অনলাইন ডেস্ক:
আদানি গ্রুপের কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ। এর কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা তুলনামূলক কমে যাওয়া। কয়েক শ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া নিয়ে মতবিরোধের মধ্যেই এমন সিদ্ধান্ত নিলো বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সোমবার (২ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এসব তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ বকেয়া পরিশোধে দেরি করায় আদানি পাওয়ার ৩১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ অর্ধেক করে দিয়েছে। সেসময় বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির মুখোমুখি ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার আদানিকে আপাতত অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে বলেছে। তবে পুরোনো বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম বলেন, আদানি আমাদের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় আমরা একই সঙ্গে হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছি। শীতের সময় বিদ্যুৎ চাহিদা কম থাকায় আমরা তাদের বলেছি, প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট চালানোর প্রয়োজন নেই।
২০১৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে সই হওয়া ২৫ বছরের একটি চুক্তির অধীনে ভারতের ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত আদানি গ্রুপের ২০০ কোটি ডলারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট রয়েছে, প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৮০০ মেগাওয়াট।
জানা যায়, নভেম্বরে প্ল্যান্টটি মাত্র ৪১ দশমিক ৮২ শতাংশ সক্ষমতায় চালু ছিল, যা এ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ১ নভেম্বর থেকে প্ল্যান্টের একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
বিপিডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, গত শীতে বাংলাদেশ আদানি থেকে প্রতিমাসে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছিল। তারা আরও জানায়, আদানি পিডিবিকে জিজ্ঞেস করেছিল তারা আবার কবে থেকে স্বাভাবিক ক্রয় শুরু করবে, তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো নির্দিষ্ট উত্তর দেওয়া হয়নি।
আদানি পাওয়ারের একজন মুখপাত্র বলেন, আমরা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি। তবে বকেয়া পরিশোধ নিয়ে তৈরি হওয়া পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। এটি প্ল্যান্টের কার্যক্রমকে টেকসই রাখতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিপিডিবি ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, শিগ্গিরই সব বকেয়া পরিশোধ করা হবে। মুখপাত্রের মতে, আদানি আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, যেমনভাবে আদানি তাদের চুক্তির দায়বদ্ধতা বজায় রেখেছে।
বিপিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানান, বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত আদানির প্রায় ৬৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া রয়েছে। এর মধ্যে গত মাসে প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং অক্টোবরে ৯৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।
অন্যদিকে, আদানি পাওয়ারের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, বকেয়ার পরিমাণ এখন প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে। আদালত আদানির সঙ্গে হওয়া চুক্তি বাতিল না করলে বাংলাদেশ সরকার চুক্তির আওতায় বিদ্যুৎ কেনার দাম অনেকটা কমাতে চায় বলে রোববার রয়টার্সকে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
বাংলাদেশের আদালত আদানি চুক্তিটি তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশ চুক্তি পুনর্মূল্যায়ন করছে বলে তাদের কাছে এমন কোনো ইঙ্গিত নেই।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়া অর্থবছরে আদানির বিদ্যুতের প্রতি ইউনিট খরচ ছিল ১৪ টাকা ৮৭ পয়সা। তুলনায় অন্যান্য ভারতীয় সরবরাহকারীর গড় ইউনিট খরচ ছিল ৯ টাকা ৫৭ পয়সা। বাংলাদেশে খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট ৮ টাকা ৯৫ পয়সা। ফলে সরকারকে বার্ষিক ৩২০ বিলিয়ন টাকা (২.৭ বিলিয়ন ডলার) বিদ্যুৎ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, দাম বেশি হওয়ায় সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। আমরা চাই শুধু আদানির ক্ষেত্রে নয়, বিদ্যুতের দাম সামগ্রিকভাবেই গড় খুচরা মূল্যের নিচে নেমে আসুক। তবে আদানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট স্থানীয় সক্ষমতা রয়েছে। যদিও গ্যাস সংকট বা অন্যান্য সমস্যায় কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসে রয়েছে অথবা সক্ষমতার চেয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। তবে আদানি সরবরাহ কমিয়ে অর্ধেক করে দেওয়ার পরও কোনো সমস্যা হয়নি।