পর্ব-১
.জামাই আইজি’র ভাই, সচিবের বন্ধু আর বউ আ. হোসেন আমু’র ভাগ্নি , এ তিন মহাশক্তির বেপরোয়া দাপট ।
.কোন টেন্ডার ছাড়াই ইলিশ প্রকল্পের কোটি আত্মসাৎ ।
. মুক্তা প্রকল্পের নামে নিছক ধান্ধা-ফিকিরের হরিলুট ।
কামরুজ্জামান মিল্টন:
হয়তো বা মাছ চুরি, গাছ চুরি, এটা-ওটা সব চুরি সত্যিকারের চুরি হলেও পুকুর চুরিটা কথার কথা। কিন্তু বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের হোতা গিরির সুযোগে জামাই-বউয়ের স্বামী-স্ত্রী বেলায় শুধু গাছটা বাদে পুকুর, মাছসহ সব নানা কিছু নির্বিঘ্নে চুরি তো নয়, যেন ডাকাতি। সোজা কথায়-একচ্ছত্র প্রভাবের যথেচ্ছা লুটপাটে প্রতিষ্ঠানটি ন্যুজ হয়ে এসব নিয়ম- দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে বলে অভিযোগ বরাবরের।
তাতে জানা গেছে- একটা লম্বা সময় ধরে ওই জামাই-বউ অর্থাৎ বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পর্যায়ক্রমের হোতা দম্পতির স্বামী ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ ও স্ত্রী ড. মোহসেনা বেগম তনুর পুকুর, মাছ সব ডাকাতিসহ নানা কু-কান্ডে গোটা ইনস্টিটিউটকে লুটপাটের হাট-বাজার বানিয়ে নিজেদের আখের গুছিয়েও বহাল রয়েছে। আর এ জামাই-বউয়ের হাত বদলে ধারাবাহিক লুটপাট নিয়ে নিয়ে তিন পর্বের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের এ পর্বটিতে বউয়ের আগের হোতারূপী ডিজি জামাই ইয়াহিয়া মাহমুদের প্রহসনময় ধান্ধাবাজির ছিটেফোটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
জামাই ইয়াহিয়া মাহমুদ আট বছর বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজি’র দায়িত্বে ছিলেন। মেয়াদ শেষ হলে মাছ প্রতিমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম তাকে দুই বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ান। এরপর শ ম রেজাউল, ডিজি ইয়াহিয়া মাহমুদ ও তার বন্ধু তৎকালীন সচিব রওনক মাহমুদ এর যোগশাজসে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটকে লুটপাটের রাজত্বে পরিণত করেন। শুরু করেন-ৈঅবৈধ লুটপাট, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বেপরোয়া ধান্ধাবাজি। সেই সাথে গড়ে তোলেন-নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী। তাদের ওই সব অবাধ ধান্ধাবাজির দিকে ফিরে তাকালে তার উপর নামে অত্যাচারের খড়গ।
সাবেক ডিজি ইয়াহিয়া মাহমুদের স্ত্রী আওয়ামীলীগ নেতা আমির হোসেন আমু’র ভাগনী ও ইয়াহিয়া মাহমুদ সাবেক আইজিপি আল মামুন’র ফুফাতো ভাই ও মাছ সচিব তাদের পকেটের লোক পরিচয়ে ছিলেন মহাদাপুটে। এ তিন মহাশক্তির দাপটেই স্ত্রী তনুকে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট’র ডিজি’র সাময়িক দায়িত্বও বসিয়েছেন। আর দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে জামাই’র মত একই কায়দায় তনুও শুরু করেন কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দমন-পীড়নসহ নির্বিঘ্নে চুরি-ধারিময় লুটপাট। তাই ওই লুটপাটের ধরন ব্যাঙ্গার্থেই ওই পুকুর-মাছ চুরি-ডাকাতির মত ভাল ভাল শব্দ আনা হয়েছে। তবে আসল ব্যাপার হলো-বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রায়োগীক গবেষণা ছাড়াই হয়েছে-মিথ্যা গবেষণার তথ্য প্রচার। হয়েছে-মহাপ্রতারনা। চলেছে-ধান্ধাবাজি। নির্বেঘ্নে লুটপাট হয়েছে-সরকারী অর্থ। মাছ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আস্কারায় ১০৬ জন আউট সোর্সিং-এ নিয়োগের নামে হাতিয়ে নিয়েছেন-কাড়ি কাড়ি টাকা। এ যেন দেখার কেউ নাই।
সেই সাথে করেছেন-বিএফআরআই কর্মচারী নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্য। তা থেকে মাছ মন্ত্রীকে উপঢৌকণ হিসেবে কোটি টাকা দিলেও আস্থাভাজন সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদৌসকে দিয়েছেন-নতুন গাড়ী। কোন টেন্ডার আহ্বান বা কাজ ছাড়াই ইলিশ গবেষণা প্রকল্পের চেক লিখে করেছেন- টাকা আত্মসাৎ। তবে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইয়াহিয়া মাহমুদ বন্ধু সচিব রওনক মাহমুদকে সামুদ্রিক মৎস্য অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের টাকায় কিনে দেন-দামি ফ্ল্যাট। অন্যদিকে-কোন গবেষণা ছাড়াই মুক্তা প্রকল্পে চালানো হয় নিছক ধান্ধা-ফিকির। আর গবেষণার উৎপাদিত মুক্তা বা মুক্তা গবেষণার পুকুরে উৎপাদিত মাছ বিক্রির টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে করা হয়েছে, ভাগ-বাটোয়ারাময় আত্মসাৎ। ‘হুয়া ডানে’র রিপোর্ট কপি করে উপস্থাপন হয়েছে-ভুয়া রিপোর্ট । প্রচার করা হয়- মিথ্যা গবেষণার তথ্য। এছাড়া কোর গবেষণার নামে চলে- রাজস্ব বাজেটের গবেষণার অর্থ লুটপাট। অবকাঠামো নির্মাণ কাজের রাজস্ব বাজেটের অর্থ ভুয়া বিলের মাধ্যমে করা হয়-লুটপাট। এমন কি গবেষণার মাছ ও লেকের মাছ বিক্রির টাকা পর্যন্ত করা হয় গায়েব। হ্যাচারীতে উৎপাদিত রেনু পোনা বিক্রির অর্থ নাম মাত্র জমা দিয়ে বাকি করা হয়-আত্মসাৎ। আর কোন কাজ ছাড়াই এনএটিপি প্রকল্পের সমুদয় অর্থ করা হয়-গায়েব। শুধু তাই’ই নয়, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা নিয়োগে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগকে থোড়াই কেয়ার করে হোতা ইয়াহিয়া মাহমুদ ও তৎকালীন মাছ মন্ত্রী রেজাউল করিম যোগসাজশে ৪৩ টি পদে নিয়োগ দিয়ে ঘুষ হিসেবে লুফে নেন-কোটি কোটি টাকা। সেই সাথে মহাপ্রতাপশালী ইয়াহিয়া মাহমুদের কাছে নারী সহকর্মীদের অনেকে নির্বিকারে হারিয়েছেন- সম্ভ্রম। অন্যথায় পেয়েছেন-শাস্তি। জামাই সাবেক ডিজি ইয়াহিয়া মাহমুদ এভাবে একটা মেয়াদে দূর্দান্ত দাপটে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষন ইনস্টিটিউট’এ লুটপাট করে দেশে বিদেশে গড়েছেন-সম্পদের পাহাড়। আর জামাই’র অবর্তমানে বউ বর্তমান হোতা হয়ে একই ভাবে লুটপাটে মত্ত রয়েছেন।যার পেছনে বসে কলকাঠি নাড়ছেন-সাবেক সেই লুটপাটের হোতারূপী ডিজি ইয়াহিয়া মাহমুদ। আদর্শবান ওই হোতা জামাই-বউ, মানে-ওই দম্পতি নিজে ও পরিবারে সদস্যদের জন্য চার-চারটি গাড়ি ব্যবহার করেন। আর এসবের জলন্ত সাক্ষী এ যাবৎ ওই প্রতাপশালী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি ও বঞ্চিত-লাঞ্ছিত হয়েও মুখ বুজে থাকা বিপুল সংখ্যক কর্মচারী-কর্মকর্তা। যরা এখন অবস্থা বিবেচনায় এসব বিষয়ে রীতিমত স্বরগোল তুলতে শুরু করেছেন। তবে এসব বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে ড. মোহসেনা বেগম তনুকে কল করা হলে তিনি ভিন্ন ইঙ্গিতদিয়ে, নিজেদের নির্দোষ দাবী করেন এবং এসব বিষয়ে ফোনে কিছু বলে সরাসরি দেখা করতে বলেন।
আর এব্যাপারে সদ্য গঠিত সরকারের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেস্টার দফতর থেকে জানান, দ্রুত তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ডিজি ড. মোহসেনা তনুর ওই পুকুর, মাছসহ মৎস্য গবেষণার ধান্ধাময় হরিলুটের ছোট গল্পটা এরপর বিস্তারিত আসছে ২য় পর্বে........