মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার নাকোল গ্রামের শতবর্ষী নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে এক ভয়াবহ হামলার ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুনীর হোসেনের দপ্তরে ঢুকে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে দুই শতাধিক ব্যক্তি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, হামলাকারীদের মধ্যে ছিলেন সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক ও তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী শিক্ষক প্রতিনিধি কামরুজ্জামান সাইমন, যুবদল নেতা মিরান হত্যা মামলার পলাতক আসামি মহব্বত, নাকোল ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি রবিউল ইসলাম, সানরাইজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম, এসিড ও হত্যা মামলার আসামি যুবলীগ কর্মী কুতুবউদ্দিন লাভলু, স্থানীয় কিশোর গ্যাং ও মাদক ব্যবসায়ীসহ আরও অনেকে।
হামলার সময় নাকোল পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মালেক ও আরও দুই পুলিশ সদস্য শিক্ষক মুনীর হোসেনকে রক্ষার চেষ্টা করলেও হামলাকারীদের আঘাতে তাঁর মাথায় গুরুতর চোট লাগে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়, সেখান থেকে অবস্থার অবনতি হওয়ায় মাগুরা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুবর্ণা জামান ও লিপি বেগমসহ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মচারী ক্লাস টেনের ছাত্রছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়ে পরীক্ষা বাতিল করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এই হামলায় কিছু শিক্ষার্থীকেও ব্যবহার করা হয়েছে।
হামলাকারীরা বিদ্যালয়ের অফিসকক্ষে ঢুকে ল্যাপটপ, ক্রীড়া সামগ্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ভাঙচুর করে এবং ড্রয়ারে রাখা ৫ হাজার টাকা চুরি করে নেয়। পরে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নান জোর করে প্রধান শিক্ষকের চেয়ারে বসেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যালয়ে চলমান প্রায় চার কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত ও মামলাকে ঠেকাতেই পরিকল্পিতভাবে এই হামলা চালানো হয়েছে। তাঁদের দাবি, দুর্নীতির দায় এড়াতেই সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি সম্প্রতি উন্নতির পথে এগোচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই পলাতক প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও দুর্নীতি মামলার প্রধান আসামি হুমায়ুন রশিদ মুহিতের অনুসারীরা তথাকথিত ছাত্রদল, বিএনপি, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের যৌথ অংশগ্রহণে এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ স্থানীয় শিক্ষাপ্রেমীদের।
ঘটনার পর বিদ্যালয়টি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে, এবং এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।