খুলনা ডেস্ক:
খুলনা নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একমাত্র উন্মুক্ত বিনোদনকেন্দ্র ‘জাতিসংঘ শিশু পার্ক’ নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও উদ্বেগ। ঈদুল আজহার আগমনে পার্কটিতে মেলা বসানোর জন্য এখন পর্যন্ত সাতটি আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধি ও একটি বেসরকারি কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ‘বিনা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ ৭ বছরের জন্য পার্কটি ইজারা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এছাড়াও ‘সালমানস ইউকে’, বিএনপি ও যুবদল নেতাসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি স্বল্পমেয়াদি ঈদ মেলার আয়োজনের আবেদন করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও নাগরিক নেতারা বিষয়টিকে দেখছেন গভীর উদ্বেগের সঙ্গে। তাদের মতে, খুলনা শহরে শিশুদের জন্য বিনোদনের একমাত্র ভরসা এই পার্ক। পার্কটির চারপাশে হাসপাতাল ও মসজিদ থাকার কারণে এখানে নিয়মিত ভিড় করেন নানা বয়সী মানুষ। কিন্তু বছরের বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক মেলার নামে পার্কটি শিশুদের জন্য অপ্রয়োজনে বন্ধ হয়ে যায়। এতে একদিকে শিশুরা যেমন খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয়, অন্যদিকে শব্দদূষণ এবং জনসমাগমে রোগী ও ধর্মপ্রাণ মানুষদের দুর্ভোগ বাড়ে।
খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানায়, নগরীতে তাদের অধীনে থাকা ৬টি পার্কের মধ্যে গোলকমনি, নিরালা, সোনাডাঙ্গা ও হাদিস পার্কে নেই কোনো মানসম্মত বিনোদনের ব্যবস্থা। খালিশপুর শিশু পার্কটি ইজারা দেওয়া হওয়ায় সেখানে সাধারণ শিশুর প্রবেশ অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হয়। তাই জাতিসংঘ শিশু পার্ককেই সবাই একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেখে থাকেন।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, পার্কটিকে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা হোক। শিশুদের জন্য নিরাপদ, পরিচ্ছন্ন ও খেলার উপযোগী পরিবেশ নিশ্চিত করতে দোলনা, স্লিপ, রাইডসহ অন্যান্য বিনোদন উপকরণ সংস্কার ও সংযোজন প্রয়োজন। পার্কটি সারাবছর সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা এবং শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবিও উঠেছে।
কেসিসির এস্টেট অফিসার গাজী সালাউদ্দিন জানান, পার্কটি ইজারা নেওয়ার জন্য পাঁচটি লিখিত এবং দুইটি মৌখিক আবেদন পাওয়া গেছে। প্রত্যেকে নিজের পক্ষে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন, যার ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে কর্তৃপক্ষ চাপে রয়েছে।
এদিকে, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান জানিয়েছেন, নগরীর একমাত্র শিশুপার্ককে রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখতে তারা কেসিসির প্রশাসকের কাছে শিগগিরই আনুষ্ঠানিক দাবি পেশ করবেন।
শিশুদের জন্য নিরাপদ ও আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করতে হলে জাতিসংঘ শিশু পার্কে সব ধরনের বাণিজ্যিক আয়োজন স্থায়ীভাবে বন্ধ করা জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।