাসী, কষ্টে শ্রমজীবী মানুষ |
|
|
|
|
|
দেশজুড়ে তীব্র গরমে নাজেহাল অবস্থা, অনেকেই যখন প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না, তখন পেটের দায়ে ঠিকই কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের। গত ২২ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল নার্সিং কলেজের পিছনে রিকশা চালাচ্ছিলেন ৪৫ বছর বয়সেত আব্দুল আউয়াল। প্রচন্ড গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। দেশে চলমান অতি তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ‘হিট স্ট্রোকে’ এ পর্যন্ত ১০ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে সোমবারই (২৯ এপ্রিল) তিনজন হিট স্ট্রোকে মারা গেছেন। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এসব তথ্য জানায়। বেশ কয়েক দিন ধরে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা গড়ে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রির মধ্যে বিরাজ করছে। এর মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি হয়। এতে নাকাল রাজধানীসহ সারা দেশের সব বয়সী মানুষ। তীব্র তাপদাহে রাজধানীর খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়ছেন চরম বিপাকে। অসহ্য গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। শপিং মল, মার্কেট কিংবা বাজারেও ক্রেতা সাধারণের উপস্থিতি কম। অনেকেই পূর্ণ সময়ের বদলে ঘণ্টা চুক্তিতে কাজ করছেন। টানা দাবদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রচণ্ড গরমের সাধারণ ও কর্মজীবী মানুষের ভোগান্তি আর কষ্ট বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। তীব্র রোদের কারণে দিনমজুর, রিকশাচালক ও ভ্যানচালকরা কাজ করতে পারছেন না। এদিকে কাজ না করলে খাবার জুটবে না। তাই পেটের তাড়নায় প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে কাজে বেরিয়েছেন অনেকে। গরম উপেক্ষা করে বের হলেও অনেকেই হাঁসফাঁস করছেন। মঙ্গলবার(৩০ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তীব্র গরমে নাজেহাল বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মিলেছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী ও কর্মজীবীদের জীবন যেন বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তারপরও জীবন-জীবিকার তাগিদে ঘাম ঝরিয়ে ছুটতে হচ্ছে তাদের। কেউবা কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ছায়ার নিচে। গরমের কারণে দীর্ঘসময় কাজ করতে না পারায় কমে গেছে তাদের আয়ের পরিমাণও। গরমে কষ্ট কয়েকগুণ বাড়লেও আয় বাড়েনি। তপ্ত রোদ মাথায় নিয়ে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় রিকশা চালাচ্ছেন করিম মোল্লা। একটু আগেই একজন নামিয়ে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। পাশেই আরেক রিকশা চালক বিল্লাল হোসেন। তারা জানান, রোদের মধ্যে অন্য সবার মতো আমাদের ও কষ্ট হয়। কিন্তু পেটের দায়ে সংসার চালাতে ঘরে থাকার উপায় নেই। রিকশা চালক বিল্লাল বলেন, আমাগো রোদ, বৃষ্টি ঝড় নাই। ঘরেরতন বাইর হইলে প্যাডেল ঘুরলে খাওন জোটে, নাইলে কেউ খবর ও লয়না। তয় ভয় লাগে স্ট্রোক করলে আমার পরিবারটারে দেহার কেউ নেই। কারওয়ান বাজারে অপেক্ষা করছিলেন কয়েকজন দিনমজুর। তাদের সঙ্গে টুকরি-কোদাল। তারা জানান, অনেক জায়গায় শত শত দিনমজুর কাজের সন্ধানে ভোর থেকেই অপেক্ষা করেন। কিন্তু গত ৭-৮ দিন ধরে অনেকেই আসছেন না। আবাসন ও নির্মাণ সংস্থার কর্মকর্তা সাইফুল হোসেন জানান, ৮-১০ দিন আগেও রাস্তার পাশে দিনমজুর পাওয়া যেত। এখন তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে গ্রামের বাড়ি চলে গেছে। আগে প্রতিদিন ভোরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শত শত শ্রমিক অপেক্ষা করত, কখন ঠিকাদারের লোক আসবে। এখন আসছে হাতেগোনা কয়েকজন। শ্রমিক সংকটে নির্মাণের অনেক কাজ আটকে গেছে।রাজধানীতে কয়েকজন বাসচালক ও হেলপারের সঙ্গে কথা হয়। মিডলাইন পরিবহনের চালক নুরুল বলেন, গরমে বাসের মধ্যে থাকা খুব কষ্টের, রোদে আর গাড়ির গরমে গায়এর ঘাম শুকায় না।ঠিকানা পরিবহনের আরেক চালক জানান, বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী সংখ্যা হাতে গোনা। সকালের দিকে যাত্রীর বেশি থাকে। সন্ধ্যার পরও যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু দিনের বেলা যাত্রীদের দেখা মিলছে না। খুব প্রয়োজন ছাড়া এই গরমে মানুষ বাসার বাইরে বের হচ্ছেন না। তীব্র গরমের এমন অবস্থায় কীভাবে সুস্থ থাকা যায় জানতে চাইলে ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, এই গরমে আমাদের বেশ সাবধানতায় চলাফেরা করতে হবে। বিশেষ করে বাসার বয়স্ক মানুষ, শিশু এবং কোনো রোগী থাকলে তাদের দিকে আলাদা যত্ন নিতে হবে। এই সময়ে অবশ্যই প্রচুর পানি খেতে হবে।যাদের হৃদরোগসহ জটিল রোগ আছে তারা একেবারেই প্রয়োজন না হলে বাইরে বের হওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, এই সময়ে বেশি রোদে কাজ করা যাবে না। গরমে শরীর থেকে ঘামের সঙ্গে বেশি লবণ বেরিয়ে যায়, তাই লেবুর শরবত এবং হালকা লবণ দিয়ে পানি কিংবা স্যালাইন অল্প পরিমাণে খাওয়া যাবে। গরমে কারও শরীর বেশি খারাপ লাগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। পরিবেশবিদরা বলছেন, গরমের এই অস্বস্তিকর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুদূষণও দায়ী। শুকনো আবহাওয়ায় এমনিতেই বাতাসে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। বাড়তে থাকে বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ। গরমের সঙ্গে দূষিত কণাও মানুষের অস্বস্তির কারণ।
|
|
|
|
|
|
|
|
প্রধান সম্পাদক: এনায়েত ফেরদৌস
, অনলাইন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত ) কামরুজ্জামান মিল্টন
|
নির্বাহী সম্পাদক: এস এম আবুল হাসান
সম্পাদক জাকির হোসেন কর্তৃক ২ আরকে
মিশন রোড ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত ও বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত।
সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২/২, ইডেন কমপ্লেক্স (৪র্থ তলা) সার্কুলার রোড, ঢাকা ১০০০।
ফোন: ০১৭২৭২০৮১৩৮,
০১৪০২০৩৮১৮৭
,
০১৫৫৮০১১২৭৫, ই-মেইল:bortomandin@gmail.com
|
|
|
|