বিশেষ প্রতিবেদক:
বিশাল অঙ্কের ভ্যাট ফাঁকির সুযোগ থাকায় বৃহৎ কর্পোরেট শিল্প গ্রুপগুলো ক্রমে বড়বড় বৈদ্যুতিক ক্যাবলস কারখানা করতে শুরু করছে। যদিও কেবলস সেক্টরের মার্কেট খুব একটা বড় নয়। ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে রফতানির নামে সরকারি প্রণোদনা গ্রাস, মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে কাঁচামাল অন্য কাজে ব্যবহার করা, সরকারের বৈদ্যুতিক সেক্টরে লুটপাট এবং সর্বোপরি ব্যাংক থেকে ঋণের নামে বড় অঙ্কের টাকা খেলাপি করা প্রভৃতি মিশন আর উদ্দেশ্য নিয়েই যেনো করা হচ্ছে এসব কারখানা। না হলে এত ছোটো চাহিদার মার্কেটে কর্পোরেট শিল্প গ্রুপ অস্বাভাবিক এই বিনিয়োগে আসছে কেনো? বাজার চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হবার পরও এধরনে নতুন বিনিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখলেই এদের গোপন উদ্দেশ্যের বিষয় স্পষ্ট হবে।
এভাবে অনিয়ন্ত্রিত ক্যাবলস খাতে সৃষ্টি হয়েছে অসুস্থ প্রতিযোগীতা। এতে সঠিক মান বজায় রেখে সৎভাবে ব্যবসা করা যেমন অসম্ভব হয়ে পড়ছে তেমনি অসুস্থ প্রতিযোগীতায় পড়ে অনেক ক্যাবলস প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে বন্ধ হয়েছে। অনেক কারখানা বন্ধ হবার পথে রয়েছে। ক্যাবলস শিল্পে এমন অস্বাভাবিক অবস্থা ও অনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগ রোধে সরকারকে দ্রুত সময়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন করা জরুরি। অতীতে বিভিন্ন শিল্প খাতে এমন বিনিয়োগ ব্যাংকসহ বিনিয়োগকারীদের লোকসানে পড়ে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।
অভিজ্ঞ মহল বলছেন, ক্যাবলস সেক্টরে বেশিরভাগ কর্পোরেট গ্রুপের সম্পৃক্ত হবার মূল উদ্দেশ্য দুই ধরনের। প্রথমত কালো টাকা সাদা করতে এবং রাজস্ব ফাঁকি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিশাল অর্থ লুটপাট করা। দ্বিতীয়ত কোনো স্বনামধন্য ক্যাবলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান খেকে বরখাস্ত হওয়া বা চাকরি ছাড়া ব্যাক্তি বিভিন্ন কর্পোরেট কোম্পানিকে ক্যাবলস সেক্টর সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে। এরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কর্পোরেট কোম্পানির সংশ্লিষ্ঠ বিভাগের প্রধান হবার জন্য, মেশিনারিজ ক্রয়ের সময় কমিশন খাওয়াসহ ব্যাক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে বিনিয়োগ করিয়ে থাকে।
বিজ্ঞ মহল বলছেন, এই সেক্টরে নতুন বিনিয়োগ মানেই বিপদজনক সিদ্ধান্ত ও লোকসানে পড়া। প্রশ্ন জাগতে পারে এই সেক্টরে তাহলে কি হচ্ছে? তথ্যমতে, দেশে প্রায় ২৫টি ক্যাবলস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স আছে বলে জানাগেছে। এরমধ্যে কর্পোরেট গ্রুপই রয়েছে ডর্জন খানেক। এরপরও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কর্পোরেট গ্রুপ, প্রাইভেট কোম্পানি এই খাতে বিশাল বিনিয়োগ নিয়ে যুক্ত হচ্ছে। আছে দেশি-বিদেশী জয়েনভেঞ্চার, পাবলিক লিমিটেড, প্রাইভেট লিমিটেড, রাষ্ট্রায়ত্ব, ব্যাক্তি মালিকানা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান। শুধু ক্যাবলস তৈরি ও স্পেশালিষ্ট একাধিক কোম্পানিও রয়েছে এই খাতে। এর সাথে যুক্ত রয়েছে অন্যান্য সাব সেক্টর যেমন, ট্রান্সমিটার, ফ্যান, মটর প্রভৃতি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির প্রতিষ্ঠানও। অন্যদিকে শতাধিক কারখানা রয়েছে লাইসেন্স বিহীন। যাদের কাজ ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে অত্যান্ত নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে নামিদামি ব্রান্ডের ক্যাবলস নকল করা। জয়েনভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান সহ কেউকেউ রফতানির নামে মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুল্কমুক্ত কাচামাল আমদানি, ভ্যাট বিহীন পণ্য উৎপাদন করে কৌশলে বাজার অসুস্থ ও অশান্ত করছে।
ক্যাবলস এর কাঁচামাল হলো কপার ক্যাথড, কপার রড, এলুমনিয়াম ক্যাথড, এলুমনিয়াম রড ও প্লাস্টিক দানা। সঠিক শুল্ক প্রদান করে এ গ্রেড কাঁচামাল দিয়ে সঠিক প্রযুক্তিতে ক্যাবলস, কন্ডাক্টর বানানো হলে এবং সঠিক হারে ভ্যাট যুক্ত করা ক্যাবলসের একটি স্টান্ডার্ড দাম পড়ার কথা। কিন্তু বাজার বিশ্লেষণ করলেও দেখা যায় ক্যাবলস কন্ডাক্টরের যে দাম তা এগ্রেড কাঁচামালের চেয়েও কম। অন্যদিকে বিনিয়োগ বাড়লেও সে হারে এই খাতে বড়বড় কর্পোরেট গ্রুপ কোম্পানি বাড়লেও সেই হারে বাড়ছে না রাজস্ব।
অভিজ্ঞদের মতে, এই সেক্টরে হরিলুটের কালো টাকা বিনিয়োগ, কাঁচামালআমদানিতে শুল্ক ফাঁকি, বিক্রয়কালে ভ্যাট ফাঁকি, পরিমাপ ও কোয়ালিতে ফাঁকি, লোকাল স্ক্রাব ব্যবহার এবং সর্বোপরি ক্যাবলস নকল হয়ে বিক্রি হবার মাধ্যমে চলছে ক্যাবলস সেক্টরের কর্মকান্ড। যা জানমালকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে, অর্থনীতিকেও লোকসানী করছে।