খুলনা ডেস্ক:
আজ ২৮ জুন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ, নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৮৫তম জন্মদিন। ১৯৪০ সালের এই দিনে তিনি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এই বিশেষ দিনে দেশ-বিদেশের অসংখ্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও শুভানুধ্যায়ী তাঁকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
ড. ইউনূসের জীবন কেবল একজন সফল পেশাজীবীর নয়, বরং মানবিকতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রতি নিবেদিত একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন চিন্তাবিদের। পড়াশোনায় তিনি ছিলেন বরাবরই মেধাবী। চট্টগ্রাম কলিজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১৬তম স্থান অর্জন করেন। এরপর চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে ফুলব্রাইট স্কলারশিপে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকায় থেকে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক জনমত তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের পটভূমিতে তিনি দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণে সক্রিয় হন এবং ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামে শুরু করেন ‘গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প’। ১৯৮৩ সালে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ নামে। ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের এই অনন্য মডেল আজ বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশে বিস্তৃত।
২০০৬ সালে ড. ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করে। নোবেলের পাশাপাশি তিনি পেয়েছেন স্বাধীনতা পুরস্কার, বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেলসহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি, যা তাঁকে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
বর্তমানে ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া গণআন্দোলন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয়। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিলে, ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার—যার নেতৃত্বে রয়েছেন ড. ইউনূস। এখন তিনি দেশের রাজনৈতিক পুনর্গঠন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
৮৫তম জন্মদিনে ড. ইউনূস কেবল একজন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ নন, বরং তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির প্রতীক। তাঁর জীবন, আদর্শ ও অবদান আজও নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগায়, এবং বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের জন্য গৌরব বয়ে আনে।