খুলনা ডেস্ক:
খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) সাম্প্রতিক বাজেটে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, যার ফলে নগরীর জরুরি অবকাঠামোগত চাহিদা পূরণে ব্যাঘাত ঘটছে। গত চার বছরে কেসিসির পক্ষ থেকে নতুন কোনো প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায়, পুরনো প্রকল্পগুলোও শেষ হয়ে আসছে। ফলে নগরবাসীর জন্য পানিবদ্ধতা, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সমস্যাগুলো প্রকট হয়ে উঠছে।
কেসিসির অভ্যন্তরীণ তথ্যমতে, ২০১৮ সালে অনুমোদিত দুটি বড় প্রকল্প, সড়ক উন্নয়ন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন এর মধ্যে একটি ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, অন্যটি চলতি অর্থবছরের মধ্যেই শেষ হবে। ২০২১ সালে শুরু হওয়া বর্জ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পটিও একই সময়ে শেষ হবে। এরপর কেসিসির হাতে কোনো চলমান সরকারি প্রকল্প থাকছে না, যা নগরীর জন্য উদ্বেগজনক।
সিটি করপোরেশনের বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যেখানে মোট বাজেট ছিল ১ হাজার ৮২ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯৮১ কোটিতে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র ৭২১ কোটি টাকায়, অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ২৬০ কোটি টাকার ঘাটতি। এর মধ্যে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক।
কেসিসির বাজেট কাম অ্যাকাউন্ট অফিসার জানিয়েছেন, নতুন প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায় সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ কমে যাচ্ছে, যার ফলে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বড় ধরণের স্থবিরতা তৈরি হচ্ছে। নিজস্ব আয় দিয়ে শুধুমাত্র দৈনন্দিন কার্যক্রম ও বেতন-ভাতা চালানো সম্ভব হলেও, নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, সড়ক মেরামত ও জলাবদ্ধতা নিরসনের মতো বড় প্রকল্পের জন্য সরকারি বা দাতা সংস্থার অনুদান অত্যাবশ্যক।
প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ‘ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামে একটি নতুন প্রকল্পের অনুমোদনের জন্য চার বছর ধরে নথিপত্র চালাচালি চলছে। এই প্রকল্পে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট, ড্রেন, ওয়ার্ড অফিস এবং জিয়া হল কমপ্লেক্স উন্নয়নের পরিকল্পনা। তবে এখনো অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
কেসিসির প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার জানিয়েছেন, নতুন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দাতা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে। নগরীর চাহিদা অনুযায়ী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রকল্প অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
এভাবে খুলনার মতো একটি উপকূলীয় ও দুর্যোগপ্রবণ নগরীতে পর্যাপ্ত সরকারি সহায়তা ও উন্নয়ন প্রকল্প ছাড়া কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সময়মতো প্রকল্প অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত না হলে নাগরিক দুর্ভোগ আরও বাড়বে।