খুলনা ডেস্ক:
বিএনপি সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এমনই মন্তব্য করলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার সকালে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপিকে ‘সংস্কারবিরোধী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা একটি মহলের পরিকল্পিত অপপ্রচার। এই প্রচার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রকৃত সত্যকে আড়াল করার প্রয়াস মাত্র।
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি বহু আগেই ভিশন ২০৩০, ২৭ দফা, ৩১ দফা এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলের আলোচনা এবং সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রস্তাবেও তারা সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। তার ভাষায়, দীর্ঘ ১৫ বছরের গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই বিএনপি নির্বাচন ও আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনায় আগ্রহী। কোনো ষড়যন্ত্র বা বিপ্লব নয়—শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক রূপান্তরই তাদের লক্ষ্য।
দুদক সংস্কার কমিশনের ৪৭টি প্রস্তাবের মধ্যে বিএনপি ৪৬টিতে একমত হয়েছে, শুধুমাত্র একটি সুপারিশে আদালতের অনুমতির বিদ্যমান প্রক্রিয়া বজায় রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। একইভাবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৮৭টিতে সরাসরি, ৫টিতে আংশিক এবং মাত্র ৫টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে। বিচার বিভাগীয় সংস্কারের ৮৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টিতে আংশিক একমত এবং ১৮টিতে গঠনমূলক ভিন্নমত পোষণ করেছে বিএনপি।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের আলোচনায়ও সক্রিয় বিএনপি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিয়েছে। বিশেষ করে ৭০ অনুচ্ছেদ এবং প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের প্রস্তাবে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার স্বার্থে সমর্থন দিয়েছে, যদিও এই ধরণের বিধান বিশ্বের অধিকাংশ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নেই। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারেও বিএনপি ১৪১টি প্রস্তাবে একমত, ১৪টিতে আংশিক এবং ৬৪টিতে ভিন্নমতসহ একমত প্রকাশ করেছে। ২৪টি প্রস্তাবে তারা একমত হতে পারেনি, যা তাদের মতে বাস্তবায়নযোগ্য নয় বা সাংবিধানিকভাবে সীমাবদ্ধ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এসব ভিন্নমত মানেই সংস্কারের বিরোধিতা নয়; বরং কার্যকর সংস্কার নিশ্চিত করতে যুক্তিগ্রাহ্য অবস্থান। তার মতে, জনগণের নির্বাচিত সংসদ এবং সরকারকে দুর্বল করে তোলার যে কোনো প্রস্তাব গণতন্ত্রবিরোধী এবং তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তিনি সতর্ক করে দেন, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দিলে যেমন ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি হয়, তেমনি নির্বাচিত কাঠামোকে দুর্বল করলেও রাষ্ট্র ভেঙে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠায় বিএনপি আন্তরিক। কমিশনের প্রস্তাবগুলোর বেশিরভাগের সঙ্গে একমত হয়ে তারা প্রমাণ করেছে, দলটি সংস্কারের পক্ষে। তবে এমন কোনো পরিবর্তন যা জনগণের অধিকার ও প্রতিনিধিত্বকে খর্ব করে, তাতে তারা রাজি নয়।
এদিনের সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ ও নজরুল ইসলাম খান। সংবাদ সম্মেলনের সারবত্তা একটাই বিএনপি সংস্কারবিরোধী নয়, বরং এটি একটি বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার অংশ, যার উদ্দেশ্য জনমতকে ভুল পথে পরিচালিত করা। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট, বিএনপি রাজনৈতিক সংস্কারে অংশগ্রহণ করে গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে চায় কিন্তু তা হতে হবে বাস্তবতা ও গণমানুষের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।