খুলনা ডেস্ক:
শ্রীলঙ্কার মাঠে বাংলাদেশের পুরনো তারকাদের কদর যেন এখনো অটুট। স্থানীয় ক্রিকেট ভক্তদের আগ্রহ বেশি আশরাফুল, মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহদের নিয়েই। এখনো শোনা যায় প্রশ্ন—আশরাফুল কি খেলেন? সাকিব কোথায়? মাশরাফি কি রাজনীতিতে ব্যস্ত? চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে কেন সরানো হলো? অথচ বাংলাদেশ দলের বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে সে অর্থে তেমন আগ্রহ নেই। খেলোয়াড়দের চেহারা আর নাম মিলিয়ে নিতে পারেন না অনেকেই।
তবে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় বদলে দিয়েছে সেই চিত্র। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। শ্রীলঙ্কান দর্শকরা এসেছিলেন নিজেদের দলের জয় দেখতে, কিন্তু ফিরে গেছেন বাংলাদেশের উদ্যমী পারফরম্যান্স দেখে। নতুনদের মধ্যেও যে জয়ের খিদে থাকে, তা দেখালেন তানভীর ইসলাম, শামীম হোসেন, তানজিম হাসান, এমনকি সমালোচনার মাঝেও দ্যুতি ছড়ালেন মোস্তাফিজুর রহমান।
তানভীর তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ৫ উইকেট তুলে নিলেন। প্রথম ২ ওভারে ২২ রান দিয়েও ফিরে এসেছেন দুর্দান্তভাবে। অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের সাহসী ও ইতিবাচক পরামর্শই যেন তাকে অনুপ্রাণিত করেছে। শামীম হোসেনও বল হাতে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ উইকেট, লঙ্কান অধিনায়ক আসালাঙ্কার। এই উইকেটটাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
আর মোস্তাফিজ? শুরুটা হতাশাজনক হলেও অভিজ্ঞতার সঠিক প্রয়োগ ঘটান ঠিক সময়েই। জানিথ লিয়ানাগেকে দুর্দান্ত স্লোয়ার ডেলিভারিতে কাবু করে ফিরিয়ে দেন প্যাভিলিয়নে, যা কার্যত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেয় বাংলাদেশের হাতে।
এই জয় শুধু ম্যাচ জয় নয়, এটি ছিল আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ারও মুহূর্ত। যখন দলের পরিচিত মুখের সংখ্যা কম, তখন প্রত্যেকটি পারফরম্যান্সই পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। তানজিম হাসান ও মোস্তাফিজ শেষ উইকেট জুটিতে যে ৩০ রান যোগ করেছেন, সেটাই বাংলাদেশকে এমন এক জায়গায় নিয়ে যায়, যেখান থেকে লড়াই করা যায়, জয় আনা যায়।
প্রেমাদাসার গ্যালারিতে থাকা শ্রীলঙ্কান দর্শকরা হয়তো এ পর্যন্ত সাকিব-মাশরাফিদের নামই জানতেন, কিন্তু এখন তারা নতুন নামগুলোও মনে রাখবেন—তানভীর, শামীম, তানজিম। বাংলাদেশ দলে নতুন তারকারা তৈরি হচ্ছে। তারকা হওয়ার পথে প্রথম ধাপ পার করেছেন তারা। এখন দরকার ধারাবাহিকতা, সাহস, আত্মবিশ্বাস—আর তাতেই হয়তো আগামী দিনে এই নামগুলোও হয়ে উঠবে সমান আলোচিত।
বাংলাদেশ এখন ট্রানজিশন পর্যায়ে রয়েছে, যেখানে নতুনরা ধীরে ধীরে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। এই যাত্রাপথ সহজ নয়, কিন্তু প্রতিটি লড়াই জয়ের খিদে থাকলেই একেকজন হয়ে উঠবেন নতুন দিনের নায়ক। শ্রীলঙ্কায় সেই সম্ভাবনার আলো দেখা গেছে, এখন সেটা ধরে রাখাই মূল চ্যালেঞ্জ।