বিশেষ প্রতিনিধি:
সুপার এনামেল ওয়্যার’কে মার্কেটে সুপার বলা হয়। এর সাইজ রয়েছে ১২ থেকে ৪৬ পর্যন্ত, যার মার্কেট কয়েক হাজার কোটি টাকার। এর প্রধান কাচামাল কপার যার অল্প পরিমাণের বিক্রয় মূল্য অনেক বেশি। যে কারণে শুল্ক/ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা লুট করা সহজ। এভাবে শতশত কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি পড়লেও এরা রয়ে যাচ্ছে আড়ালে। অন্যদিকে নকল, নিম্নমানের সুপার ওয়ারের ব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়ত ফ্যান, মটর, ট্রান্সমিটার পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে।
এই সেক্টরে ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি হচ্ছে তিন ভাবে। প্রথমত র’ম্যাটাারিয়ালস আমদানী ক্ষেত্রে মিস ডিক্লারেশন। গোজামিল রফতানি দেখিয়ে শুল্ক বিহীন কাঁচামাল কপার আমদানি করছে। দ্বিতীয়ত: স্থানীয় মার্কেট থেকে কপার স্ক্রাপ ক্রয় করছে কিন্তু এর ভ্যাট না দিয়ে সুপার এনামেল ওয়্যার তৈরি ও তা কমদামে বিপণন করছে। তৃতীয়ত: লোহা, এলুমনিয়াম, কার্বন প্রভৃতি মিশ্রিত ঝুঁকিপূর্ণ কপারের কাঁচামাল দিয়ে ভুইফোড় অজ্ঞাত কারখানায় তৈরি নকল, বিপদজনক সুপার ওয়্যার যারা বানাচ্ছে তারা সাধারণত ভ্যাট ট্যাক্স কিছুই দিচ্ছে নাা। ফলে ভ্যাট আদায়ে রয়েছে অসম অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। সঠিক ভ্যাট/শুল্ক দেওয়া প্রতিষ্ঠান ক্রমে লোকসানী ও রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে। ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমে মার্কেট দখল করছে।
এই সেক্টরে প্রধান উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানি গাজী ওয়্যার, এরপর বিআরবি ও পরবর্তী অবস্থানে রংপুর মেটাল, এসকিউ গ্রুপ। অভিযোগ রয়েছে, ভ্যাট দেওয়ার ক্ষেত্রে এসকিউ, রংপুর মেটাল বার্ষিক কাঁচামাল- কপার আমদানী দেখাচ্ছে দু’একশ টন। যেখানে বিআরবি ক্যাবলস আমদানী করছে কয়েক হাজার টন। তিনন প্রতিষ্ঠানের মার্কেটের অবস্থান অনেকটা কাছাকাছি। জানাগেছে, বাজার অনুপাতে এসকিউ, রংপুর মেটালের কাচাঁমাল আমদানী হবার কথা কমপক্ষে পাঁচ ছয় হাজার টনের বেশি। লোকাল মার্কেটের স্ক্রাব কাঁচামাল দিয়ে সুপার ওয়্যার বানালেও এর উপর ভ্যাট প্রযোজ্য রয়েছে। যার পরিমাণ হবার কথা বিশাল অঙ্কের। অন্যদিকে এদের ফ্যান, মটর, ট্রান্সমিটারে যে বিশাল পরিমাণ সুপার ওয়্যার ব্যবহার হয় সেখানেও ভ্যাট ক্যালকুলেশন করলেই অঙ্ক বের হবার কথা। এদের মত রয়েছে এমইপি গ্রুপ, এসকিউ গ্রুপ, ওয়ালটন গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ প্রভৃতি। যারা নিজেরা সুপার এনামেল ওয়্যার উৎপাদন বিপণন করার পাশাপাশি এসব দিয়ে ফ্যান, মটর, ট্রান্সমিটার বানাচ্ছে যেখানে ভ্যাট ক্যালকুলেশন হবার কথা।
কাঁচামালের দাম ও তৈরি পণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করলেই ভ্যাট ফাঁকি, পণ্যের মানের একটা চিত্র পাওয়া যায়। যেমন-আমদানী ক্ষেত্রে -এ গ্রেড কপারের মূল্য প্রতি কেজি ১৪০০ টাকা, লোকাল কপার স্ক্রাব প্রতি কেজি ১২০০ টাকা। সাথে আমদানী শুল্ক/ভ্যাট, উৎপাদন খরচ, ওয়েস্টেজ বাদ দিয়ে এবং প্রফিট ও ভ্যাট যুক্ত হবার পর প্রতি কেজি সুপার ওয়্যারের দাম আসার কথা অনেক টাকা। সুপার ওয়্যারের মার্কেট প্রাইজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে রংপুর মেটালের -বিজলী ব্রান্ডের সুপার ওয়ার বিক্রয় মূল্য ১৪৮৩ টাকা, বিআরবি ব্রান্ড ১৭৮৩ টাকা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গাজী ব্রান্ডের ১৮৪৪ টাকা, ইন্ডিয়া বাংলাদেশ জয়েনভেঞ্চার আরআর ব্রান্ড ১৭৫০টাকা, এসকিউ ব্রান্ড ১৩৪৯ টাকা, যমুনা গ্রুপের যমুনা ব্রান্ড ১৩৪৫ টাকা, মেঘনা স্টার গ্রুপের মেঘনা ব্রান্ড ১৪৫০টাকা, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স এর বিটি ব্রান্ড ১৩০০টাকা, এএস ব্রান্ড ১৩০০ টাকা, এসবি ব্রান্ড ১২৯৫ টাকা, বাংলা এশিয়া ব্রান্ড ১৩১৫ টাকা।
কাঁচামালের দামের সমান ফিনিশড গুডস বিক্রি করছে কারচুপি করা প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কাচামালের চেয়েও কমে বিক্রি করছে। রাজস্ব বিভাগ সহজেই এদের ভ্যাট ফাঁকি ক্যালকুলেশন বের করে ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে পুরো কর্পোরেট গ্রুপ মূল্যায়ন না করে আলাদা করে কোম্পানির ভ্যাট ক্যালকুলেশন করলেই কারচুপির সঠিক চিত্র বের হয়ে আসবে। পাশাপাশি ভুয়া রফতানি দেখানো, মিস ডিক্লারেশন দিয়ে আমদানী করা কাঁচামালের বিষয়ে তদন্ত করলেই শুল্ক, ভ্যাট কারচুপির তথ্যও বেরিয়ে আসবে।