.মেয়রের কাছের লোক বনে গত এক বছরে ঢের কামিয়েও এখনো বহাল
.দেশে তো আছেই, বিদেশেও সম্পদ।
কামরুজ্জামান মিল্টন:
দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)’র অঞ্চল-৩’র বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্বতনরা যেন কতিপয় উর্ধ্বতনের হীনস্বার্থ সিদ্ধির বেড়াজালে নির্বিকারে আটকে ছিলেন। একটা লম্বা সময়ে ধরে উর্ধ্বতনের অধ্বতনদের (বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক) উদ্দেশ্যমূলক হয়রানির জালে আটকে ঘুষ আদায় ও বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মীদের নায্য পারিশ্রমিক কর্তন,নানা অজুহাতে দমন-পীড়নসহ হরেক ধান্ধাবাজির দোলাচলে ভুক্তভোগীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বরাবরেরই। তবে সাম্প্রতিক সামগ্রিক অবস্থার রকম ফেরেও তা নিরবে বহাল রয়েছে। আর এতে ভুক্তভোগী শ্রেণীর ক্ষোভ মারাত্মক রুপ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে,ওই সময় ধরে প্রকাশ্য ওই ধান্ধাবাজির জুলুমবাজির শিকার বিপুল সংখ্যক বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অনেকে নানাভাবে রেহাই খুজলেও মেলেনি তা। শুধু ঘটেছে-লোক দেখানোর টুকটাক রদবদল। শুধুই এক জুলমবাজের বদলে এসেছে-আরেক জুলমবাজ। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও বহাল রয়েছেন তাদেরই অন্যতম একজন। যিনি এ জোনের (অঞ্চল-৩) একজন পুরনো ধুরন্ধর অধ্বতন হলেও বর্তমানে উর্ধ্বতনের চেয়ার পেতে বসেছেন। পদমর্যাদায় সিইও (প্রধান বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা)। নাম তার-আবু তাহের। তিনি বছর খানেকের বেশী আগে এ জোনেরই সিআই (বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শক) থেকে পদন্নোতি পেয়েছেন। আর তারপর থেকে শুরু হয়েছে তার সিও গিরি, মানে-ওই ধান্ধাবাজির জুলুমবাজি। সাবেক মেয়র তাপসের কাছের লোক বলে পরিচিত ‘সিইও’ আবু তাহের পছন্দসই সিন্ডিকেট করে এ যাবৎ নির্বিঘ্নে ১৩ টির অধিক ওয়ার্ডের ১৩ জনের বেশী পরিদর্শক ও প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের উপর জুলুমবাজির ঘুষবাজি চালিয়ে টাকার পাহাড় গড়তে মরিয়া ছিলেন। সাম্প্রতিক অবস্থায় খানিকটা নড়েচড়ে বসে ফের সাবেক কায়দায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি। চলছে তার-গতানুগতিক ধান্ধাবাজির জুলুমবাজি। আর তাতে ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা সুযোগ বুঝে প্রতিকারের জন্য দৌড়ঝাপ করছেন। অতিষ্ঠরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসহ সেনাবাহিনীর কাছে পর্যন্ত অভিযোগও করেছেন।
সূত্রে আরো জানা গেছে,আবু তাহের সিআই থেকে ‘সিইও’ হয়েই বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শকদের নানা অজুহাতে ফাঁদে ফেলে ঘুষ আদায় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের হুমকি-ধমকির মুখে বেতন কর্তনসহ কর্মী খাটানোর হেরফের বাণিজ্যে বেপরোয়া ছিলেন। আর এভাবে প্রায় বছর খানেকের বেশী সময় ধরে কাড়ি কাড়ি টাকা হাতিয়ে উর্ধ্বতন কতিপয় ঘুষবাজের মন জুগিয়ে ছিলেন নিরাপদে। তবে ৫ই আগস্টের পর কিছুদিন নিস্ক্রিয়ও থাকেন। কিন্তু সদ্য ফের হয়ে উঠেছেন তৎপর ।
আর এব্যাপারে খোঁজ নিতে খিলগাঁও এলাকার ২’নং ওয়ার্ডের ভুইয়া ঝিলের ময়লার বাগাড়ে গিয়ে দেখা মেলে বেশ কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর। পরিচয় গোপন রেখে তাদের দুই-একজনের সাথে কথোপথনে বেরিয়ে আসে-ওই সিইও’র নানা অনিয়মের ওই সব অভিযোগ। বেরিয়ে আসে-বেতনের একটি অংশ ঘুষ দিয়ে কাজ না করেও বেতন নেয়ার প্রচলিত অনিয়ম। সেই সাথে একটা বড় সংখ্যক লোকের কাজের বোঝা সীমিত সংখ্যক লোকের (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) ওপর চাপিয়ে দেয়া । চাকরিচ্যুতির ভয় দেখিয়ে নির্বিকারে এ নিয়মেই চলে বাগাড় খালাশের কাজ। তবে এখানেই শেষ নয়। মাস শেষে তাদের বেতনের ওপর থেকেও নির্দিষ্ট একটা অংশ বড় অফিসারদের জন্য আদায়ও বরাবরের রেওয়াজ। আর প্রতি ওয়ার্ডের ন্যায় সেখানে এ দায়িত্ব পালনে রয়েছেন-সিও স্যারের কাছের লোক বলে পরিচিত জনৈক শফিক।
জনৈক পরিচ্ছন্নতাকর্মী ক্ষোভের সাথে জানান,গরিবের রক্ত চুষে খাওয়াই বড় লোকের কাম। আমরা খাইটা মরি, আর সাবেরা (সিইও) বসে বসে কাম না করনের বেতনের ভাগ খায়। কাম করেও চাকরি বাঁচাতে,বদলি ঠেকাতে এ কষ্টের টেকাও পুরোটা খাওন যায় না। মাস শেষে একটা টেকা দেওনই লাগে। আর ওই টেকা ভাগাভাগি করে তারা বাড়ি,গাড়ি করে। বিদেশে ঘুরে।
একই ভাবে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে ঘুরে একই ধরনের অভিযোগ মিলে ওই ক্ষমতার ‘সিইও’ আবু তাহেরের বিরুদ্ধে। সেই সাথে একাধিক ওয়ার্ডের একাধিক বর্জ্র্য ব্যবস্থাপনা পরিদর্শকের সাথে কথায় কথায় বেরিয়ে আসে-বরাবরের রেওয়াজ ভিত্তিক ওই ‘সিইও’ আবু তাহেরের বদলি,শাস্তি ও জনবল কারসাজি বাণিজ্যের বেপরোয়া ধান্ধাবাজির নানা দিক।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনৈক পরিদর্শক জানান,প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে যাই হোক, মাল কামানোর জন্য এ বিভাগের মক্ষম ‘সিইও’। যেটিতে আছেন-আবু তাহের সাব। তাছাড়া তিনি এর আগেও পরিদর্শক থেকেও সুযোগমত কামিয়ে নিয়েছেন। এরপরও পদন্নোতি। তার মানে-সোনায় সোহাগা। একটু এদিক সেদিক হলেই বদলি, আবার স্বেচ্ছায় বদলি আর শাস্তির বদলি তো আছেই। তাছাড়া উনি ম্যানেজের মাস্টার। উর্ধ্বতনদের ম্যানেজ করে গত এক বছরে যা কামিয়েছেন, তাই’ই ঢের। দেশে তো আছেই,বিদেশে সম্পদ করেছেন। তারপরও থামেননি। অভিযোগেরও শেষ নেই তার বিরুদ্ধে। তারপরও এখনো গতানুগতিক ভাবে চলছেন। আর তাই মহাক্ষমতার ‘সিইও’আবু তাহেরের অর্জিত স্তুপাকৃত অবৈধ সম্পদের নমুনার আগে-নির্বিঘ্নে এযাবৎ কাড়ি কাড়ি টাকার মোহে অন্ধ হয়ে যে সব অবৈধ কর্মকাণ্ডে পিষ্ঠ করে অসংখ্য অধ্বতন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের রক্ত চুষে এখনো বলবদ রয়েছেন, তা দেখানোর প্রয়াসই টুকুই।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য ‘সিইও’ আবু তাহেরের সাথে মোবাইলে কথা হয়। তবে তিনি এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। সেই সাথে অভিযোগের বিষয়ে জানালে তিনি সমাধানেরও আশ্বাস দেন।