অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে টোল প্লাজায় ২৭ ডিসেম্বর একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অপেক্ষমাণ যানবাহনকে চাপা দেয়। এ সময় ৬ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত স্বজনরা দুর্ঘটনায় বিএমডব্লিউ বেপারী পরিবহনের রুট পারমিট বাতিল ও স্বজনহারা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছেন।
রোববার (৫ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।
দুর্ঘটনায় স্বজন হারানো মো. নুর আলম সোহান বলেন, আমি গোপালগঞ্জ যাচ্ছিলাম। ওই সময় টোল দিচ্ছিলাম। আমার কোলে ছোট ছেলে ছিল। টোল প্লাজায় বাস এসে ধাক্কা দিলে আমার ছেলে মরে যায়। আমিও আহত হয়েছি। এখন অনেক কিছুই মনে করতে পারি না। আমার শাশুড়ি, শালি ও স্ত্রীর বড়বোন মারা যায়। আমার ছোট বোন ও স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় পরিবারের চারজন মানুষকে হারিয়েছি। আমার মতো আর কারো যেন এমন না হয়। তাদের কঠিন শাস্তি চাই, পাশাপাশি তিনি আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
দুর্ঘটনায় আহত সুমন গাজী বলেন, আমরা নিরাপদ স্থানেই টোল দিচ্ছিলাম। ফিটনেসহীন গাড়ি এসে চোখের সামনে আমার ছেলের মাথার ওপর দিয়ে যায়। চোখ বের হয়ে যায়। আর আমার স্ত্রীকে চাপা দিয়ে চাকার সঙ্গে টেনে নিয়ে যায়। আমার স্ত্রী সন্তান যেভাবে চলে গেছে। আমরা এর বিচার চাই।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সড়কে প্রতিদিন যে হাজার হাজার জীবন চলে যাচ্ছে এর দায় রাষ্ট্রকে নিতে হবে। দেশে প্রত্যেকটি মানুষের বেঁচে থাকার অধিকার আছে, কিন্তু সড়কে যে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে সরকারকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে। যারা আহত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন আমি তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। আর যে কর্মকর্তা মামলা নিতে অস্বীকার করেছেন অবিলম্বে তাকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমি সরকারকে বলতে চাই গত ১৬ বছরে সড়কে যে অরাজকতা বিশৃঙ্খলা জিইয়ে রাখা হয়েছে অনতিবিলম্বে সেটা অপসারণ করা হোক। সড়কে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হোক। একইসাথে টোল প্লাজায় যে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে তার জন্য মামলা হতে হবে। প্রত্যেকটা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সড়কে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএমডব্লিউ বেপারী পরিবহনের রুট পারমিট অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করা, স্বজনহারা পরিবারকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করা, পরিবহন মালিককে আইনের আওতায় আনা, সড়ক দুর্ঘটনার দায় রাষ্ট্র ও পরিবহন মালিকপক্ষকে নিতে হবে, সড়ক দুর্ঘটনাকে দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত না করে হত্যা হিসেবে গণ্য করা, মহাসড়কে গাড়ির গতিসীমা নির্দিষ্টকরণ ও সি.সি. ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করা, মাদকাসক্ত কোনো ড্রাইভার ও হেল্পারকে গাড়ির চালানোর দায়িত্ব না দেওয়া, ৯০ কর্মদিবসের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা, ড্রাইভার ও মালিকের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করা।