দেশের চিকিৎসাসেবার মান নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের এক প্রতিবেদনে ভয়াবহ নার্স সংকটের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের জনসংখ্যার তুলনায় প্রয়োজনীয় সংখ্যার তুলনায় নার্সের সংখ্যা প্রায় ৮২ শতাংশ কম। এই ঘাটতি স্বাস্থ্যসেবার মান নিম্নমুখী হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন চলতি বছরের ৫ মে প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ১৮ কোটি মানুষের দেশে ৩ লাখ ১০ হাজার ৫০০ জন নার্স প্রয়োজন, অথচ বর্তমানে কর্মরত নার্সের সংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার ৭৩৪ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বলছে, স্বাস্থ্যসেবায় মান বজায় রাখতে চিকিৎসক ও নার্সের অনুপাত হওয়া উচিত ১:৩। কিন্তু বাংলাদেশে চিকিৎসকের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও নার্স সংকট সবচেয়ে প্রকট। বর্তমানে দেশে চিকিৎসক রয়েছেন ৮৬ হাজার ৬৭৫ জন, যা প্রয়োজনের চেয়ে ১৬.৫ শতাংশ কম। অপরদিকে সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মীর ঘাটতি ৫৫ শতাংশ।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র স্টাফ নার্স মল্লিকা বানু জানান, “আমার হয়তো ছয়জন রোগীকে সেবা দেওয়ার কথা, কিন্তু দিতে হয় ৫০ জনকে। স্বাভাবিকভাবেই সব রোগীকে প্রয়োজনীয় সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে রোগী সন্তুষ্ট হয় না, আমরাও বার্ন আউট হয়ে যাই।”
নার্সরা বলছেন, এই অতিরিক্ত চাপ স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। হাসপাতালগুলোতে নার্সদের নিজ নিজ কাজ ছাড়াও অন্যদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় জনবল স্বল্পতার কারণে।
নিউইয়র্কভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘সেজ’-এর ২০২১ সালের একটি প্রবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সমাজে নার্সিংকে এখনও মর্যাদাসম্পন্ন পেশা হিসেবে দেখা হয় না। নার্সদের সঙ্গে প্রায়ই অসম্মানজনক আচরণ করা হয়, এবং এই পেশায় আসা মেয়েদের সমাজে অনেক সময় নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।
এছাড়া, নার্সদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের পরও কর্মক্ষেত্রে তারা কোনো বাড়তি সুযোগ বা স্বীকৃতি পান না। পদোন্নতির সুযোগ সীমিত এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও নার্সদের সম্পৃক্ত করা হয় না।
আজ ১২ মে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য, "নার্সদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করলেই শক্তিশালী হবে স্বাস্থ্যখাত ও অর্থনীতি"। এই উপলক্ষে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নার্সদের সম্মান, সুযোগ ও সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া দেশের স্বাস্থ্যসেবার কাঙ্ক্ষিত মান অর্জন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ ডিপ্লোমা নার্সেস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ইসমত আরা পারভীন বলেন, “নার্সদের সংখ্যা বাড়ানো, তাঁদের বেতন বৃদ্ধি ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। ক্লান্ত ও অবমূল্যায়িত নার্সদের দিয়ে মানসম্পন্ন সেবা আশা করা অনুচিত।”