খুলনা ডেস্ক:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা আহ্বায়ক রাশেদ খান হঠাৎ করেই নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। জুলাইয়ের প্রথম প্রহরে, সোমবার রাত ২টার দিকে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যশোর জেলার আহ্বায়ক পদ থেকে আমি স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নিচ্ছি। একই সঙ্গে এনসিপি ও এর ছাত্র কিংবা যুব উইংয়ের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই৷’
তার এই ঘোষণার পরপরই স্ট্যাটাসটির স্ক্রিনশট ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। অনেকেই তার এই পদক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেন, কেউ কেউ সমর্থন করেছেন আবার কেউ সমালোচনাও করেছেন। বিশেষ করে এমন একটি সময়ে যখন সারা দেশে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উদযাপনে মোমবাতি প্রজ্বালন কর্মসূচি চলছে, তখন যশোর জেলার একজন পরিচিত ছাত্রনেতার এই সিদ্ধান্ত আন্দোলনের ভেতরের নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
রাশেদ খানের পদত্যাগ নিয়ে গভীর রাতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ফেসবুকে ঘোষণার পর এক সহকর্মীর ইনবক্সে তিনি শুধু লেখেন, ‘সারাক্ষণ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি। এসব আর ভালো লাগছে না।’
২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর রাশেদ খানকে আহ্বায়ক এবং জেসিনা মুর্শিদ প্রাপ্তিকে সদস্যসচিব করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তবে ঘোষণার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই যৌন হয়রানি ও নৈতিক স্খলনের অভিযোগ এনে যুগ্ম আহ্বায়ক-১ মাসুম বিল্লাহ পদত্যাগ করেন। এরপর এক সপ্তাহের মধ্যেই আরও সাতজন নেতা একই অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেন।
২০২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা কমিটি গঠন ঘিরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সদস্যসচিব জেসিনা মোর্শেদ প্রাপ্তির পদও স্থগিত করা হয় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে। এসব ঘটনার পর থেকেই কমিটির বিভিন্ন নেতাকর্মীর মধ্যে অসন্তোষ ও নিষ্ক্রিয়তা বেড়ে যায়। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিগুলোতেও যশোর জেলার অংশগ্রহণ ছিল একেবারেই সীমিত।
রাশেদ খান যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় থেকে তিনি স্থানীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বাম ঘরানার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থেকে তিনি জুলাই আন্দোলনের সময় যশোরে তীব্র ছাত্রপ্রতিবাদ সংগঠিত করেন। তার এমন হঠাৎ পদত্যাগে রাজনৈতিক অঙ্গন ও শিক্ষার্থী মহলে তৈরি হয়েছে চরম কৌতূহল ও নানা জল্পনা।
নেতাকর্মীদের ভাষ্য মতে, রাশেদ খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত আরও অন্তত ডজনখানেক নেতাকর্মী শিগগিরই পদত্যাগ করতে পারেন। এই ঘটনার মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা ইউনিটে বড় ধরনের পরিবর্তন ও সংকটের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।