খুলনা ডেস্ক:
ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার অনেক মানুষ এখন বন্যার পানিতে ঘরছাড়া। নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, টানা বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে গেছে, নষ্ট হয়েছে আসবাবপত্র, গোয়ালঘর ডুবে যাওয়ায় গবাদিপশু নিয়ে অনেকেই ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
দক্ষিণ আনন্দপুর গ্রামের তনিমা সুলতানা তার পরিবার ও গরু-ছাগল নিয়ে পার্শ্ববর্তী শাহজাহান মজুমদারের দুইতলা ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। শুধু তার পরিবার নয়, আশপাশের আরও ১০টি পরিবারও ওই একই ছাদে কোনো রকমে দিনযাপন করছে। এভাবে অনেক এলাকায় ছাদই এখন মানুষের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা আরও স্পষ্ট হয়েছে স্থানীয়দের ভাষ্যে। আনন্দপুরের বাসিন্দা আলা উদ্দিন জানান, গত বছরও একইভাবে বন্যায় ছাদে আশ্রয় নিতে হয়েছিল। এবারও পানি না কমায় ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে গেছে, তাই পরিবারের সদস্য ও গবাদিপশুসহ ছাদেই থাকতে হচ্ছে।
মোতাহার হোসেন নামে আরেক ব্যক্তি জানান, এটি তার মামার বাড়ি। পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকায় ছাদ আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। গবাদিপশুসহ এখানে আশ্রয় নিয়েছে ১০টি পরিবার, যাদের প্রতিদিনের জীবন চলছে অনেক কষ্টে।
ফেনী জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, বন্যায় আক্রান্ত প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে ৬ হাজার ৮২৬ জনকে ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরশুরাম ও ফুলগাজী উপজেলায় ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করছেন। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং দুর্গতদের সহযোগিতা নিশ্চিত করতে সবধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এখনও যেসব এলাকায় পানি ঢুকছে, সেসব স্থানে নতুন করে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক না হলে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।