মঙ্গলবার, অক্টোবর ২২, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * ভেজাল ক্যাবলসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, বিশাল রাজস্ব ফাঁকি   * আমেরিকাসহ তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ বাতিল   * জামাই-বউয়ের পুকুর ডাকাতিতে ন্যুজ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট   * জুলাই-আগস্ট গণহত্যার তথ্য চেয়ে গণবিজ্ঞপ্তি   * মুখ খুললেন খামেনি   * খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কোটিপতি ড্রাইভার সাইফুলের ‘মোল্লা বনাজী’র ভয়ংকর ফাঁদ   * রসায়নে নোবেল পেলেন গুগলের দুই বিজ্ঞানীসহ ৩ জন   * ১৪ বছরে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ৫০ হাজার কোটি টাকা   * আ. লীগ শাসনামলে চরফ্যাশন-মনপুরার ত্রাসের সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন জ্যাকব   * সম্পদের নেশায় মজে থাকা পুলিশের ডিআইজি জামিল  

   সম্পাদকীয়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেল: নৈসর্গিক চট্টগ্রামের সমৃদ্ধি
  Date : 25-10-2023
Share Button

বীর মুক্তিযোদ্ধা এম. রেজাউল করিম চৌধুরী:
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বৈচিত্রতায় ভরা চট্টগ্রাম বাংলাদেশের একটি অনন্য সাধারণ জেলা। এ জেলার পাহাড়, সমুদ্র, সমতল ও স্বচ্ছ নদ নদীর সমম্বিত সৌন্দর্য যে কাউকে সহজে মুগ্ধ করে। কেবল সৌন্দর্যে নয়, প্রাচুর্য্যওে চট্টগ্রামকে ভরপুর করে দিয়েছে প্রকৃতি। এ জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলি তার, ¯িœগ্ধতা, চঞ্চলতা ও মাধুর্যের কারনেতো বটেই, বরং তারও চেয়ে অধিক গুরুত্ব বহন করে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে। কর্ণফুলি ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর  দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। দেশের আমদানি রপ্তানীর সিংহভাগই পরিচালিত হয় এ বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে কুলু কুলু ধ্বণি তুলে বয়ে চলা সদা চঞ্চল কর্ণফুলি চট্টগ্রামকে দুই অংশে বিভক্ত করেছে। এর একদিকে রয়েছে বন্দরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম মহানগর ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আর অন্যদিকে চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা। চট্টগ্রামের দক্ষিন অংশের সাথে মহানগর, উত্তর ও দেশের অন্যান্য জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগের যে মাধ্যম ছিল তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। কর্ণফুলির তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলটি সেই অপর্যাপ্তটা অনেকটাই ঘোচাতে পারবে। একসময় কালুরঘাট রেল সেতুকেই দক্ষিন চট্টগ্রামের সাথে অন্য অংশের একমাত্র সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে হত। এরপর চাক্তাই-শিকলবাহা অংশে স্টীলের স্পেনের উপর বসানো কাঠের সেতু দিয়ে হাল্কা ও মাঝারি যানবাহন দুপারে পারাপার করত। ২০১০সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ঐ অংশে কাঠের সেতুর পরিবর্তে কংক্রিটের তৈরী শাহ আমানত-কর্ণফুলি ৩য় সেতু উদ্বোধন করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগের নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। হালকা, মাঝারী ও ভারী যে কোন ধরণের যানবাহন এখন এই সেতু দিয়ে সহজে পারাপার হতে পারে বলে, বিগত দশকে পশ্চিম পটিয়া ও কর্ণফুলি এলাকায় দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়নের মাধ্যমে রূপান্তরের সোনালী গল্প রচিত হয়েছে। ওয়ান সিটি টু টাউনের পথে হাটছে ঐশ^র্যের চট্টগ্রাম, যে স্বপ্ন নিয়ে চট্টলার অবিসংবাদিত নেতা, সাবেক মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী  লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী কর্ণফুলির দক্ষিণ পাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকাকে সিটি কর্পোরেশনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। নানা জটিলতায় এটি থমকে গেলে, চট্টগ্রামের আরেক অবিসংবাদিত নেতা চট্টগ্রাম দক্ষিন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু এমপি পটিয়া উপজেলার অধীনে থাকা কর্ণফুলি তীরবর্তী ইউনিয়নকে নিয়ে পৃথক উপজেলা গঠন করে দ্রুত উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। দুরদর্শী এ জননেতার মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য সন্তান আলহাজ¦ সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ঐ এলাকার সাংসদ নির্বাচিত হন এবং পর্যায়ক্রমে ভূমি প্রতিমন্ত্রী ও ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টির কারণে কর্ণফুলি তীরবর্তী ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে কর্ণফুলি উপজেলা গঠিত হয়। আধুনিক নগরের সাজে সাজতে থাকে উপজেলা কর্ণফুলি। পাশাপাশি সারা দেশে ১০০টি বিশেষ শিল্প এলাকা গঠন করার ঘোষনার প্রেক্ষিতে আনোয়ারায় গড়ে ওঠছে চায়না ইকোনোমিক জোন, কর্ণফুলি ও আনোয়ারার অংশে গড়ে ওঠেছে কোরিয়ান ইপিজেড। এক ঘন্টার কাজ সারার জন্য জোয়ারভাটা হিসেব করে দু’দিনের সময় নিয়ে যে বাঁশখালীর মানুষকে এক সময় চট্টগ্রাম শহরে আসতে হত, তার এখন কাজের জন্য সকালে শহরে এসে সারাদিনের কাজ শেষ করে রাতে বাড়ী ফিরে ঘুমাতে পারে। তাছাড়া স্বয়ং বাঁশখালীতে লেগেছে শিল্পায়নে ছোঁয়া-গড়ে ওঠেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, এগো ফার্মসহ ছোট ছোট কারখানা। তবুও কিছুটা জটিলতা রয়েই গিয়েছিল। উত্তরের জেলাগুলোর যানবাহনকে দক্ষিন চট্টগ্রামসহ পর্যটন শহর কক্সবাজার, বান্দরবান ও টেকনাফে যেতে হলে চট্টগ্রাম শহরের উপর অনেক ঘুরতি পথে শাহ আমানত সেতু হয়েই যেতে হয়। ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ এ জটিলতাকে সহজেই নিরসন করতে সক্ষম হবে। কর্ণফুলির উপর ভেসে থাকা নৌযান ও মাঝি মল্লা, পন্য নিয়ে বিদেশ থেকে আসা পণ্য বোঝাই জাহাজের নাবিক ও ক্রুসহ সংশ্লিষ্টজনেরা এবং দুপারে স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যন্ত এতটুকু আঁচ করতে পারেনি কর্ণফুলির তলদেশের আরো ১৫০ফুট গভীরে উন্নয়নের কি মহোৎসব চলেছে। বিশাল আকৃতির অত্যাধুনিক টানেল বোরিং মেশিন দিয়ে সুরঙ্গ তৈরী করে বিশেষ সেগমেন্ট দিয়ে করা হয়েছে দুটি বড় বড় টিউব, টিউবের ভেতর করা হয়েছে পীচঢালা পথ। এ মহা কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের পর সংযোগ সড়কের কাজ সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং এর নান্দনিকতা সকলকে মুগ্ধ করেছে। একই ভাবে মুল শহরের বাসিন্দার টেরও পাবেনা উত্তরের জেলা গুলো থেকে চট্টগ্রাম জেলার দক্ষিণাংশে পতেঙ্গা হয়ে আনোয়ারা প্রান্ত দিয়ে দৈনিক হাজার হাজার গাড়ী যাতায়াত করবে, আর ¯্রােতস্বীনি কর্ণফুলির জলও টের পাবেনা কত ব্যস্ত থাকবে তার নিচ দিয়ে নির্মিত সড়ক। এ ধরণের অসাধ্য সাধনের সাহসিকতা এ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় আর কেউ দেখাতে পারেনি। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা, দেশরতœ শেখ হাসিনার পক্ষেই এ সাহসিকতা দেখানো সম্ভব। তিনি দেখিয়েছেন সৃষ্টিকর্তা সহায় থাকলে, জনগণ পাশে থাকলে এবং সৎসাহস ও আন্তরিকতা থাকলে প্রমত্ত পদ্মার তলদেশ থেকে স্তম্ভ তুলে এনেও সেতু ও রেলপথ বানানো যায় আবার ¯্রােতস্বীনী কর্ণফুলির তলদেশেরও অনেক গভীরে গিয়ে সুরঙ্গ পথ তৈরী করে এপাড়-ওপাড় এক করা যায়।


আগামী ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলির তলদেশ দিয়ে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান টানেলটি’ উদ্বোধনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ঐশ^র্য ও সমৃদ্ধির মুকুটে নতুন স্বর্ণময় পালক গুঁজে দিতে চট্টগ্রাম আসছেন উন্নয়নের বিষ্ময় মানবী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এ টানেল দিয়ে নদী পার হয়ে তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য খুলে দিবেন আরেকটি স্বপ্নদুয়ার। সাংহাইয়ের আদলে কর্ণফুলির দু’পাড়ে দ্রুত গড়ে ওঠবে ওয়ান সিটি টু টাউন। কমে আসবে পার্বত্য বান্দরবান, কক্সবাজার, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিনের সাথে চট্টগ্রামের উত্তরের জেলা গুলোর দূরত্ব, বাঁচবে জ¦ালানী খরচ ও শ্রমঘন্টা। দেশের পর্যটন শিল্পে পড়বে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব, আসবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি। এশিয়ান হাইওয়ের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি সংযোগ অর্থনৈতিক কর্মকা-ে আনবে অভাবনীয় ইতিবাচক পরিবর্তন।


বঙ্গবন্ধু টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তে উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী টানেলপথ পাড়ি দিয়ে আনোয়ারার কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দিবেন এবং জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিবেন। আজ মনে পড়ছে সেই জনসভার কথা। ২০০৮সালে চট্টগ্রাম শহরের লালদীঘির ময়দানে জনসভায় দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা ঘোষণা দিয়েছিলেন; তিনি যদি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পান, তবে চট্টগ্রামের উন্নয়ন নিজ হাতেই করবেন। তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। চট্টগ্রামকে তিনি রূপান্তরিত স্বপ্নের চট্টগ্রামের পথে নিয়ে গেছেন, দিন বদলের সনদ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে রূপান্তরিত এক বাংলাদেশকে বিশ^ দরবারে হাজির করেছেন। বিশ^ বাংলাদেশকে জানত একটি ঝঞ্জা বিক্ষুব্ধ প্রাকৃতিক বৈরীর দেশ, ঝড়, খরা, বন্যা, মঙ্গা ও দারিদ্রপীড়িত হাহাকারের দেশ হিসেবে। শেখ হাসিনা তার দুরদর্শী নেতৃত্ব ও অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নয়ন ও অগ্রগতির রোল মডেল হিসেবে বিশ^ দরবারে তুলে ধরেছেন। বিশ্বসভায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন অত্যন্ত সম্মানের আসন তৈরী করে নিয়েছেন, দেশকে দিয়েছেন উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা। জিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মহাসড়কে আছি এখন আমরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণের রায়ে আবারো যদি আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে আনতে পারি তবে অচিরেই বাংলাদেশ বিশে^র উন্নত রাষ্ট্রগুলোর কাতারে পৌঁছে যাবে-এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।


পরিশেষে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রতি অভিবাদন জানিয়ে এবং চট্টগ্রামসহ দেশের জনগণকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিয়ে  জননেত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করার উদাত্ত আহ্বান জানাই। সকলকে ধন্যবাদ-জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।  


   - লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ও জ্যেষ্ট যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ।



  
  সর্বশেষ
ইসলামী ব্যাংকে এস. আলমের বিশ্বস্ত এমডি বহাল তবিয়তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির আশংকা
ভেজাল ক্যাবলসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, বিশাল রাজস্ব ফাঁকি
আমেরিকাসহ তিন দেশের রাষ্ট্রদূতের নিয়োগ বাতিল
জামাই-বউয়ের পুকুর ডাকাতিতে ন্যুজ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট

প্রধান সম্পাদক: এনায়েত ফেরদৌস , অনলাইন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত ) কামরুজ্জামান মিল্টন |
নির্বাহী সম্পাদক: এস এম আবুল হাসান
সম্পাদক জাকির হোসেন কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত ও বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২/২, ইডেন কমপ্লেক্স (৪র্থ তলা) সার্কুলার রোড, ঢাকা ১০০০। ফোন: ০১৭২৭২০৮১৩৮, ০১৪০২০৩৮১৮৭ , ০১৫৫৮০১১২৭৫, ই-মেইল:bortomandin@gmail.com