খুলনা ডেস্ক:
টানা বর্ষণে খুলনা শহরের রাস্তাঘাট তলিয়ে গিয়ে নগরবাসীর দৈনন্দিন জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সোমবার বিকেল থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে খুলনার টুটপাড়া, খালিশপুর, মুজগুন্নি, নিউ মার্কেট, রয়েল মোড়, শান্তিধাম মোড়, দিলখোলা রোড, ফুলবাড়িগেট, রূপসা ও অন্যান্য এলাকায় পানি জমে হাঁটুপানি সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলি পর্যন্ত সবখানেই জলাবদ্ধতা ছড়িয়ে পড়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট।
এই অবস্থায় স্কুল, কলেজ ও কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারছেন না অনেকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হচ্ছে, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। নগরবাসীর অভিযোগ, খুলনা সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা এবং পানি নিষ্কাশনের যথাযথ পদক্ষেপ না থাকার কারণেই প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে একই সমস্যা দেখা দেয়।
কেসিসি সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বসবাস। পানি নিষ্কাশনের জন্য রয়েছে ১৩টি খাল এবং ৫৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ ড্রেন। ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে শুরু হওয়া দুটি প্রকল্পে প্রায় ১ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তা উন্নয়নের কাজ হাতে নেয়া হলেও এখনো জলাবদ্ধতা সমস্যা কাটেনি। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই দৃশ্যমান অগ্রগতি ছাড়াই বছরের পর বছর চলতে থাকে।
বয়রা মুজগুন্নির বাসিন্দা কামরুল হাসান বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুপানি জমে। ড্রেন আর রাস্তার সীমা বোঝা যায় না। বর্ষায় পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। টুটপাড়ার শফিকুল ইসলাম মনে করেন, সিটি করপোরেশন যদি নিজ দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তাহলে দায়িত্ব অন্য সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া উচিত।
রূপসার বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, এটি কোনো নতুন সমস্যা নয়, বহু পুরোনো। বারবার খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়, কিন্তু কার্যকর সমাধান আসে না। নিউ মার্কেট এলাকার হাসিব হাসান বলেন, শহরে পানি আসার পথ যেন উল্টে গেছে, ড্রেন দিয়ে পানি বের না হয়ে বরং শহরে ঢুকছে। ড্রেন ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলতে থাকে বছরের পর বছর, কিন্তু জলাবদ্ধতা কাটে না।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার জানান, জলাবদ্ধতা খুলনার পুরোনো ও স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুলনা সিটি করপোরেশন যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ছাড়া এ সমস্যা নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে।
কেসিসির প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবির উল জব্বার বলেন, আমরা নতুন প্রকল্পের আওতায় স্লুইচ গেট ও পাম্প হাউস বসানোর পরিকল্পনা করছি। তবে যতক্ষণ না ড্রেনের আবর্জনা নিয়মিত পরিষ্কার হয়, ততক্ষণ জলাবদ্ধতা কমানো সম্ভব নয়।
খুলনা শহরের জলাবদ্ধতা এখন শুধু অবকাঠামোগত সমস্যাই নয়, বরং এটি একটি জীবনমান ও নগর পরিকল্পনার সংকট হিসেবে সামনে এসেছে। নগরবাসী চায় বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই সমাধান, যাতে তারা প্রতি বর্ষায় একই দুর্ভোগের শিকার না হন।