অনলাইন ডেস্ক:
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সদ্য ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে না পারার ব্যর্থতার দায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদত্যাগ দাবি করেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বিতর্কিত ও সিন্ডিকেট কমিটি বাতিলের দাবি জানান তারা।
বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় ঢাকা কলেজ অডিটোরিয়ামে সদ্য ঘোষিত কমিটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। সংবাদ সম্মেলনে যৌথভাবে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি তাজবিউল হাসান ও আবির রায়হান। এসময় ছাত্রদলের অর্ধশতাধিক পদবঞ্চিত নেতাকর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলন পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বলেন, এই কমিটিতে যাকে আহ্বায়ক করা হয়েছে তার নামে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরে কোনো মামলা-হামলা, জেল-জুলুম এমনকি কোনো নির্যাতনের ইতিহাসও আমাদের জানা নেই। সে বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে দীর্ঘ ৩ বছর হলে থেকে স্বদর্পে ক্যাম্পাসে বিচরণ করেছিল। তার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর ছাত্রলীগকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এবং তার কিছু প্রমাণও রয়েছে। অত্র কমিটির আহ্বায়কের সেশন ০৯-১০ এবং সদস্য সচিবের সেশন ১২-১৩। অথচ ১০-১১ এবং ১১-১২ সেশনের একাধিক ত্যাগী কর্মী রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা-হামলা, গুম, গুলিবিদ্ধ হওয়া ও নির্যাতনের সুনির্দিষ্ট একাধিক রেকর্ড রয়েছে। সদস্য সচিবের বিরুদ্ধেও ৫ আগস্টের পর ব্যপকভাবে ছাত্রলীগ কর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে।
৩৬ সদস্যের কমিটিতে ২৫ জনই কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির ভাগাভাগির মাধ্যমে হয়েছে উল্লেখ করে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বলেন, ৩৬ সদস্যের মধ্যে ১৬ জনের বিরোদ্ধে বিগত ২৮ অক্টোবর ২০২৩ থেকে ৭ জানুয়ারি ২০২৪ পর্যন্ত একটা প্রোগ্রামের নজিরও নেই। আমরা এই ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি যদি তারা গ্রহণ করে। কমিটির কারো কারো বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও রয়েছে।
ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের উত্তর ছাত্রাবাসের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করে তারা বলেন, সদ্য ঘোষিত কমিটির ১নং সদস্যের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ কর্মীদের নিজ রুমে আশ্রয় দেয়া এবং তাদের নিয়ে ৫ আগস্টের পর প্রোগ্রাম ও চাঁদাবাজি করার অভিযোগ ও প্রমাণ রয়েছে। যেটা নিয়ে একাধিক সংবাদও হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাংগঠনিক অভিভাবক জনাব তারেক রহমান। আমরা অত্যান্ত বিনয়ের সঙ্গে জানাতে চাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক এই পদটির গ্রহণযোগ্যতা ও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমরা অনুভব করছি না। ঘোষিত কমিটির অসংগতিই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
দলের মধ্য থেকেই নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হলে আমরা কোথায় যাব প্রশ্ন করে পদবঞ্চিত তাজবিউল হাসান বলেন, আমাদের জীবনের দীর্ঘ সোনালী একটি সময় ছাত্রদলের সঙ্গে ছিলাম। আমরা আমাদের সংগঠনকে অন্তর দিয়ে ধারণ করি। আমরা আমাদের সংগঠনকে কোনোভাবেই কলুষিত করতে চাই না। সংগঠনে যারা সিন্ডিকেট করে তাদের বিরুদ্ধে এটা আমাদের প্রতিবাদ। বিগত দিনে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আমাদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন করছে। এখন যাদেরকে কমিটিতে রাখা হয়েছে তারা সুসময়ের যোদ্ধা। কমিটিতে ১০/১৫ জন আছে যারা ২৮ অক্টোবরের আগে পরের কোনো ফুটেজ দেখাতে পারবে না। দেশনায়ক তারেক রহমানকে বিনয়ের সাথে বলতে চাই আমাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেন এবং বিবেচনায় রাখেন।
ক্যাম্পাসে তারা নিরাপদ না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমাদেরকে অনেক ধরণের হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের যদি কোন ক্ষয়ক্ষতি হয় তাহলে তার দায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অবশ্যই নিতে হবে।
এদিকে তৃতীয় দিনের মতো আজ (২৬ ডিসেম্বর) বেলা ১০টা থেকে ঢাকা কলেজ সংলগ্ন নায়েমের গলিতে অবস্থান নিয়ে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। মূলত মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ঘোষিত ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে লাগাতার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন। ঢাকা কলেজের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ এবং একাধিকবার ককটেল বিস্ফোরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে।