খুলনা ডেস্ক:
খুলনার তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) শূন্য অবস্থায় রয়েছে, যার ফলে শিক্ষা কার্যক্রমসহ প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে দেখা দিয়েছে চরম অচলাবস্থা। এর মধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সর্বশেষ বেসরকারি নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ভিসিবিহীন হয়ে পড়েছে।
সবচেয়ে সাম্প্রতিক ঘটনায়, নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসি অধ্যাপক ড. শেখ মোঃ এনায়েতুল বাবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, এটি চ্যান্সেলরের কাছে জমা দেওয়ার কথা। পদত্যাগের পেছনে ছাত্র আন্দোলন, দুর্নীতির অভিযোগ, ও প্রশাসনিক ব্যর্থতাসহ একাধিক কারণ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান অভিযোগ ও অস্থায়ী ক্যাম্পাসে কার্যক্রম পরিচালনার বিরুদ্ধেও ছিল শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ।
এদিকে, গত ২২ মে থেকে কুয়েট এবং ৪ মে থেকে খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও ভিসিবিহীন অবস্থায় রয়েছে। কুয়েটের ক্ষেত্রে ভিসি নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে নতুন ভিসি নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এই দীর্ঘ সময় ধরে আর্থিক স্বাক্ষরের ক্ষমতা না থাকায় কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
খুলনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মাহবুবুর রহমান দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটি কার্যত প্রশাসনিক নেতৃত্বহীন। বর্তমান রেজিস্ট্রার রুটিন দায়িত্বে থাকলেও তার হাতে আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা নেই। ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বোনাস এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। এতে জুন ক্লোজিংয়ের সময় আরও ভয়াবহ আর্থিক সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ প্রকল্প ২০২৪ সালে শুরু হলেও ভিসি এবং প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ না হওয়ায় ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে অবকাঠামো নির্মাণসহ কোনো কাজই তেমন অগ্রগতি পায়নি। যদিও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা থেকে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (NOC) নেওয়া হয়েছে, তবে পরিকল্পনা কমিশনের জিও (GO) ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বড় ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে।
নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ভিসির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের একাধিক অভিযোগ ছিল। ছাত্রজীবনে আওয়ামী ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলেছিল বলে দাবি উঠেছে। যদিও আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন তিনি, কিন্তু রেজিস্ট্রার এখনো পদে বহাল রয়েছেন, যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
এই পরিস্থিতি খুলনার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে বাজেট বরাদ্দ, প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষক নিয়োগ, এবং শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম সবই বর্তমানে হুমকির মুখে। সংশ্লিষ্টদের মতে, জরুরি ভিত্তিতে ভিসি নিয়োগ ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে বণ্টন না হলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হবে এবং উচ্চশিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।