- বিএডিসি প্রায় ২০০০ জনকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১জন করে শুধু নন ইউরিয়া সারের ডিলারশীপ দিয়েছে ।
- বিসিআইসি’র ডিলারশীপের সংখ্যা ৫০০০ জনেরও বেশি।
- ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিলারশীপ দখলদারিত্বে একই পরিবারে ৭ জনও লাইসেন্স পেয়েছে।
- বিএডিসি গোডাউন থেকে তাদের ডিলারদের আমদানি, দেশীয় ইউরিয়া কোনোটাই দেয় না।
- কারসাজি করে বিসিআইসি’র ইউরিয়া ডিলারদের নন আমদানি ও দেশীয় ইউরিয়া সার দিয়ে দেয়।
- সিন্ডিকেট সারের দাম বাড়াচ্ছে, ফলে বাড়ছে সংকট ও কৃষি পণ্যের দাম।
কামরুজ্জামান মিল্টন:
কৃষি খাতে সবচেয়ে বেমি ব্যবহার হওয়া ইউরিয়া সার বিতরণে দীর্ঘ সময়ের ডিলারগত ঘাপলা, স্বার্থগত কারসাজি ও নানা অনিয়মের কারণে ৯৫০ টাকা দরের সার কৃষক পর্যায়ে বিক্রয় হচ্ছে ১৩৫০ টাকায়। অভিযোগ উঠেছে, সার বিতরণে কৃষি অফিসার, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিএডিসির করা দীর্ঘদিনের কারসাজির কারণে পরিবারতন্ত্রের সিন্ডিকেট, মধ্যস্বত্বভোগী, সুবিধাভোগী শ্রেণী প্রভৃতি তৈরি হয়ে দেশজুড়ে সারের কৃতিম সংকট ও মূল্যবৃদ্ধি সমস্যা সৃষ্টি হয়ে চলেছে।
ডিলার পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, চাহিদার কারণেই নন ইউরিয়াধারী বিএডিসি’র ডিলারদের ইউরিয়া সার কিনে বিক্রয় করতে হয়। অন্যদিকে শুধু ইউরিয়া সার পাওয়া লাইসেন্সধারী বিসিআইসি’র ডিলাররা কারসাজিগত কারণে সব ধরনের সার পেয়ে রাতারাতি বিশাল টাকার মালিক হয়ে যাচ্ছেন। কৃষককে এসব সার কিনতে হচ্ছে বেশি দামে। যে কারণে কৃষি উৎপাদনে বাড়তি ব্যায়ের কারণে কৃষিখাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিএডিসি সার বিতরণে ননইউরিয়া ডিলারশীপ শুরু করেছে ২০০০ সাল থেকে। বিসিআইসি ইউরিয়া ডিলার লাইসেন্স শুরু করেছে এরও আগে। এদের অনিয়ন্ত্রিতভাবে ডিলারশীপ দেওয়ার কারণে একই পরিবারে বা ইউনিয়নে একাধিক লাইসেন্স পেয়েছে। দেশের বহু স্থানে অনেক পরিবার বিসিআইসি’র প্রায় ৮টি পর্যন্ত লাইসেন্স দিয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, ফরিদপুর অঞ্চলে জেলা ডিলার সমিতির সভাপতি বাবুল মিয়ার ছেলে মেয়েসহ একই পরিবারে প্রায় ৬/৭টি লাইসেন্স রয়েছে। ছেলে মেয়ে বিদেশে থাকলেও এদের নামে লাইসেন্স ইস্যু হয়েছে ঠিকই এবং হরদম সরবরাহ বেচা কেনা চলছে।
বিসিআইসি আপত্তিজনক হারে সারের ডিলার দেওয়ায় পরবর্তীতে প্রশ্নের মুখে পড়লে ২০১৬ সালে এসে সমন্বয়ের নামে নাটকীয় নিয়ম সেট করে। তারা প্রতি ইউনিয়নে একটি করে ডিলারশীপের অনুমতির নিয়ম করে। কিন্তু পরিবারতন্ত্রে ডিলারশীপ দখল এবং যেসব ইউনিয়নে একাধিক সংখ্যক লাইসেন্স রয়েছে সেখানে সমন্বয় না করে সবাইকে বহাল রেখেছে ঠিকই।
কিন্তু সার বিতরণে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য, কারসাজি রয়েছে সরবরাহ ক্ষেত্রে। বিএডিসি’র লাইসেন্সধারী ননইউরিয়া ডিলারদের বিএডিসির গুদাম থেকেই দেশীয় বা আমদানী কোনো ইউরিয়া দেওয়া হয় না। কিন্তু একই গুদাম থেকে ইউরিয়া ডিলারদের দেশীয় এবং আমদানী ইউরিয়া সবই দিয়ে দেওয়া হয়, সাথে অন্যান্য নন ইউরিয়াও সারও দেওয়া হয়। ইউরিয়া লাইসেন্সধারীদের নন ইউরিয়া সার দেওয়া হলে নিয়ম অনুযায়ী নন ইউরিয়াধারীদেরও ইউরিয়া সার দেওয়া উচিৎ। সেটি করা হচ্ছে না যোগসাজস করে। অভিযোগ রয়েছে, এর সাথে জড়িত রয়েছে বিএডিসি, বিসিআইসি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা। তারা দীর্ঘ দিন ধরে বিশেষ সুবিধা পেয়ে এধরনের বৈষম্যমূলক ফর্মুলায় সিন্ডিকেট করে সার সরবরাহ দিয়ে একদিকে কৃষক ও কৃষি সেক্টরকে জটিলতার মধ্যে ফেলেছে অন্যদিকে সরকারকে অসুবিধায় ফেলার চেস্টা করছে।
বিষয়টি নিয়ে বিএডিসির চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এবিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজী হননি। প্রসঙ্গটি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিআইসির সার বিতরণ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালের পরে এক ইউনিয়নে একজনের বেশি ডিলার আমরা দিচ্ছি না। দেশে সারের কোনো ঘাটতি নেই উল্লেখ করে তিনি ডিলার, সার সরবরাহ, নীতিমালা ও অন্যান্য কারসাজির বিষয়ে সম্পুর্ণ কৃষি মন্ত্রণালয়কে দায়ী করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অনুবিভাগে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি কৃষি সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরীর বলে জানানো হয়। এ বিভাগের দায়িত্বে থাকা ড. নুরুন্নাহার চৌধুরীর কাছে কৃষি সার বিতরণে অনিয়ম অসঙ্গতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তাঁর সাথে দেখা করতে বলেন।