খুলনা ডেস্ক:
নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নামটি খুলনার রাজনীতিতে একটি পরিচিত অধ্যায়। দীর্ঘ ৪৬ বছরের রাজনীতিক জীবনে বিএনপির একসময়ের এই শীর্ষ নেতা এখন আবার আলোচনায়। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীদের হঠাৎ সরব হয়ে উঠা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ফেসবুকজুড়ে অভিনন্দন বার্তা, সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন এবং রাজনীতিতে ফেরার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে দ্রুত। বিশেষ করে তার নিজের অ্যাকাউন্টে "আলহামদুলিল্লাহ" পোস্টটি এই আলোচনায় ঘি ঢেলে দেয়।
তবে খুলনা মহানগর বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব বলছে, দল থেকে এখন পর্যন্ত এমন কোনো সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা দেওয়া হয়নি। বরং তারাও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এসব পোস্ট দেখে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। দলীয় শৃঙ্খলার ভেতরে থাকা এবং ঘোষিত নীতিমালা অনুসরণ করাই তাদের মূল অবস্থান।
১৯৭৯ সালে ছাত্রদল থেকে রাজনীতির পথচলা শুরু করা নজরুল ইসলাম মঞ্জু খুলনার বিএনপির রাজনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন। ১৯৮৭ সালে মহানগর কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক, এরপর ১৭ বছর সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তী ১২ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৮ সালে খুলনা-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে বিজয়ীও হন তিনি। তবে তার দীর্ঘ রাজনীতির পথচলায় একনায়কতন্ত্র ও পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও বারবার এসেছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি থেকে তাকে এবং তার অনুসারীদের বাদ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাকে শোকজ করা হয় এবং বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ ঘটনার পর থেকেই তিনি কিছুটা নীরব থাকলেও গত কয়েক মাস ধরে আবার সক্রিয় হচ্ছেন। আলাদা ব্যানারে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ, জাতীয় দিবস উদযাপন এবং দলীয় সভা-সমাবেশে উপস্থিতি তার রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।
বর্তমানে খুলনা-২ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে চলা জল্পনার কেন্দ্রে আছেন মঞ্জু। বর্তমান মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিনও মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন। এই অবস্থায় মঞ্জুর অনুসারীরা আশাবাদী, দলের পরবর্তী সিদ্ধান্তে তিনি পুনরায় নেতৃত্বে আসবেন এবং মনোনয়ন পাবেন। তবে মঞ্জু নিজে বলছেন, এখনই কিছু জানানোর সময় হয়নি। দলের পক্ষ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত এলে সেটি দলীয়ভাবেই জানানো হবে।
নেতাকর্মীদের একাংশ মনে করেন, খুলনার রাজনীতিতে মঞ্জুর অভিজ্ঞতা, সাংগঠনিক দক্ষতা ও দীর্ঘ সময়ের ত্যাগ তাকে এখনো একজন গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিক করে রেখেছে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দলের উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের ওপর। এই মুহূর্তে তার প্রত্যাবর্তনের গুঞ্জন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার গতিবিধি বিষয়টিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে খুলনা বিএনপির রাজনীতি এখন এক উত্তেজনাপূর্ণ অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সকলের নজর এখন দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও পরবর্তী ঘোষণার দিকে।