অনলাইন ডেস্ক
‘পুরো এক সপ্তাহ গাড়ি চালিয়ে মালিক দিছে এক হাজার টাকা। হেলপাররে দিছি ৩০০ টাকা। আমার পকেটে ৭০০ টাকা। এ দিয়ে কেমনে স্ত্রী-সন্তানসহ ৪ জনের সংসার চালামু? সরকার কি এইডার খোঁজ রাখে?’
কথাগুলো বলছিলেন ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক রতন আলী। সোমবার (১৫ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নতুনবাজার মোড়ে কোটা সংস্কার দাবিতে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় আটকা পড়েন তিনি। টানা ৬ ঘণ্টা সেখানেই বসে।
রতন আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে যে আমরা আটকে আছি, এখন পুলিশও আইলো। কেউ এক গ্লাস পানিও দিলো না। না খেয়ে গাড়ির দরজা লাগিয়ে বসে আছি। পকেটে টাকাও নেই যে কিছু কিনে খাবো।’
শুধু রতন আলী নন, তার মতো কয়েকশ বাসচালক নতুনবাজারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে আটকা পড়েছেন। তারা সবাই ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানেই ঠাঁয় বসে।
রাইদা পরিবহনের চালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সকালের প্রথম ট্রিপ ছিল। প্রথমেই এসে আটকা পড়ছি। দুইটা মিনিট আগে আসলে বেরিয়ে যেতে পারতাম। এখন সেই ১১টা ২৫ মিনিট থেকে বসে আছি। ভাড়া না মারলে তো মালিক আমাগো টাকা দেবে না। খালি হাতে ফিরতে হবে।’
এদিকে, লোকাল বাসগুলোর যাত্রীরা নেমে গেলেও বিপাকে পড়েছে দূরপাল্লার বাসগুলো। আব্দুল্লাহপুর থেকে ছেড়ে আস চুয়াডাঙ্গা অভিমুখী পূর্বাশা পরিবহন শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে নতুনবাজারে আটকা পড়েছে। এ বাসে ১৪ জন যাত্রী রয়েছেন। তারা ১ হাজার ২০০ টাকা করে টিকিট নিয়েছেন। এখন নেমেও যেতে পারছেন না, আবার দীর্ঘক্ষণ বসে থেকেও বিরক্ত।
সজীব হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘এখানে প্রায় ৬ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে। অথচ আমার এ সময়ে চুয়াডাঙ্গায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। ঢাকায় চাকরি করি। মা অসুস্থ, এজন্য বাড়ি যাচ্ছি। ১ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে টিকিট নিয়ে এখন বাস থেকে নেমে যাওয়া আমার জন্য কষ্টসাধ্য। এজন্য বাধ্য হয়ে বসে আছি।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে সোমবার আন্দোলনের নেমেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। দুপুর ১২টার দিকে নতুনবাজার মোড়ে কুড়িল-রামপুরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তারা সেখানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন।
এতে অংশ নিয়েছেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীরা।
এদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নতুনবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন।