শনিবার, জুলাই ২৭, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * উন্নয়ন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী   * পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে: ওবায়দুল কাদের   * সায়েন্সল্যাবে সংঘর্ষে আহত ১১ জন ঢাকা মেডিকেলে   * সাধারণ শিক্ষার্থীসহ ছাত্রলীগের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা: কাদের   * আন্দোলনকারীদের ধাওয়ায় পিছু হটলো পুলিশ-ছাত্রলীগ   * ঢাবি ছাত্রলীগে পদত্যাগের হিড়িক   * শনিরআখড়ায় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট   * কোটা আন্দোলকারীদের ওপর হামলা বুধবার সারাদেশে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল   * সায়েন্সল্যাব মোড়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ   * বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ  

   অপরাধ-দূর্নীতি
অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে শর্তবহির্ভূত মূল্যায়ন ॥ বিতর্কিত হতে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক-আরইবি’র ডিএমডি প্রকল্প
  Date : 31-01-2024
Share Button

স্টাফ রিপোর্টার:

শর্তপূরণে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন করে আরইবি’র ঢাকা ময়মনসিংহ ঢাকা প্রকল্প শুরুতেই বিতর্কিত হতে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন একটি বিশাল প্রকল্পের হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল সরবরাহে টেকনিক্যাল শর্ত মূলায়নে অসঙ্গতি কার স্বার্থে কে করছে তা আরইবি’র জন্য এক বিরাট লজ্জাজনক অধ্যায় হয়ে দাড়াচ্ছে বলে মনে করছে বিজ্ঞমহল।


সূত্র মতে, গেলো বছরের ৬ ডিসেম্বর তারিখে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়ন হতে যাওয়া তিন লটের ডিএমডি প্রকল্পে বয়ার কন্ডাক্টর এবং ইন্সুলেটেড কন্ডাক্টর সরবরাহের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করে আরইবি। এতে আইটেম কোড ও সুনির্দিষ্ট ভোল্টেজ উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিলো। এই দরপত্রে একটি চাইনিজ প্রতিষ্ঠান ও চারটি দেশী কোম্পানি অংশগ্রহণ করে। এতে বিডারদের যোগ্যতা হিসেবে অন্যতম দুটো শর্ত ছিলো জেনারেল এক্সপেরিয়েন্স ও স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্স। কিন্তু স্পেসিফিক এক্সপেরিয়েন্সকে সঠিক ভাবে মূল্যায়ন না করে সর্বনিম্ন দরদাতা ধরে দুটো দেশী কোম্পানিকে এসব সরাঞ্জাম সরবরাহে প্রধান্য দেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে আরইবি’র নিরপেক্ষতা নিয়ে তুমুল বিতর্ক ওঠে ।
শর্তানুযায়ী উক্ত আইটেমে সঠিক অভিজ্ঞতা না থাকলে যেকোনো প্রতিষ্ঠান অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে এবং বাছাই পর্বে বাতিল হয়ে যাবার কথা। কিন্তু তা না হয়ে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে শর্তবহির্ভূত ভাবে মূল্যায়ন করে আরইবি প্রকল্পটিকে ক্ষতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। বিজ্ঞমহল বলছেন, এ প্রকল্পে বিডারদের জন্য দেওয়া টেকনিক্যাল শর্তাবলীর সঠিক মূল্যায়ন না করে সর্বনিম্ন দরদাতার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদি শর্তপূরণ করা যোগ্য প্রতিষ্ঠান থাকার পরও নিম্ন দরকেই মূলায়ন করা হবে তবে অভিজ্ঞতা, সুনির্দিষ্ট আইটেম সরবরাহের রেকর্ড সহ অন্যান্য শর্ত দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো না।


জানাগেছে, আরইবি একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে অভার টেলিফোনে তড়িঘড়ির করে টিইসি গঠন ও জুম মিটিং করে উক্ত প্রকল্পে মূল্যায়ন বিষয়ক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে কমিটির কেউকেউ এ বিষয়ে সদস্য হয়েও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। অভিজ্ঞ মহল বলছেন, আরইবি’র যদি নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেবার টার্গেটই থাকে তবে তাদের ডেকে অর্ডার দিলেই পারতো। এমন বিশাল একটি আন্তর্জাতিক দরপত্রকে বিতর্কের দিকে নেওয়ার প্রয়োজন ছিলো না।


বিভিন্ন বিডার প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে জানাগেছে, একাধিক প্রতিষ্ঠান সুনির্দিষ্ট ভোল্টেজ অনুযায়ী আইটেম কোড শর্তের অভিজ্ঞতা না থাকলেও এই দরপত্রে অন্য কোডের অভিজ্ঞতা দিয়ে অংশগ্রহণ করেছে যা বেআইনী। যেমন বেয়ার কন্ডাক্টর এবং ইন্সুলেটেড কন্ডাক্টর এক জিনিস নয়। টেন্ডারে বিভিন্ন কোডের আইটেম অনুযায়ী আরইবি এর ভোল্টেজ লেভেলও উল্লেখ করে দিয়েছে। এক্ষেত্রে লট-৩ এর ডি-৬২ হচ্ছে ইন্সুলেটেড কন্ডাক্টর ১৫কেভি মিডিয়াম ভোল্টেজ গ্রেড উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিলো। এপর্যায়ে অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে বিডারদের ১৫কেভি ইন্সুলেটেড কন্ডাক্টর সরবরাহের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করার কথা। কিন্তু অযোগ্য হলেও নির্দিষ্ট কোম্পানিকে কাজ দিতে ১৫কেভি ভোল্টেজের ক্ষেত্রে ডি-১১,১২,১৪,২৫ কোডের ৬০০ ভোল্টেজের লো-ক্যাটাগরির কন্ডাক্টর সরবাহের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। যা এধরনের দরপত্রে আইন বিরোধী, অসঙ্গত ও শর্তবহির্ভূত বলে উল্লেখ করেছেন উচ্চ আদালতের একজন আইনজীবি। অন্যদিকে লট-১ এবং লট-২ এর কন্ডাক্টর সরবরাহে পছন্দের বিডার বলেই ভোল্টেজ গ্রেড ধরে মূলায়ন করা হয়নি। কেননা এই দুই লটে আইটেম কোড ডি-২,৩,৫ প্রভৃতি হচ্ছে লো-ভোল্টেজ কন্ডাক্টর। অন্যদিকে ডি-২৭ কোডের কন্ডাক্টর হলো মিডিয়াম ভোল্টেজের। এখানে আরইবি’র সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ পছন্দের কোম্পানির টেকনিক্যাল শর্ত মূল্যায়নে বেআইনীভাবে এক ধরন ও ভোল্টেজের কন্ডাক্টর সরবরাহে বিডারের অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে অন্য কোড ও ভোল্টেজের কন্ডাক্টর সরবরাহের অভিজ্ঞতাকে মূল্যায়ন করেছে। ফলে বিডার নির্ধারণে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা বজায় না থেকে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


এ বিষয়ে এই প্রজেক্টটির মেম্বার ডিএনও এবং মূলায়ন কমিটির আহবায়ক দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, এই প্রজেক্টের মূল্যায়ন শেষ হয়নি, এখনো চলমান রয়েছে। যেহেতু এখানো মুল্যায়ন শেষ হয়নি তাই কোনো কিছুই আগে বলা যাচ্ছে না। বিআরইবি’র সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো: আব্দুর রৌফ মিয়াকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের এই প্রজেক্টে দরপত্রের সাথে স্পষ্টভাবেই টেকনিক্যাল শর্তের কথা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। এখানে ঘাপলা করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, প্রজেক্টটির মূল্যায়ন এখানো শেষ হয়নি; বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো। তবে বিষয়টিতে প্রজেক্ট ডিরেক্টর সরাসরি জড়িত। তবে এসব বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম ক্রয়ে অনিয়ম হলে আরইবি প্রশ্নের মূখে পড়বে এটা স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে শুধু সর্বনিম্ন দাম দাতা ধরে এক কোডের আইটেমে অন্য কোডের আইটেমের অভিজ্ঞতা মূল্যায়ন করে টেকনিক্যল শর্তের ঘাপলা করে আরইবি এসব কন্ডাক্টর সরবরাহ নিলে আইনগত জটিলতায় পড়তে পারে কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই পড়তে পারে। বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম সরবরাহে অনিয়ম, শর্তভঙ্গ বা এসংক্রান্ত কর্মকান্ডে বিভিন্নভাবে আইনগত জটিলতায় পড়ার বিধান বিদ্যমান রয়েছে।
এ বিষয়ে উক্ত প্রজেক্টের ডিরেক্টর আওলাদ হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, যেহুতু প্রজেক্টটির মূল্যায়র চলমান রয়েছে এজন্য তেমন কিছু বলা যাবে না। তার বিরুদ্ধে দুটো কোম্পনির কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা নিয়ে এধরনের কাজ কৌশলে করার অভিযোগ রয়েছে সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আরো কিছু জানতে চাইলে তা লিখিতভাবে দেন। আমি অনুমতি নিয়ে এ বিষয়ে জানাতে পারবো।
এবিষয়ে আরইবি’র সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য বিসিকের অর্থ পরিচালক মো: কামাল উদ্দিন বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, আমি এখানে খন্ডকালীন সদস্য। আমি অনিয়মের কেনো অভিযোগ পেলে আরইবি’র চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে এধরনে বিডার সিলেকশ বন্ধ করে দিবো।
একই কমিটির সদস্য বিআরডিবির অর্থ পরিচালক শহিদুল ইসলাম এনডিসি বলেন, আমি এই কমিটির আউট সাইট মেম্বার। আমার উপস্থিত কোনো প্রকল্পে অনিয়ম হবে আমি সেটা মেনে নেবোনা। আমার কাছে এসংক্রান্ত বিষয়ে জানানো হোক। পরবর্তী মিটিংয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
একই কমিটির সদস্য ও পিডিবির বিতরণ বিভাগের সদস্য প্রকৌশলী মো: মিজানুর রহমান, বলেন আমি স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিজিসিবি’র ম্যানেজিং ডিরেক্টর একেএম গাউছ মহিউদ্দিন বলেন, আমি বিষয়টি জানিনা, আমাকে কখোনো এই মিটিংয়ে ডাকা হয়নি। অন্য সদস্য বিএডিসির সচিব মো: আশরাফুজ্জামান বলেন,আমি এই কমিটির অনাররি মেম্বার। সব বিষয় না দেখে কিছু বলা যাবে না। তবে এটুকু বলতে পারি নিয়মের বাইরে কিছু হলে আমরা এর সাথে একমত পোষণ করবো না। প্রসঙ্গটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেছেন, এধরনের প্রকল্পে অনিয়মের কোনো অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে দরপত্রে অংশগ্রহণ করে পিছিয়ে থাকা বিডার বিবিএস গ্রুপের টেন্ডার বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, আরইবি’র মত সুনামধারী একটি প্রতিষ্ঠান কোনো প্রকল্পে অনিয়ম করবে এটা কেউ প্রত্যাশা করে না। আন্যদিকে সুনির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা না থাকলেও কিভাবে অংশগ্রণ করেছে প্রসঙ্গ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযোগ ওঠা আরইবির পছন্দের বিডারের দু’জন উর্ধতন কর্মকর্তা এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননি।



  
  সর্বশেষ
উন্নয়ন ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে: ওবায়দুল কাদের
ইমারত নির্মাণ ‘বিধি’ লঙ্ঘনের মহোৎসব ! রাজউকে’র সংশ্লিষ্টদের পোয়াবারো
পিতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে ছয় মাস বয়সী শিশু ও তার মায়ের রিট

প্রধান সম্পাদক: এনায়েত ফেরদৌস , অনলাইন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত ) কামরুজ্জামান মিল্টন |
নির্বাহী সম্পাদক: এস এম আবুল হাসান
সম্পাদক জাকির হোসেন কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত ও বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২/২, ইডেন কমপ্লেক্স (৪র্থ তলা) সার্কুলার রোড, ঢাকা ১০০০। ফোন: ০১৭২৭২০৮১৩৮, ০১৪০২০৩৮১৮৭ , ০১৫৫৮০১১২৭৫, ই-মেইল:bortomandin@gmail.com