খুলনা ডেস্ক:
খুলনায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির কেন্দ্রে এখন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের অপসারণ দাবি। ছাত্র-জনতার একটি অংশ সরবভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে, যা শুরু হয়েছিল এসআই সুকান্ত দাশকে মুক্তি দেওয়ার ঘটনার পর। স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হওয়া সুকান্ত দাশকে রাতের আঁধারে ছেড়ে দেওয়ায় জনমনে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। এরপর আন্দোলনকারীরা কেএমপি সদর দপ্তর ঘেরাও করে বিক্ষোভ করে, এমনকি তালা ঝুলিয়ে দেন প্রধান ফটকে।
এ আন্দোলনে প্রাথমিকভাবে সম্পৃক্ত ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, তবে সুকান্ত দাশ গ্রেফতারের পর তাদের একটি অংশ আন্দোলন থেকে সরে এলেও অন্য অংশ এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা এখনও আন্দোলনে সক্রিয় রয়েছে। খুলনা শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় পুলিশের ওপর চাপাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, খুন, চুরি এবং সন্ত্রাসের মতো অপরাধ বেড়েই চলেছে, এবং পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার এসব বিষয়ে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এদিকে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, কেএমপি কমিশনারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপেই সুকান্ত দাশকে মুক্তি দেওয়া হয়। বিভিন্ন থানায় দলবাজ পুলিশের ছত্রছায়ায় বেড়ে চলেছে অপরাধ। সাধারণ নাগরিকরা মুখ খুলতে সাহস পায় না, বরং হুমকির মুখে পড়তে হয়। আন্দোলনকারীরা বলছেন, এটি কোনো রাজনৈতিক ব্যানারের আন্দোলন নয় বরং সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থেকেই সৃষ্টি হওয়া গণআন্দোলন।
খুলনা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করলেও, কমিশনার অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করেন তারা। এতে ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও ছাত্র পরিচয়ে অংশ নিচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা বলছেন, আন্দোলনের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সুকান্ত দাশের গ্রেফতার নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন একটি মহল তাদের কিছু সহযোদ্ধাকে ব্যবহার করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে। তারা মনে করেন, এটি স্পষ্টভাবে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার অপচেষ্টা, যা ছাত্র আন্দোলনের নীতির বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বিভিন্ন নেতারা বলছেন, পুলিশ কমিশনারের অপসারণ ছাড়া শহরে স্থায়ী শান্তি ফিরবে না। কারণ তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যরা বারবার অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছেন, যার চরম মূল্য দিচ্ছে নগরবাসী। কমিশনারের নেতৃত্বে পুলিশের প্রতি আস্থা হারিয়েছে জনগণ, ফলে আন্দোলনও থামছে না।
সবশেষে বলা যায়, খুলনায় এই চলমান আন্দোলন এখন আর কেবল সুকান্ত দাশকে ঘিরে নেই। এটি পরিণত হয়েছে বৃহত্তর সামাজিক প্রতিবাদে—নগরবাসীর নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা, এবং প্রশাসনিক জবাবদিহিতার দাবিতে। এই আন্দোলন কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপের ওপর।