মোহাম্মদ মোশাররাফ হোছাইন খানঃ
শেখ হাসিনার দেশ থেকে পলায়নের পর দেশের সর্ব বৃহত্তর অর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিতে দখলদার মুক্তি আন্দোলনের জেরে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের কার্যক্রম এক ধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করছে।প্রতিষ্ঠানটি এখন অভিভাবক শূন্য। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দখলদার এস আলম গ্রুপের নিয়োগ দেয়া এমডি সহ উর্ধ্বতন কোন কর্মকর্তা গত কয়েক দিন অফিস করছেন না। ‘বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকার সমাজ’এর ব্যানারে ২০১৭ সালে একটি সরকারি সংস্হার তত্ত্বাবধানে এস আলম গ্রুপ কতৃক দখল হওয়া ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকে পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যাংকটির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আজ রবিবার (১১ আগস্ট) ব্যাংকের কর্মীরা মতিঝিলে অবস্থিত ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় এস আলম গ্রুপের প্রতিনিধিত্বকারী আকিজ উদ্দীন, মেফতাহ উদ্দীন গংদের মদদে কয়েক শত লোক ইসলামী ব্যাংক পূনঃদখলের অপচেষ্টা চালায়।ব্যাংক কর্মীরা তাদের এই অপচেষ্টা ঠেকাতে গেলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে এস আলম গ্রুপের দুর্বৃত্তরা ব্যাংক কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে ছয় কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সংঘর্ষে ইসলামী ব্যাংকের গোডাউন গার্ড (ডিজি) শফিউল্লাহ সরদার, অফিসার মামুন, আব্দুর রহমান ও বাকী বিল্লাহসহ ছয় কর্মকর্তা গুলিবিদ্ধ হন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকার সমাজ’ ব্যানারে ব্যাংক ডাকাত, লুটেরা ও তাঁবেদারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও আন্দোলন করছিলেন। এ সময় তাদের ওপর গুলি চালায় এস আলম গ্রুপের লুটেরা। এতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হন। পরে উপস্থিত কর্মকর্তারা ধাওয়া দিলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরো জানা গেছে, বর্তমানে প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এস আলম পন্থীরা বহিরাগত এনে ইউনূস সেন্টারের দিক অস্ত্রসহ অবস্থান নিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াত পন্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত হতো। এরপর ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা বদল হয়। ব্যাংকটি তুলে দেয়া হয় এস আলম গ্রুপের হাতে। সেই থেকে থেকে ব্যাংকটির আর্থিক অবস্থা চরম খারাপ হতে থাকে।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর ৬ আগস্ট এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয় বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। এরপর গত ৭ ও ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। এ সময় এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদেরকে ব্যাংক থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী জানান, গতকাল জানতে পারি এস আলমের বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যাংকের যারা আছে তারা একত্রিত হয়ে যারা ব্যাংকটিকে লুটপাট করেছে তারা তাদের লোকদের ব্যাংকেই বসাবে। এ তথ্য পেয়ে তারা যাতে ব্যাংকে না ঢুকতে পারে তাই ব্যাংকের সামনে আমরা অবস্থান গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন,আমাদের কাছে খবর আসে এস আলমের লোকজন সিটি সেন্টারে অবস্থান নেয়। তারা মিছিল নিয়ে প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করতে চায়। তখন ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তারারা তাদের প্রতিহত করতে গেলে এস আলমের লোকজন তাদেরকে উদ্দেশ্য করে গুলে চালায়। তাতে ছয়জন গুলিবিদ্ধ হয়। তারা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছেন। পরে ব্যাংকাররা প্রতিরোধ গড়ে তুললে তারা পালিয়ে যায়।
এদিকে, ইসলামী ব্যাংকে বাংলাদেশ পিএলসি এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মনিরুল মাওলা এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ম্যনেজম্যান্ট সংক্রান্ত বিষয়গুলো দু’এক দিনের মধ্য সমাধান হয়ে যাবে। তিনি আজ অফিস করেছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি প্রথমে না বলেন, পরে অফিসের কাজে আছেন বলে জানান।