খুলনা ডেস্ক:
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কান-এ বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে নির্মাতা আদনান আল রাজীবের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘আলী’-এর মাধ্যমে। ৭৮তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকদের রায়ে ‘স্পেশাল মেনশন’ পাওয়ায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র মূল প্রতিযোগিতা বিভাগে স্বীকৃতি পেল। নির্মাতা রাজীবের মতে, এই সম্মান কেবল ব্যক্তি অর্জন নয়, বরং একটি জাতির শিল্প-সাংস্কৃতিক সম্ভাবনার দিকনির্দেশনাও।
রাজীব জানান, এমন একটি সময় বাংলাদেশ রাজনৈতিক অস্থিরতায় রয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক এই অর্জন দেশের মানুষকে আশার বার্তা দিবে। কান উৎসবে নিজের দেশের নামের সঙ্গে নিজের নাম উচ্চারিত হওয়াটা তার কাছে স্বপ্নের চেয়েও বড়। পুরস্কার ঘোষণার মুহূর্তে নিজেকে স্তব্ধ ও অদ্ভুত অনুভূতির মধ্যে আবিষ্কার করেন তিনি। হলভর্তি করতালির শব্দ তাকে আবেগে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, যা তিনি সারাজীবন মনে রাখবেন।
‘আলী’ একটি ছোট ছেলের গল্প হলেও এর ভেতর রয়েছে মানবিকতার এক শক্তিশালী বার্তা। সিনেমাটি উৎসর্গ করা হয়েছে সেই সব মানুষের জন্য, যারা সমাজের নানা চাপে নিজেদের কথা প্রকাশ করতে পারেন না। রাজীব চান, তার এই কাজ মানুষের আত্মাকে জাগিয়ে তুলুক, প্রশ্ন করুক, আর ভাঙুক চাপা পড়ে থাকা প্রতিবন্ধকতাগুলো।
চলচ্চিত্রটির পেছনে ফিলিপাইনের সহ-প্রযোজক দলের অবদান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের পোস্ট-প্রোডাকশন সুবিধার সীমাবদ্ধতার কারণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল বলে জানান তিনি।
স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রকে রাজীব শুধুমাত্র ‘প্রস্তুতির মাধ্যম’ হিসেবে দেখেন না। তার মতে, এটি একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী শিল্পরূপ, যার মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই গভীর বার্তা দেওয়া যায়। নতুন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করা, বাজেট সীমাবদ্ধতা ও লোকেশন ব্যবস্থাপনার চ্যালেঞ্জ থাকলেও টিমের আন্তরিকতায় কাজটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, ‘আলী’-এর মতো সিনেমা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে দেশের তরুণ নির্মাতাদের অনুপ্রাণিত করবে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। ভবিষ্যতে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে তার। তবে তিনি চান সময় নিয়ে, ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে, আন্তর্জাতিক মানের গল্প নিয়ে কাজ করতে।
আদনান আল রাজীব মনে করেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র এখন একটি রেনেসাঁর সময় পার করছে। নির্মাতারা এখন আরও সাহসী, বৈচিত্র্যময় ও আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। কানে ‘আলী’র স্বীকৃতি শুধু একটি সিনেমার জয় নয়, বরং বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান হবার এক বড় পদক্ষেপ।