অনলাইন ডেস্ক:
পূর্বাচল বাংলাদেশ চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে চলছে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৯তম আসর। মেলার শেষদিকে এসে জনসমাগম নেই বললেই চলে। ছুটির দিনে ভিড় থাকলেও অন্যান্য দিন তেমন ক্রেতারা আসছেন না বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সরেজমিনে বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, মেলা শেষ হওয়ার ৩ দিন বাকি থাকলেও মেলা প্রাঙ্গণ প্রায় শূন্য। ক্রেতাদের তেমন দেখা মিলছে না।
মেলার মূল ভবনের হল `এ`তে কিছু মানুষের দেখা পাওয়া গেলেও হল `বি` ছিল প্রায় খালি। মূল ভবনের বাইরেও একই চিত্র। খাবারের দোকানগুলোতে কিছুটা ভিড় দেখা গেলেও অন্যান্য দোকানগুলো ছিল খালি।
কুড়িল থেকে বিআরটিসি শাটল বাসে সরাসরি বাণিজ্যমেলায় যাতায়াত করা যায়। সেখানেও অলস সময় পার করছেন টিকেট বিক্রেতারা। একই চিত্র দেখা গেলো মেলায় প্রবেশের টিকেট কাউন্টারে।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবারের মেলায় গতবারের চেয়েও বেচাকেনা কম হয়েছে। গত বছর জাতীয় নির্বাচন হওয়ায় দেরিতে শুরু হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা। তবে সেবার যত বেচাকেনা হয়েছিল এবার তার চেয়ে তুলনামূলক কম হয়েছে। তাই ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমেলার সময় কিছুটা বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
মেলার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এবারের মেলা বর্ধিত করার সুযোগ নেই। যথা সময়ে মেলা শেষ হবে। এ বিষয়ে ইপিবির সচিব বিবেক সরকার বাণিজ্যমেলা যথাসময়ে শেষ হবে। বর্ধিত করার সুযোগ নেই।
পাকিস্তানি থ্রি-পিসের দোকানের বিক্রয়কর্মী অঙ্কুর বলেন, এবারের মেলায় বেচাকেনার অবস্থা খুব বাজে। ছুটির দিন বাদে মানুষ আসেনা। আবার যারা আসে তাদের ৫০ শতাংশ দর্শনার্থী বাকি ৫০ শতাংশ ক্রেতা। ২ হাজার টাকার থ্রি-পিস ৫০০ টাকা দাম বলে। শেষের দিকে বেচাকেনার অবস্থা শোচনীয়। আমরা চালান উঠাতে পারবো কিনা জানিনা। আমাদের শপে বড়দের সব ধরনের থ্রি-পিস, ওয়ান পিস, কুর্তা পাওয়া যাবে। দাম ২ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। শেষের দিকে কিছু অফার থাকবে ক্রেতাদের জন্য।
মেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিকস অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হচ্ছে।
বাঙ্গালী শাল স্টলের বিক্রয়কর্মী আবির আহমেদ বলেন, মেলার হলের ভিতরে কয়েকটি স্টল এখনও বুকিং হয়নি। হয়তো ব্যবসায়ীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এখানে যতদিন মেলা হবে ততদিন জমজমাট হবেনা। কারণ, ছোট ব্যবসায়ীরা যদি কিছু লাভ করতে না পারে তাহলে তারা পরেরবার আসার আগ্রহ পাবেনা।
কথা হচ্ছিল মো. মেহরাজ ভাট নামে একজন পাকিস্তানি বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, আপনি হয়তো লক্ষ্য করেছেন এবারের মেলায় বিদেশি বিক্রেতা কম। সামনের আরও কম হবে কারণ আমরা চালানই উঠাতে পারছি না। আমার স্টলের মোট খরচ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু আমরা এখনও চালানই উঠাতে পারিনি। আমার মতো অনেক ব্যবসায়ী আছেন। যদি মেলা কিছুদিন বর্ধিত করা হয় তাহলে হয়তো আমরা কিছুটা লাভ করতে পারবো।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, এবারের বাণিজ্য মেলায় আগের মত আমেজ নেই। মো. হুসাইন রহমান এক দর্শনার্থী বলেন, আমি ভেবেছিলাম এবারের মেলা সবচেয়ে ভিন্ন হবে। তবে এসে আমি অনেকটা অবাক হয়েছি। আগারগাঁওয়ে যখন মেলা হতো তখন অনেক বেশি বিদেশি স্টল থাকতো। সেখানে নানা দেশের ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের দেখা পাওয়া যেত যার সিকিভাগও এবার দেখতে পেলাম না। আরেকজন ক্রেতা জানান, সব জিনিসের দাম বেশি। আবার বেশির ভাগই ফিক্সড প্রাইসের দোকান। দামাদামি না করতে পারলে কিভাবে কিনবো।