খুলনার গল্লামারী মোড়ে ময়ূর নদীর ওপর দুটি স্টিল সেতু নির্মাণ প্রকল্প দীর্ঘ আট মাস ধরে কার্যত স্থবির অবস্থায় রয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং (NDE) চুক্তিভুক্ত ৬৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার বাইরে অতিরিক্ত ১৪ কোটি টাকা দাবি করায় প্রকল্পের অগ্রগতি থেমে গেছে। নির্ধারিত সময়সীমা ছিল ২০২৫ সালের ৩০ মার্চ, কিন্তু এ পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন হয়েছে মাত্র ১৯ শতাংশ। এতে প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট এবং জনভোগান্তি।
২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর পুরাতন সেতু ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। মূল চুক্তি অনুযায়ী ৬৮.৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৩ মিটার প্রস্থের দুটি স্টিল সেতু নির্মাণের পাশাপাশি উভয় পাশে প্রায় ৭৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করার কথা। সেতুগুলো নদী থেকে চার মিটার উঁচু এবং দেখতে রাজধানীর হাতিরঝিলের সেতুর আদলে হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের আগস্টের পর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
জানা যায়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের আগমুহূর্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্যয় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়, যা প্রায় ১৪ কোটি টাকার সমান। সে সময় সাবেক এমপি সেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েলসহ কিছু স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা মৌখিকভাবে সমর্থন দিলেও অভ্যুত্থানের পর সেই সমর্থন উঠে যায়। সড়ক বিভাগে রদবদলের পর নতুন প্রকৌশলীরা অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন।
পরবর্তীতে ঠিকাদার ১৫ শতাংশ হারে প্রায় ১০ কোটি টাকার নতুন ব্যয়ের প্রস্তাব দিলেও সেটিও গ্রহণ করা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প এলাকায় কাজ বন্ধ রাখে, যদিও তাদের নিজস্ব ইয়ার্ডে সীমিত আকারে স্টিল কাঠামোর কিছু কাজ চলেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর পাড়ে সারিবদ্ধভাবে রাখা রিংগুলোতে মরিচা ধরেছে, তৈরি হয়েছে মাত্র একটি অ্যাবাটমেন্ট, সংযোগ সড়কের কোনো অগ্রগতি নেই।
বর্তমানে মাত্র ২১ ফুট প্রশস্ত একটি পুরাতন সেতু দিয়ে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। এতে সেতুর দুই পাশে সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট, যা স্থানীয় বাসিন্দা ও যাত্রীদের জন্য বড় দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী সেলিম রেজা দাবি করেন, কাজ পুরোপুরি বন্ধ নেই। মোট ৬৪টি পাইলের মধ্যে ৩২টি এবং চারটি পাইল ক্যাপের মধ্যে দুইটির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। স্টিল কাঠামোর কাজ ইয়ার্ডে চলমান আছে। নকশা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কিছু ধীরগতি ছিল বলে জানান তিনি।
সড়ক বিভাগের খুলনা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করতেই হবে। কাজ শেষে সব পরিমাপ করে অতিরিক্ত ব্যয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও তিনি জানান।
অর্থ সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রশাসনিক সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।