খুলনা ডেস্ক:
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ পাঁচ মাস পর শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন, তবে এখনও শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়নি। ছাত্ররাজনীতির জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনায় পাঁচ মাস আগে বন্ধ হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম। উপাচার্য পদে স্থবিরতা এবং প্রশাসনিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রায় সাড়ে সাত হাজার শিক্ষার্থী চরম সেশনজটের মুখে পড়েছেন।
২১-২২ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা পূর্ব ঘোষণার ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রক্তাক্ত কুয়েট’ নামের একটি পেজে ক্লাসে ফেরার আহ্বান জানানো হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, তারা ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরেছেন এবং শিক্ষকদেরও আহ্বান জানাচ্ছেন শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে।
শিক্ষার্থীরা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে ক্লাস শুরুর বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ক্লাস শুরুর জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ দরকার। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আশ্বস্ত করেছেন যে পরিবেশ অনুকূলে এলে ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকেও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে ‘গার্ডিয়ান ফোরাম’ গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে। পাশাপাশি, কুয়েট ক্যাম্পাসে অভিভাবকরা মানববন্ধন করেছেন।
২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশির মুনতাকিম ফেরদৌস বলেন, "আমরা বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষে ফিরেছি। আমাদের পাঁচ মাস নষ্ট হয়ে গেছে। ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত ছিল, সেটি বাতিল হয়নি। শিক্ষকদের আইনি কোনো বাধা নেই, তারপরও তারা আসছেন না—এই অবস্থান আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা ক্লাসে ফিরুন।"
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, “উপাচার্য ছাড়া কোনো স্থায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। ক্লাস নেওয়া গেলেও পরিস্থিতি যদি উত্তপ্ত হয়, তখন দায়িত্ব কে নেবে?” গত ১৮ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অপসারণ করে। পরে নিয়োগ দেওয়া হলেও বিরোধিতার মুখে অন্তর্বর্তী উপাচার্য ২২ মে পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে উপাচার্য পদটি শূন্য থাকায় সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। ইউজিসি কুয়েটের বেতন-ভাতা চালানোর জন্য সাময়িকভাবে একটি আর্থিক ক্ষমতা দিয়েছেন, কিন্তু প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে অগ্রগতি না থাকায় শিক্ষাজীবন ফের চালু হওয়া অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফেরা কেবল একটি সাহসী উদ্যোগ নয়, বরং পুরো শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার প্রতিফলন। তবে শিক্ষকদের অংশগ্রহণ ছাড়া এটি টেকসই হবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ ও শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিই এখন প্রধান।