খুলনা ডেস্ক:
রাজধানীর বকশীবাজারে দুই বাসের পাল্লাপাল্লির সময় মাঝখানে চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন জহুরুল হক সেলিম নামে ৫২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর ক্যানসারে আক্রান্ত ছেলেকে দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বুয়েট ও বকশীবাজার মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে।
নিহত সেলিম পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর দুই ছেলের মধ্যে একজন, জুবায়ের, ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন। ছেলের চিকিৎসার প্রয়োজনে তিনি পরিবারের সঙ্গে বকশীবাজার এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করছিলেন।
মঙ্গলবার রাতে ছেলেকে দেখতে বের হওয়ার সময় রাস্তা পার হচ্ছিলেন সেলিম। সে সময় মৌমিতা পরিবহনের দুটি বাস অতিরিক্ত গতিতে পাল্লাপাল্লি করছিল। হঠাৎ তাদের মাঝে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। ডান হাত ভেঙে যায় এবং তাঁর শরীরে আরও অভ্যন্তরীণ আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর হাতে প্লাস্টার করে বাসায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু কিছু সময় পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে আবার হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের স্ত্রীর বোন সিনথিয়া বেগম জানান, সেলিম একজন দায়িত্বশীল ও যত্নশীল বাবা ছিলেন। ছেলের অসুস্থতার সময়টাতে এক মুহূর্তও পাশে থেকে সরে যাননি। তাঁর এই করুণ মৃত্যু পরিবারটির ওপর এক বড় ধাক্কা।
চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ আখতারুজ্জামান জানান, ওই ঘটনায় মৌমিতা পরিবহনের দুই বাসের চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। নিহতের ছেলে ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই দুর্ঘটনা রাজধানীতে বেপরোয়া বাস চালনার পরিণতি এবং পথচারীদের নিরাপত্তা সংকটকে আবারও সামনে নিয়ে এসেছে। এক অসুস্থ সন্তানের জন্য ছুটে চলা এক বাবার জীবন এমন অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে থেমে যাবে তা কল্পনাও করেনি তাঁর পরিবার।