অনলাইন ডেস্ক:
সৌদি আরবের সাম্প্রতিক একটি ফ্যাশন শো নিয়ে বিতর্ক চলছে। এই ফ্যাশন শো নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইসলামিক স্কলাররা। এই ফ্যাশন শোতে ‘গ্লাস ইন্সটলেশন’ অর্থাৎ কাচ দিয়ে তৈরি একটি বস্তু দেখানো হয়েছে যা পবিত্র কাবা শরিফের মতো দেখতে। মূলত এটা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত।
সৌদি আরবের বার্ষিক সাংস্কৃতিক উৎসব ‘রিয়াদ সিজন’-এ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মূলধারার আরব গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সমালোচকদের বক্তব্য, এখানে ইসলামের পবিত্রতম স্থানের অবমাননা করা হয়েছে।
তবে সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। গুজব রুখতে কাজ করে এমন একটি সৌদি সংগঠন জানিয়েছে, ফ্যাশন শোতে রাখা যে কাঠামোকে ঘিরে এত বিতর্ক, তা কাচের তৈরি একটি ঘনকাকৃতির বস্তু মাত্র।
বিষয়টি নিয়ে শোরগোল হওয়ার পর সৌদি আরবের ‘অ্যান্টি রিউমার অথরিটি’ বা গুজব বিরোধী কর্তৃপক্ষ ওই অনুষ্ঠানে পবিত্র কাবা শরিফের আদলে তৈরি কোনো বস্তু ব্যবহারের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা কাচের তৈরি একটি ঘনকাকৃতির কাঠামো, যার সঙ্গে কাবার কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু অনেক ইসলামি ব্যক্তিত্ব এই ঘটনাকে ‘ইসলামের অবমাননা’ বলে মনে করছেন। কারণ ওই কাঠামোটি দেখতে অনেকটা পবিত্র কাবা শরিফের মতো মনে হয়েছে।
কেউ কেউ বলছেন যে এই ‘বিকৃত’ প্রদর্শনীতে যা করা হয়েছে তা ‘শয়তানের কার্যকলাপ’। অপরদিকে সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যম এসব সমালোচনাকে দেশটিকে বদনাম করার চেষ্টা বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
সামাজিক মাধ্যম টেলিগ্রাম এবং ফেসবুকে এই অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। তারিক আব্দ আল-হালিম নামের একজন কানাডীয় ইসলামি লেখক টেলিগ্রামে হিদায়াত আলসারি নামে পোস্ট শেয়ার করে লিখেছেন, আরব উপদ্বীপে বহু-ঈশ্বরবাদ একটা আনুষ্ঠানিক ধর্ম হিসেবে ফিরে এসেছে। তিনি যা লিখেছেন, তা ওই ফ্যাশন শোতে ব্যবহৃত কাবার মতো দেখতে ওই কাঠামোর দিকেই ইঙ্গিত করেছে।
কেউ কেউ আবার একে ‘পৌত্তলিক প্রথার’ সঙ্গেও তুলনা করেছেন। এদিকে কট্টরপন্থিদের অনেকেই এই বিতর্কের সঙ্গে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সলমানের নাম জুড়ে দিয়ে তাকেও নিশানা করেছেন।
মরক্কোর ধর্মীয় নেতা আল-হাসান বিন আলি আল-কিত্তানি বলেছেন, এই ঘটনা মূল্যবোধের অবক্ষয় ও দুর্নীতির লক্ষণ। তার অভিযোগ, বেশিরভাগ মুসলিম স্কলারই এই ঘটনায় নীরব থেকেছেন। শুধুমাত্র কয়েকজন ‘সত্যের কণ্ঠস্বরই’ এই বিষয় নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন।
এর মধ্যে অনেকেই ফ্যাশন শোর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৌদি আরবের ক্ষমতাসীন পরিবারের সমালোচনা করেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই জিহাদি এবং অনেক কট্টরপন্থিদের ‘শত্রু’ হিসেবে তারা পরিচিত।
সিরিয়াভিত্তিক চিন্তাবিদ আবদেল রহমান আল-ইদ্রিসির দাবি, কাবার মতো দেখতে কোনো কাঠামোর চারপাশে মডেলদের নাচ আসলে সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশে হয়েছে।
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর এক সমর্থক ফেসবুকে সৌদি যুবরাজকে ‘অনৈতিক ব্যভিচারী’ বলে কটাক্ষ করার পাশাপাশি অভিযোগ তুলেছেন যে, তিনি (সৌদি যুবরাজ) ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।
রিয়াদ সিজন সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত একটি বিনোদন, সাংস্কৃতিক এবং ক্রীড়া বিষয়ক বার্ষিক অনুষ্ঠান। রিয়াদ সিজন ২০২৪-এর অংশ হিসেবে লেবানিজ ডিজাইনার এলি সাব একটি ফ্যাশন শোর আয়োজন করেন। কিন্তু দেশটির সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকেই এই অনুষ্ঠান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।
মঞ্চে প্রদর্শন করা ওই কাঠামো ছাড়াও তারা এমন সময়ে এই ফ্যাশন শোয়ের আয়োজন করার সমালোচনা করেছেন। গাজা উপত্যকা এবং লেবাননে সংঘাত চলছে। এরই মধ্যে এ ধরনের ফ্যাশন শো নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
লন্ডনভিত্তিক আরবি সংবাদপত্র রায় আল-ইয়ুমের এক প্রতিবেদনে, রিয়াদ সিজনের ডিজাইনার ও আয়োজকদের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধকে উপেক্ষা করার অভিযোগও আনা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে এক পোস্টে একজন কটাক্ষ করে লিখেছেন- গাজায় গণহত্যার মধ্যে সৌদি আরব নৃত্যশিল্পী ও গায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে।