খুলনা ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার স্বপ্ন ছিল অনেক তরুণ-তরুণীর জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিবর্তনে সেই স্বপ্ন এখন অনেকের কাছে রূপ নিচ্ছে এক দুঃস্বপ্নে। ২৮ মে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণায় জানানো হয়, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা সাক্ষাৎকার আপাতত অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে ভিসা প্রক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচাইয়ের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে, যা নতুন এক অনিশ্চয়তার সূত্রপাত করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এমন কঠোর সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর। ভারতীয় এক শিক্ষার্থী, যিনি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন, জানালেন—একদিন সকালে ঘুম ভেঙেই তিনি জানতে পারেন তার ভিসা আর হচ্ছে না। সেই হতাশা যেন তার কণ্ঠে ঝরে পড়ে: “আমরা অনেক পরিশ্রম করে এখানে পৌঁছাই। এভাবে কেউ নিয়ম বদলে আমাদের স্বপ্ন ভেঙে দিতে পারে না।”
এই পরিবর্তনের অভিঘাত শুধু একজনের ওপর নয়। বহু শিক্ষার্থী এখন তাদের পরিকল্পনা বদলে অন্য দেশের দিকে তাকিয়ে। চীন থেকে আসা শিক্ষার্থী চেন বলেন, “আমি ভাবছি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া উচিত কি না। ইংল্যান্ড থেকেও একটা ভালো অফার আছে। হয়তো সেখানেই চলে যাব।”
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপ শুধু শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিজীবন নয়, দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। গত অর্থবছরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি অবদান রেখেছে এবং প্রায় চার লাখ চাকরির সঙ্গে তারা যুক্ত। এই ধারায় ছেদ পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন আর্থিক সংকটে পড়বে, তেমনি বন্ধ হয়ে যেতে পারে ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি গুরুতর সংকট ডেকে আনবে। অনেক ক্ষেত্রে মাস্টার্স বা গবেষণাধর্মী প্রোগ্রামে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীই বিদেশি। তাদের ছাড়া গবেষণা থমকে যাবে, উদ্ভাবনের গতি কমবে। যুক্তরাষ্ট্রের বহু স্টার্টআপের পেছনে ছিলেন এসব আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী। নতুন প্রযুক্তি আর উদ্যোগের যে অগ্রগতি ছিল, তা অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
তবে কেবল অর্থনীতি বা গবেষণাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাসগুলোর বৈচিত্র্য, সংস্কৃতিগত আদান-প্রদান এবং বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গির যে সমৃদ্ধ চিত্র ছিল, তাও ভেঙে যাবে। ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতি হয়তো রাজনীতিতে জনপ্রিয়, কিন্তু শিক্ষার ক্ষেত্রে তা বিপরীত প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। প্রশ্ন উঠছে—একটা দেশের ভবিষ্যৎ যদি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মই বেছে না নেয়, তাহলে সে দেশ কীভাবে সামনের দিনগুলো গড়ে তুলবে? শিক্ষার্থীদের সেই প্রশ্ন এখন শুধু হতাশার নয়, বরং বিশ্বায়িত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক সতর্ক সংকেত।