মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০২৫
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * সুন্দরবন রক্ষায় সরকারের নতুন পদক্ষেপ: ১০ কিলোমিটারে শিল্পায়ন নিষিদ্ধ   * সুন্দরবন থেকে উদ্ধার ৭৮ ভারতীয় মুসলিম: গুজরাটের বস্তি থেকে পুশইন, আশ্রয় নেয় বাংলাদেশের বন অফিসে   * ৮২% নার্সের ঘাটতি, চিকিৎসা সেবায় নেমেছে গুণগত মান   * কুষ্টিয়ায় ৪০ দেশি শালিক পাখি উদ্ধার   * ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধেরই অংশ: ভারতীয় বিমান বাহিনী   * তীব্র যানজটে নগরবাসী, সড়ক অবরোধ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ   * জাফরুল্লাহর আস্থাভাজন আ`লীগের দোসর শহীদুলের কর্মকাণ্ডে অতিষ্ট ভাঙ্গাবাসী   * দিনাজপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে নারীর মৃত্যু   * অমৃতসরে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরলেও রেড অ্যালার্ট বহাল   * চট্টগ্রাম কাস্টমসে নিলামে উঠেছে ৩০ মিক্সার লরি  

   অপরাধ-দূর্নীতি
অপারগ প্রতিষ্ঠানের বিব্রতকর দায় বইছে আরইবি
  Date : 23-02-2023
Share Button

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক:

সঠিক সময়ে বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম সরবরাহ না দেওয়ার ফলে, পল্লী বিদ্যুৎ, বাংলাদেশ রুরাল ইলেক্ট্রিক বোর্ড (আরইবি’র) বিভিন্ন প্রকল্প দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। কিন্তু সেই অপারগ প্রতিষ্ঠানকে এজন্য সঠিক  পানিশমেন্ট না করে কৌশলী ব্যবস্থায় পার পাবার সুযোগ কেনো এ নিয়ে প্রশ্নের মূখে পড়ছে আরইবি। এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম সরবরাহে ব্যর্থ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে ‘মেসার্স মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেড’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি। এর পরও এদেরকে পূনরায় প্রায় একই ধরনের পণ্য সরবরাহে সুযোগ দিয়ে রেখেছে আরইবি।

সূত্র মতে, রংপুর, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা অঞ্চলে একাধিক প্রজেক্টেই টেন্ডার শর্তানুযায়ী ঠিক সময়ের মধ্যে কন্ডাক্টর, এসিএসআর, বার সরবরাহ দিতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। আরইবি পাঁচটি নোটিশ দিয়েছে তাদের সরবরাহ ব্যর্থতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে। ২০২১ এর জানুয়ারীর ৮ তারিখে প্রতিষ্ঠানটি আরইবির সাথে এসব সরাঞ্জাম সরবরাহের চুক্তি করে এবং চুক্তির মূল সময়সীমার পরও ১১ মাস অতিবাহিত হবার পরও ঠিক সময়ে মালামাল সরবরাহ দিতে ব্যর্থ এই প্রতিষ্ঠানকে পূণরায় নতুন প্রজেক্টে ইলেক্ট্রিক সরাঞ্জাম সরবরাহ’র জন্য সুযোগ দেওয়া উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করছেন বিজ্ঞমহল।

সূত্রমতে, (রাজশাহী রংপুর খুলনা ও বরিশাল) (২য় সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্যাকেজ নং ইজঊই/উঘঊ(ড).এ.৪৮.ষড়ঃ.১ এর বিপরীতে ১২০১৫ কিলোমিটার পড়হফঁপঃড়ৎ, অঝঈজ, নধৎব সরবরাহের নিমিত্ত ০৪.০১০২০২১ তারিখে ৬৯৬৯২১০৪০ টাকার চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী ৫০% মালামাল সরবরাহের সময়সীমা ২৯.০৩.২০২১ এবং ১০০% মালামাল সরবরাহের সময়সীমা ২৬.০৪.২০২১ তারিখে শেষ হয়েছিল। চুক্তির মূল সময়সীমার অতিরিক্ত ১১ মাসের অধিক সময় অতিক্রান্ত হলেও এর মধ্যে মাত্র ৫৩০১ কি.মি. কন্ডাক্টর সরবরাহ দিতে পেরেছিলো যার মূল্য ২৭৭০২৩০৩৭ টাকা যা চুক্তি মূল্যের ৩৯.৭৫%। অবশিষ্ঠ্য ৬০.২৫% টাকার ৬৭১৪ কি.মি. কন্ডাক্টর উ-২=২৭১৪.২৫৭ কস, উ-৩=৩৭৪৯.৭০৭ শস, উ-৬=২৫০ কস, মোট ৬৭১৪ কিলোমিটার সরবরাহ করতে পারেনি। তবে আরইবি দাবী করছে মেসার্স মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেড সর্বশেষ সময় নিয়েও ১০% মালামাল সরবরাহ দিতে ব্যর্থ ছিলো। যার বিপরীতে পিজিএল ক্যাশের ব্যবস্থা নিয়েছিলো আরইবি।

মেসার্স মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেডকে আরইবি’র দেওয়া নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, ডেলিভারী শিডিউল অনুযায়ী আপনারা সম্পুর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে সূত্র ২, ৩ ও ৬ অনুযায়ী ০৯.০১.২০২২, ২২.০২.২০২২ এবং ১০.০৪.২০২২ তারিখে সমুদয় মালামাল সরবরাহের জন্য তাগাদা দেওয়া হয় এবং সূত্র ৭ অনুযায়ী মালামাল সরবরাহের জন্য চুড়ান্ত নোটিশ ১৩.০৪.২০২২ তারিখে দেওয়া হয়েছিলো। আপনারা সূত্র ৮ এর মাধ্যমে ১০.০৪.২০২২ তারিখ থেকে ছয় মাস সময় চেয়েছিলেন। আমরা সূত্র ৯ এর মাধমে অতিরিক্ত ছয় মাস সময় বর্ধনের সুযোগ নাই মর্মে পত্রে জানিয়েছিলাম। আপনারা সূত্র ১০ এর মাধ্যমে কোভিট-১৯ এর কারণে কাঁচামাল সংকট এবং আন্তর্জাতিক বাজারে এর মূল্য বৃদ্ধির বিবেচনা নিয়ে সরবরাহ সীমা ৩০.০৬.২০২২ পর্যন্ত চেয়ে অনুরোধ করেছিলেন। চুক্তি মোতাবেক মালামাল সরবরাহের মূল সময়সীমার চেয়ে ১১ মাস (২৯৪.৬৪%) অধিক ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হওয়ায় এবং সূত্র ৭ মোতাবেক অসরবরাহকৃত মালামাল ১৩.০৪.২০২২ তারিখের মধ্যে সরবরাহের চুড়ান্ত নোটিশ দেবার পর সময়বৃদ্ধির বিবেচনা করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়েছিলো।

উক্ত প্রকল্প এ অবস্থায় সরবরাহে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটি সময় বৃদ্ধির আবেদন করলেও এবিষয়ে দুটি নোটিশে চুড়ান্ত সময়সীমার পর আর সময় বাড়ানোর সুযোগ নেই মর্মে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। আরইবি’র প্রকল্প পরিচালক অসিত কুমার ভৌমিক স্বাক্ষর করা গত বছর ১৩.০৪.২০২২ তারিখে মেসার্স মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেডকে’ চুড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। এরপরও উক্ত প্রতিষ্ঠান মালামাল সরবরাহে কাকতালিওভাবে অন্যন্য টেন্ডারে সুযোগ পাচ্ছে যা আরইবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

নোটিশে চুক্তির সমুদয় সরবরাহে ব্যর্থতায় এঈঈ ঈষধঁংব ৪০.১(র) অনুযায়ী চুক্তি বাতিলসহ চুক্তি মোতাবেক অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা উল্লেখ করা হয়েছিলো। এছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠানকে সঠিক সময়ে মালামাল সরবরাহ না দেবার দায়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিলো আরইবি’র যা করা হয়েছিলো। জানা গেছে, এর বিপরীতে পরবর্তী কঠোর কোনো পদক্ষেপ না নিতে পারে এজন্য আরইবির বিরুদ্ধে মামলা করে মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স।
ঠিক সময়ে সরবাহে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে পূনরায় সুযোগ দেবার পায়তারার বিষয়ে জানতে চাইলে আরইবি’র প্রজেক্ট ডিরেক্টর রহিম মল্লিক জানান, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। এটি আমার প্রজেক্টে হয়নি। অসিত কুমার ভৌমিকের সাথে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বশেষ ১০% মালামাল তারা দিতে পারেনি। এজন্য পিজিএলের মাধ্যমে তাদের জামানত ক্যাশ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিলো। প্রজেক্টের সময়সীমা অনেক বেশি অতিক্রান্ত হবার পরও যে প্রতিষ্ঠান বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম সরবরাহ দিতে ব্যর্থ তাদের ব্লাক লিস্ট না করে অন্যান্য প্রজেক্টে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কেনো প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এবিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে আরইবির পিএনডি মেম্বার মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি জানি না। তবে মালামাল সরবরাহ না দিতে পারলে সেধরনের প্রতিষ্ঠানের উচিত টেন্ডারে অংশগ্রহণ না করা। অপরাধের জন্য আরইবি প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছে আর এর বিপরীতে মামলা করে দেওয়া অনুচিত এবং বিব্রতকর বলে মনে করি আমরা।

এ বিষয়ে জানতে মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেড এর ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) কর্ণেল (অব.) ইঞ্জিনিয়ার একেএম ইসহাক বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে সঠিকভাবে কিছু জানিনা। এমডি মোস্তফা কামালের কাছে জেনে বলতে হবে। প্রতিষ্ঠানের এজিএম জাভেদ বলেন, আমরা কেনো মামলা করেছি সেটা আরইবির কাছে জেনে নিন। মালামাল সময়মত সরবরাহ দিতে পারবেন না এটা জেনেও কেনো টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন এবং বারবার সময় নিয়ে প্রজেক্ট দীর্ঘায়ন করে দেশের ক্ষতি করছেন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, অন্যায় হলে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা করুন। প্রতিষ্ঠানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর এটি এম মিজানুর রহমান বলেন, আমি শুনেছি একটি টেন্ডারে ঠিক সময়ে মালামাল না দেওয়ার কারণে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারেবা না।তবে আমরা মামলা কেনো করেছি সেটাতো বলা যাবেনা। স্বাধীন দেশে সবারই আইনে যাবার াধিকার আছে। এ বিষয়ে জানতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোস্তফা কামালকে পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, আরইবির নেওয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পিজিএলের মাধ্যমে তাদের জামানত ক্যাশ করার বিরুদ্ধে মামলা করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিজ্ঞমহল মনে করছে এদের দোষ ঢাকতে এবং পরবর্তী অন্য কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিতে পারে এজন্য মেঘনা স্টার ক্যাবল আরইবির বিরুদ্ধে মামলা করেছে।

অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশে ‘মেঘনা স্টার ক্যাবলস এন্ড ইলেক্ট্রিক্যাল এপলায়েন্স লিমিটেড’ ইপিজেড এলাকায় কাঁচামাল আমদানি সহ বেশ কিছু বিষয়ে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে। এই সেক্টরে এর ফলে এক ধরনের অসম প্রতিযোগীতা সৃষ্টি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে টেন্ডারে এধরনের সরাঞ্জাম সরবরাহ দেবার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক বাজার মূল্যের চেয়েও কম রেট দেখানো তাদের জন্য সম্ভব হতে পারে। কিন্তু এর পরও আরইবি এই প্রতিষ্ঠানকে ব্লাক লিস্ট না করে এত বড় অপরাধের বিপরীতে শুধু জামানত ক্যাশ করে কার ইশারায় অন্যান্য নতুন টেন্ডারে সরঞ্জাম সরবরাহের সুযোগ করে দিচ্ছে।

 



  
  সর্বশেষ
বর্ণাঢ্য বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা শেষ হলো
ট্রান্সশিপমেন্টের বাইরে: ভারতের মাধ্যমে রপ্তানি কার্গোর প্রকৃত কারণগুলো খতিয়ে দেখা
কেওয়াটখালী সেতু প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে ভয়ানক অনিয়ম
সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন চান পণ্য পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা

প্রধান সম্পাদক: মতিউর রহমান , সম্পাদক: জাকির হোসেন, নির্বাহী সম্পাদক এসএম আবুল হাসান। সম্পাদক কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড, ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত এবং বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২০১৯ ফকিরাপুল , ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: জামান টাওয়ার (৪র্থ তলা) ৩৭/২ পুরাণা পল্টন, ঢাকা ১০০০
ফোন: ০১৫৫৮০১১২৭৫, ০১৭১১১৪৫৮৯৮, ০১৭২৭২০৮১৩৮। ই-মেইল: bortomandin@gmail.com, ওয়েবসাইট: bortomandin.com