খুলনা ডেস্ক:
বর্তমানে দেশের বাজারে ইলিশের দাম আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে, যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কম সরবরাহ, চাঁদাবাজি এবং জ্বালানি তেলের উচ্চমূল্য। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন, এখন ঢাকায় ১ কেজির নিচে ওজনের ইলিশের দাম দুই হাজার টাকারও বেশি। এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ইলিশের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশের ভরা মৌসুম শুরু হলেও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। ১২ জুন থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রায় ৪৬ হাজার ৭৯০ টন ইলিশ আহরিত হয়েছে। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ৫ লাখ ৩৮ হাজার থেকে ৫ লাখ ৪৫ হাজার টনের মধ্যে হতে পারে। তবে পূর্ববর্তী অর্থবছরের মতো যদি উৎপাদন হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে প্রকৃত উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের নানা প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এখনো নির্বিচারে জাটকা নিধন পুরোপুরি থামানো যায়নি। নদীর নাব্যতা হ্রাস, পানিদূষণ, সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া, এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার মতো প্রাকৃতিক কারণগুলিও ইলিশের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাম্প্রতিক অতিরিক্ত বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে জেলেরা স্বাভাবিকভাবে মাছ ধরতে পারেননি, ফলে বাজারে ইলিশের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড এবং নৌ পুলিশকে ব্যবহার করে জাটকা সংরক্ষণে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যদিও সফলতা কিছুটা মিলেছে, তবে সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশের বাজারে সরবরাহ বাড়ানো গেলে দাম স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বরিশাল ও চট্টগ্রামের বাজারে ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। এর পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের চাহিদা পূরণে সরকার পরীক্ষামূলকভাবে এক বা দুটি দেশে ইলিশ রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সৌদি আরবে ১১ হাজার টন ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যা অক্টোবরের মধ্যে পাঠানো হবে।
ইলিশের উৎপাদন ও বাজারব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে সরকার একযোগে কাজ করছে এবং সাধারণ মানুষের নাগালে ইলিশ ফিরিয়ে আনতে নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।