* চাকরিরত অবস্থায় দশ হাজার টাকার বাসায় ভাড়া থেকে নিতান্ত সাদামাঠা
জীবন যাপন করলেও অবসরে এসে হঠাৎ সম্পদের পাহাড় সমেত বেপরোয়া প্রভাব ।
কামরুজ্জামান মিল্টন:
এবার সেই ক্ষমতাধর সাবেক আমলার (উপ সচিব) হটকারিতায় দিশেহারা সেই নিরাপত্তার বিদ্যুৎ ফাঁদে আটকে নিহতের পরিবার। চলছে-তা ভিন্নখাতে নিয়ে ধামাচাপা দেয়ার জোর তৎপরতা। আর তাতে গোটা এলাকায় ছড়াচ্ছে-হঠাৎ ক্ষমতার তকমাধারী ওই আমলার ছলচাতুরি ও বিশাল বিত্তবৈভব ঘেরা নানা গুঞ্জন। যেন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে-ক্ষমতার আড়ালে থাকা “থলের বিড়াল”। উঠছে-নানা প্রশ্ন। হঠাৎ কাড়কাড়ি টাকার গরমে বেপরোয়া, কে এই ক্ষমতাধর সাবেক আমলা ? আর জবাব মেলে-নাম তার আবুল কাশেম পাটওয়ারী। তবে সচিব সাব বা পাটওয়ারী সাব বলেই পরিচিত। বাড়ি লক্ষীপুরের রামগঞ্জে। মাত্র বছর সাতেক আগে (চাকরি থাকাবস্থায়) তিনি বাসাবোস্থ সবুজবাগ সাবেক থানা ভবনের মাত্র ৫০ গজ পূর্বের ১৬৪/এ নম্বর বাড়ির ৩য় তলায় ১০ হাজার টাকায় থাকতেন ভাড়া।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় একটানা ১০বছর ‘এসেনসিয়াল ড্রাগস’র শীর্ষ পদে ছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের ডিএসও ছিলেন। তবে এমন একজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা একটা লম্বা সময় ধরে ওই বাসায় থাকলেও এর আগে কেউ তার এমন বেশামাল দাপট দেখেনি। কিন্তু অবসরে এসেই এক সাথে সাবেক সবুজবাগ থানা ভবন সংলগ্ন ২০৪ নম্বর এ্যাপার্টমেন্টের ৫ম তলার দুটি ফ্ল্যাট প্রায় তিন কোটি টাকায় কিনে এলাকার সবার নজরে আসেন ওই আবুল কাশেম পাটওয়ারী। সেই সাথে একই সময়ে কিনেন বনানী, গুলশানে বেশ কয়েকটি দামি ফ্ল্যাট। আর তারই ধারাবাহিকতায় অনেককে টেক্কা দিয়ে চড়া দামে ক্রয় করেন সবুজবাগের বাসাবোস্থ বহুল আলোচিত ওই বাড়িটিও। টুকটাক ঝামেলা ঘেরা কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বাড়িটি আয়ত্বে রেখেছিলেন তিনি। এরই মধ্যে যেমনি-এলাকার ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মোটা দান-ছদকায়ও তার নাম তালিকার উপরে ওঠে, তেমনি- মুখে মুখে ছড়ায় -ঢাকার প্রায় সব এলাকায় বাড়িসহ অভিজাত এলাকায়ই ফ্ল্যাট কেনার খবর। সেই সাথে চিটগাং’এ শত শত কোটি টাকার জমি কেনার বে-খবরটিও। আর সে বলেই দাপটি ম্যানেজার আব্দুল বাতেন (সংশোধিত) বাসেতের হেফাজতে থাকা বাড়িটিতে বিভিন্ন সময় পেতে রাখা হতো বিদ্যুতের ফাঁদ। তাতে করতেন না-আশপাশের লোকজনের কোন ধরনের অপত্তির তোয়াক্কা। শেষে তাতেই প্রাণ যায় (ফুড পান্ডার রাইডার) মোজাম্মেলের। তবে একটি সূত্র জানায়, বাহির থেকে অবৈধভাবে সংযোগ দেয়া বিদ্যুতের লাইনে স্পৃষ্ঠ হয়ে মোজাম্মেলের মৃত্যু হয়। যা কৌশলে আড়াল করা হয়েছে।
ক্ষমতাধর সাবেক আমলা আবুল কাশেম পাটওয়ারীর নিরাপত্তার নামের স্বেচ্ছাচারিতায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হয়ে ভাড়াটিয়া মোজাম্মেল (২০)’র মৃত্যুর পর সালিশে নিহতের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর সেই অনুযায়ী নগদ একলাখ টাকা দেয়াও হয়। কিন্তু লাশ দাফনের পর শুরু হয়, নয়-ছয়। ফলে ব্যাপারটি শেষে মামলা পর্যন্ত গড়ায়। সবুজবাগ থানায় একটি মামলা হয়। এরপরও একইভাবে জামিনের সময় বাদির কাছ থেকে বরাবরের মত ক্ষতিপূরণের মিথ্যা আশ্বাসে মুচলেকায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। এরপর বাদির উপর চলতে থাকে, হুমকি-ধমকি। ধামাচাপার চেষ্টায় ব্যবহার চলছে-বর্তমান রাজনীতির অনুকুলের কতিপয় শক্তি।
পরিচয় গোপন রেখে নিহত মোজাম্মেলের বাবার সাথে এ ব্যাপারে কথোপথোনে জানা যায়, এ নিয়ে কোন মামলা না করার শর্তে পাটওয়ারী ১০ লাখ টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে রাজি হন। আর শর্ত মোতাবেক এক লাখ টাকা দিয়ে লাশ দাফনের জন্য পাঠান এবং বাকি আসার পর দেয়ার আশ্বাস দেন। এরপর নয়-ছয় করে সময় পার শেষে জামিন নিতে ফের বাকি টাকা দেয়ার আশ্বাসে মুচলেকায় স্বাক্ষর নেয়া বাদির কাছ থেকে। কিন্তু জামিনের পর আবার শুরু হয়-নানা তালবাহানা।
আর এব্যাপারে জানার জন্য এ প্রতিবেদনের আগের পর্বে ম্যানেজার বাসেতের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করেও কোন জবাব মেলেনি। বরং তিনি বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। এমন কি-তার সহচর রিপন দাস ওরফে ফরমা রিপন ওরফে বাটপার রিপন নামের জনৈক জনতা ব্যাংকের পিয়নকে লেলিয়ে রিপোর্ট সংশ্লিষ্টদের মোবাইলে হুমকি-ধমকিসহ মিথ্যা অভিযোগ তুলে ব্যাপার থামাতে চেষ্টা করেন। ওই সময় বাড়ি ওয়ালা পাটওয়ারীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে এবার তিনি জানান, এসব ক্ষতিপুরণের বিষয অভিযোগটি মিথ্যা বলে দাবী করেন।আর অঢেল সম্পদের বিষয়ে জনতে চাওয়ার মধ্যেই ফোনের লাইনটি কেটে দেন।
সবুজবাগ থানার ওসি মো: ইয়াছিন আলী জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। আসামি আগাম জামিনও নিয়েছেন।
আর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)’র একটি সূত্র জানায়, ওই সাবেক আমলার জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদ থাকলে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।