অনলাইন ডেস্ক:
লিটারে ৮ টাকা দাম বাড়ানোর ৯ দিন পরও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট শক্তিশালী। ব্যবসার ক্ষেত্রটি বেশ জটিল। এই জটিল জিনিস ভাঙা বেশ কঠিন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে তিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।
বৈঠক থেকে বের হয়ে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ চাল, ডাল, মসুর ডাল, সয়াবিন তেল, সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। মোটামুটি যেগুলো আসছে, আমরা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিচ্ছি। অনেকগুলো ক্রয়সংক্রান্ত অনুমোদন আমরা দিলাম। কিন্তু এককভাবে টাকার অঙ্ক খুব বেশি না। আগে অনেক সময় দেখা যেত বিরাট-বিরাট কিছু, সেগুলো এখন যেটা আসবে, আমরা যাচাই-বাছাই করে দেবো।
তিনি বলেন, সয়াবিন হয়তো কিছুটা সহনীয় হতে পারে। আর মসুর ডাল দিচ্ছি, কারণ মসুর ডালের প্রয়োজন আছে। অতএব রোজা পর্যন্ত যত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আছে চাল, ডাল, খেজুর, ছোলা, সয়াবিন তেল, চিনি এগুলো আমরা নিশ্চিত করছি। চেষ্টা করছি বাজারটা যাতে আরেকটু সহনীয় হয়। তবে সময় লাগবে। কারণ এগুলো বেশিরভাগ বাহির থেকে আমদানি করতে হয়। আমাদের আনলোড করতে দেরি হয় না, কিন্তু সরবরাহে…। আমাদের নির্ভর করতে হচ্ছে বাহিরের ওপর।
গত ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়। এরপর আরও ৯ দিন চলে গেলেও বাজারে সয়াবিন তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাজারের ব্যাপারটার সঙ্গে আমাদের একটু গ্যাপ আছে। কারণ আমরা দাম যেটা ধরি, যে দামে বিক্রি করার কথা সেটাই। এখানে বাজারে অনেক রকম ব্যাপার আছে। যেমন ৮ টাকা দাম যেদিন বাড়ে, তার পরের দিন বাজারে অনেক সাপ্লাই ছিল। যখনই দাম বাড়ানো হয়েছে, ব্যবসায়ীদের একটা প্রত্যাশা আছে যে ৮ টাকা বাড়িয়েছে, আবারও বাড়বে।
তিনি বলেন, আমরা আজ সয়াবিন আমদানি করতে বলেছি। আমরা চাচ্ছি যত সম্ভব আমাদের দিক থেকে সাপ্লাইটা আসুক। যাতে ব্যাবসায়ীদের কাছে একটা ম্যাসেজ যায় দেশে সরবরাহ…। এখন এটা যাচ্ছে কি না সেটা আলাদা ব্যাপার।
ভোক্তাদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বাজারে কার্যকর মনিটরিং হচ্ছে না। যেটার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন কথা বলা হলে উপদেষ্টা বলেন, মনিটরিং হচ্ছে না, তা নয়। সবাই মিলে ঠিকঠাক করে, এমনটা বাহিরের দেশে হয় না। কিন্তু এখানে সবাই মিলে তাদের স্বার্থে দাম ঠিক করে বিক্রি করে।
তিনি বলেন, বাজারে ভোক্তা অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর কত জায়গায় যাবে? কিছুদিন আগে আমি পাবনা গেলাম, সেখানেও একই অবস্থা। ডিসি বলছে আমরা কমিটি করে দিয়েছি। তারা যায় বাজারে। যখন চলে আসে, আবার যে সেই। অতএব মানুষ যদি সচেতন না হয়, মানুষ যদি নিজেরা মনিটরিং করে কমপ্লেন করে, তখন আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো। আমাদের এখানে হয় কী, সহনশক্তি বেশি, কিনে নিয়ে চলে যায়। কিন্তু বাহিরের ক্রেতা খুব সচেতন থাকে, অভিযোগ করে। পার্শ্ববর্তী ভারতে দেখেন দাম বেড়ে গেলে ওরা প্রটেস্ট করে। আমি এখানে প্রটেস্ট করতে বলছি না, অ্যাটলিস্ট সবাই যাতে বলে। মনিটরিং করে তাও আমরা অনেক সময় খবর পায়, তা দেখি মানুষ সহ্য করে।
তাহলে কি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এত শক্তিশালী? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ডেফিনেটলি। সিন্ডিকেট না বলে ব্যবসায়ী যারা আছে তারা যথেষ্ট শক্তিশালী। খুব বড় ব্যবসায়ী, মাঝারি বা যারা সরাসরি আমদানি করে, সাপ্লাই দেয়, আবার যারা এজেন্ট শুধু সাপ্লাইও দেয় না, শুধু ডিও লেটার দেয়। এই একটা জটিল জিনিস তো ভাঙা ডিফিকাল্ট।
আমাদের এখানে খুচরা পর্যায়ে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তাদের দামও সরবরাহের ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। নিয়ন্ত্রণ করে উৎপাদক, মিলার, পাইকাররা, সেখানে তো অভিযান চালানো হয় না। সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এত জায়গায় অভিযান চালালে তো ব্যবসায়ীদের আপনি….। সবাইকে একসঙ্গে ধরলে বাজারে কৃত্রিম সংকট আরও বেশি হবে। আমরা চাই সবাই ব্যবসা করুক। তবে চাই না অতিরিক্ত লাভ করুক। আর যারা উৎপাদন করে তারা যেন না ঠকে যায়। উৎপাদনের খরচটা যেন তারা পায়, আমরা সেই চেষ্টাই করছি। একটু সময় লাগবে।