শনিবার, জুলাই ১৯, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * সংসারের ভরসা ছিল ইমন, গোপালগঞ্জের সহিংসতায় ঝরল ১৭ বছরের প্রাণ   * মেহেরপুরের গাংনীতে টানা বৃষ্টিতে সড়ক ভাঙন, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি   * ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও ৯৪ জনের প্রাণহানি   * ফরিদপুরের পদযাত্রায় অংশ নিতে খুলনা ত্যাগ করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা   * গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে নিহত ৩   * গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলা, ১৪৪ ধারা জারি করল প্রশাসন   * গোপালগঞ্জে পৌঁছেছে এনসিপি নেতারা, পথে উত্তেজনা ও হামলার ঘটনা   * নির্বাচন কমিশনের শিডিউল তালিকায় ‘নৌকা’ ফেরায় আসিফ মাহমুদের তীব্র সমালোচনা   * সচিব পদে পদোন্নতি পেয়ে দুদকের দায়িত্বে মোহাম্মদ খালেদ রহীম   * প্রযুক্তির ছায়ায় ম্লান খুলনার ঐতিহ্যবাহী ক্লাব জীবন  

   অর্থ-বাণিজ্য
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয়
  Date : 25-06-2024
Share Button

অনলাইন ডেস্ক

৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে জুন তথা অর্থবছরের শেষ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় করতে হবে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলার। কিন্তু এর আগে কখনও একক মাসে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলার আয় হয়নি। ফলে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে। ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কোনোভাবেই এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয়।

বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিরতা, রপ্তানি গন্তব্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতিক সংকট এবং উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে চলতি অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা দুরূহ হবে বলে মতামত ব্যক্ত করেন ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা।

চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের জন্য সরকার পণ্য রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে আয় হয়েছে ৫ হাজার ১৫৪ কোটি ২৭ লাখ ডলার, যা ৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ কম। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জুন মাসের রপ্তানি আয় হতে হবে ১ হাজার ৪৫ কোটি ডলার।

রপ্তানিকারক ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বরং ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাই কঠিন হবে। আবার ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হলেও তা যৎসামান্য হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তারা।

প্রধান প্রধান রপ্তানি খাতগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে। এমনকি অনেক খাতের প্রথম ১১ মাসের প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক শিল্প রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম আয় করেছে। ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত আয় করেছে ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলার, অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭৪৭ কোটি ডলার। পূর্ণ অর্থবছরের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ২২৭ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নিম্নতম মজুরি বাড়ার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু পোশাক পণ্যের দাম বাড়েনি বরং কমেছে ইউনিটপ্রতি মূল্য। অন্যদিকে, পোশাক আমদানিকারকরা আগের তুলনায় কম পণ্যের আদেশ দিচ্ছেন। ফলে রপ্তানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি।- ফজলে শামীম এহসান, সহ-সভাপতি, বিকেএমইএ

হোম টেক্সটাইল থেকে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১০৯ কোটি ডলার। ১১ মাসে আয় হয়েছে ৭৭.৬ কোটি ডলার যা উক্ত সময়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম।

তৃতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে ১৪ দশমিক ১৭ শতাংশ। ১২২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় করেছে ৯৬ কোটি ১৪ লাখ ডলার।

প্রধান প্রধান রপ্তানি খাতের মধ্যে বেশিরভাগই নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও কৃষি ও কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। জুলাই-মে মাসে কৃষিপণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। পূর্ণ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ৯৩ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের বিপরীতে ১১ মাসেই আয় হয়েছে ৮৪ কোটি ৬৩ লাখ ডলার।

প্লাস্টিক পণ্যের রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ১১ দশমিক ০১ শতাংশ। ১১ মাসে আয় হয়েছে ২২ কোটি ২২ লাখ ডলার। পূর্ণ অর্থবছরের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৫ লাখ ডলার।

পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় নেতিবাচক ধারায় রয়েছে। ১১ মাসে আয় হয়েছে ৭৮ কোটি ৪৬ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ কম।

নন লেদার জুতার আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি রয়েছে। জুলাই-মে মাসে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় ৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি। তবে এটি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।
হিমায়িত ও জীবিত মৎস্য খাত থেকে রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পূর্ণ অর্থবছরের ৪৭ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১১ মাসে আয় হয়েছে ৩৪ কোটি ৫ লাখ ডলার।

যা বলছেন অংশীজনরা
রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কি না সেই প্রশ্নে যাওয়ার আগে চলতি অর্থবছর রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি থাকবে কি না তা নিয়ে ভাবতে বলছেন অংশীজনরা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নিম্নতম মজুরি বাড়ার কারণে তৈরি পোশাক শিল্পের উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু পোশাক পণ্যের দাম বাড়েনি বরং কমেছে ইউনিটপ্রতি মূল্য। অন্যদিকে, পোশাক আমদানিকারকরা আগের তুলনায় কম পণ্যের আদেশ দিচ্ছেন। ফলে রপ্তানি আয়ে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়নি বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।

বেশ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক পণ্যের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। ফলে তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।- ড. আহসান এইচ মনসুর, নির্বাহী পরিচালক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট

ফজলে শামীম এহসান বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেয়ে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা ধরে রাখাই কঠিন। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নতুন অর্থবছরে কীভাবে রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়। এজন্য সরকারকে বাজেট পাস করার আগে রপ্তানিবান্ধব কিছু উদ্যোগ যুক্ত করা এবং কিছু প্রস্তাবিত কর প্রত্যাহার করতে হবে।

বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এবং নতুন নতুন মার্কেট খুঁজে বের করতে প্রণোদনা দিতে হবে। সেই সঙ্গে উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে বলে দাবি জানান এ ব্যবসায়ী নেতা।

তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিকারকরা জানান, প্রতিযোগীদের সঙ্গে মূল্য সক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে এ মুহূর্তে দরকার গ্যাস ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের চাহিদা কমার কারণে রপ্তানি আয়ে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

‘পরিবেশবান্ধব করার জন্য রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা চামড়া শিল্পকে সম্পূর্ণভাবে পরিবেশবান্ধব করতে পারিনি। পরিবেশ রক্ষায় যে নিয়মকানুন মেনে চলতে হয় তা পরিপালনে ব্যর্থতার কারণে বৈশ্বিক ক্রেতারা পণ্য নিতে আগ্রহী নন। কেউ কেউ আবার ভালো দাম দিতে চান না। ফলে এ খাত থেকে আয় নিম্নমুখী।’

‘তবে আমরা আশাবাদী আগামী অর্থবছরে টার্গেট অর্জন করতে পারবো। এজন্য সরকার এবং শিল্পের মালিকদের একত্রে কাজ করতে হবে, বিশেষ করে দূষণ রোধ ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে’, বলছিলেন বিটিএ নেতা।

‘বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা বর্তমানে কিছুটা অস্থির, যার প্রভাব রয়েছে আমাদের অর্থনীতির ওপরে, বিশেষ করে রপ্তানি খাতে। বেশ কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতির কারণে পোশাক পণ্যের চাহিদা কমেছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রেতারা কার্যাদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণশীল মনোভাব দেখাচ্ছে। ফলে তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’

তবে অবস্থার কিছুটা উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং শিগগির রপ্তানি ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেন এ অর্থনীতিবিদ।

‘আমি মনে করি আগামী বছর রপ্তানি আয়ে ভালো প্রবৃদ্ধি হবে। তবে এজন্য প্রয়োজন ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়ন এবং নতুন পণ্যের উদ্ভাবনের প্রতি নজর দেওয়া। আমাদের রপ্তানি বহুমুখীকরণ এখন অতীব জরুরি’ মন্তব্য করে আহসান এইচ মনসুর রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সব খাতে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং পণ্য বহুমুখীকরণের সুপারিশ করেন।



  
  সর্বশেষ
সংসারের ভরসা ছিল ইমন, গোপালগঞ্জের সহিংসতায় ঝরল ১৭ বছরের প্রাণ
মেহেরপুরের গাংনীতে টানা বৃষ্টিতে সড়ক ভাঙন, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনে আরও ৯৪ জনের প্রাণহানি
ফরিদপুরের পদযাত্রায় অংশ নিতে খুলনা ত্যাগ করেছেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা

প্রধান সম্পাদক: মতিউর রহমান , সম্পাদক: জাকির হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক এসএম আবুল হাসান। সম্পাদক কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড, ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২০১৯ ফকিরাপুল , ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: জামান টাওয়ার (৪র্থ তলা) ৩৭/২ পুরাণা পল্টন, ঢাকা ১০০০
ফোন: ০১৫৫৮০১১২৭৫, ০১৭১১১৪৫৮৯৮, ০১৭২৭২০৮১৩৮। ই-মেইল: bortomandin@gmail.com, ওয়েবসাইট: bortomandin.com