খুলনা ডেস্ক:
কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার আলগাপাড়া গ্রামের মনু মিয়া, যিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে তিন হাজারেরও বেশি কবর খুঁড়েছেন, আজ শনিবার সকালে ৬৭ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। ছয় দিন আগে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফেরার পর আজ সকালেই ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আর ফিরে ওঠেননি।
স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘মানবতার গোরখোদক’ হিসেবে মনু মিয়ার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। মানুষের মৃত্যুসংবাদ পেলে দিন-রাত, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোদাল হাতে ছুটে যেতেন তিনি। নিজের ধানি জমি বিক্রি করে একটি ঘোড়া কিনেছিলেন, যাতে দ্রুত কবরস্থানে পৌঁছাতে পারেন। সেই ঘোড়ার পিঠে চড়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে মানুষের শেষ বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে যেতেন নিরলসভাবে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে কিছুদিন আগে দুর্বৃত্তরা তাঁর প্রিয় ঘোড়াটিকে মেরে ফেলে, যা তাকে মানসিকভাবেও প্রচণ্ডভাবে আঘাত করেছিল।
মনু মিয়া ছিলেন নিঃসন্তান, জীবনভর মানুষের সেবা করে গেছেন কোনো স্বার্থ ছাড়াই। তাঁর ডায়েরিতে লিপিবদ্ধ ছিল প্রতিটি কবর খোঁড়ার দিন, তারিখ ও মৃত ব্যক্তির পরিচয়। নিজেকে একজন সেবক হিসেবেই দেখতেন তিনি। তাঁর ইচ্ছা ছিল যতদিন বাঁচবেন, মানুষের জন্য কবর খুঁড়েই কাটাবেন।
এমন নিঃস্বার্থ কর্মের জন্য তিনি কখনো সরকারি বা বেসরকারি কোনো সম্মাননা নেননি, এমনকি অসুস্থ অবস্থাতেও কারও সহায়তা নিতে চাননি। শুধু বলেছিলেন, দোয়া করবেন যেন আবার সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন এবং মানুষের জন্য কবর খুঁড়তে পারেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির উদ্দিন জানান, রাজধানীর বনানী কবরস্থানসহ দেশের বহু স্থানে মনু মিয়া কবর খুঁড়ে গেছেন নিখুঁত ও সম্মানজনকভাবে। আজ তাঁর নিজের জন্য কবর খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছে। বিকেলে জানাজা শেষে তাঁকে নিজ এলাকায় দাফন করা হবে। মনু মিয়া এখন হাজারো মানুষের দোয়া নিয়ে তাঁরই খোঁড়া পৃথিবীর মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন।