কামরুজ্জামান মিল্টন:
জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউট ও হাসপাতাল নিঃস্বন্দেহে রাষ্ট্রয়ত্ব একটি বৃহৎচিকিৎসা কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম। সাধারণত হৃদরোগ জনিত বিভিন্নসমস্যায় আক্রান্ত নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তের শেষ আশ্রয়স্থলও বটে।
কিন্তু বরাবরই এটি নানা অনিয়মে ঘেরা। সেবার মান নিয়ে রয়েছে-নানাবিতর্ক, নানা সমালোচনা।
তবে সম্প্রতি তা আরো বেশামাল রুপ নিয়েছে। দরিদ্র্য ও হতদরিদ্র্য শ্রেণীরসামান্য আশার এ গন্তব্য যেন ধান্ধাবাজি আর হয়রাণির অবাধ আস্তানায়পরিণত হয়েছে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি আরো জানায়, দেশের এত বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতালনামের সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, তা যেন অনিয়ম-দুর্নীতি ঘেরা অব্যবস্থাপনায়গিলে খাচ্ছে।
হৃদরোগ জনিত সমস্যা নিয়ে কোন রোগী সেখানে গিয়ে সেবার বদলেপ্রতারণাসহ নানা হয়রানির ব্যাপারটা যেন নিত্যকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।সেবা নিতে প্রভাবশালী অথবা কোন তদবিরের ব্যত্যয়ে পড়তে হয়- অসহযোগিতার অসহয়াত্বে অথবা হয়রাণিতে। দালালের দৌরাত্ম্যেওশিকার হয়ে সেবা প্রত্যাশির জীবনে নির্বিকারে নামছে-মরার উপর, খাড়ারঘা। অর্থাৎ চলে চিকিৎসার নামে অবৈধভাবে টাকা-পয়সা আদায়ের নানাঅসদাচরণ। মোট কথায়-সেখানে সেবা নিতে গিয়ে সেবার বলে -ছাইড়ে দেমা,কাইন্দে বাচি অবস্থা। আর এসব সরেজমিনে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখামেলে শের-এ বাংলানগরস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউট ও হাসপাতালেরওই অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার নানা রকমফের।
রোগীদের অসহয় স্বজনদের হাহাকার আর ক্ষোভের আস্ফালন। সেখানেকথা হয়-মায়ের হৃরোগ জনিত সমস্যা নির্ণয়ের জন্য আসা খিলগায়েরতানজিলা নামের এক কলেজ শিক্ষার্থীর সাথে।
তানজিলা জানায়, একটি বেসরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসকেরকথায় তার মাকে সেখানে ভর্তি করে। কথা হয়- শুধু সমস্যা নির্নয়ের জন্যএনজিও গ্রাম করার। চুক্তি হয়-পাঁচ হাজার টাকা খরচ দেয়ার। কিন্তু এখানেসহকারি প্রফেসর ডাঃ শফিকুল ইসলামের অধীনে ভর্তির পর শুরু হয়হয়রানি। ওটি’তে নেয়ার আগে বাহির থেকে আট হাজার ঔষধ কেনার ফর্দ।আর ওটি’তে নেয়ার পর ফের ওই একই ঔষধ কেনার ফর্দ ধরিয়ে দিয়ে কয়েকদফা চলে এভাবে ঔষধ কেনানো।
অথচ ওই ঔষধ কেনাবার ফর্দে ফার্মেসির লোকজন পর্যন্ত হাহুতাস করেন ।এমন কি, অকপটে বলেও ফেলেন-অহেতুক এই গাট্টিভরা ঔষধ কেনাচ্ছে।এগুলো পরে এখানেই ফেরত দিয়ে কেউ না কেউ টাকা নিবে। অথচ-এব্যাপারে এনজিও গ্রাম’র সহযোগি ও ডাক্তারের কাছে টু শব্দ করলেই, খেতে হয়েছে-ধমক, শুনতে হয়েছে-বেশী কথা।
আরো জানায়, একদিকে অসামর্থ্য অন্যদিকে সরকারি এত বড় প্রতিষ্ঠানেরকথা ভেবে তাদের এখানে আসা। কিন্তু এর ভেতরকার অনিয়ম-জুলুমেরকথা জানলে, কেউই এখানে আসবে না। মানুষ কথায় বলে-হাসপাতাল নাকসাই খানা? এখানে আসার পর তার প্রমাণ মিলছে। টাকার সমস্যারকারণেই তো অনেকে খোঁজাখুঁজির পর এখানে এসে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েএনজিও গ্রাম করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু সেখানেও এক ধরনের জিম্মি করে, ওই ঔষধ কেনার পেচে ফেলে তিন-চার গুণ টাকা বেশী নামিয়ে ফেলেছে।
ডাক্তার শফিকুল ইসলাম নিজেই এনজিও গ্রামের খরচ মাত্র দুই হাজারটাকার কথা স্বীকার করলেও নেয়া হয় পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ দাঁড়ায়প্রায় ২০হাজারে। যা বেসরকারি উন্নতমানের খরচের সমান। এরপর ওইওটিতে থাকতেই শুরু হয় নতুন করে টাকা খসানোর চেস্টা। এনজিও গ্রামেরসহযোগীদের সাথে ডাক্তার নিজেই দুই লাখ টাকা আনার জন্য চাপ দেন।রিং পরানোর জন্য। অথচ তাদের সাথে চুক্তিই আমার এনজিও গ্রাম করারমাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের। কিন্তু তারা যে রিং না পরিয়ে ছাড়তেই চায় না।করেন-দূর্ব্যবহার। সেখান থেকে এক প্রকারে জোর করে বেরিয়ে আসলেও ওইএনজিও গ্রামের রিপোর্ট রাখেন ডাঃ শফিকুল ইসলাম । মোট কথা-সেখানেদালাল, কর্মচারীর ধান্ধাবাজিতে রোগীদের চিকিৎসার বদলে হতে হয়-নাজেহাল।
প্রশাসনসহ কর্তব্যরত চিকিৎসকরা পর্যন্ত তা দেখে-জেনে, না দেখার-নাজানার ভান করে থাকেন।
এছাড়া কেরানিগঞ্জের হাসনাবাদ থেকে একই সমস্যার কারণে সেখানেইয়াসিন তার স্বজন নিয়ে দালালের খপ্পরে রীতিমত বিপাকেই পড়েন বলেজানান।
তিনি আরো জানান, মিডফোর্ট হাসপাতাল থেকে ইসিজি করানোর পরদালালের পাল্লায় পড়ে রোগী নিয়ে আসেন-জাতীয় হৃদরোগ ইন্সস্টিটিউট ওহাসপাতালে। তার রোগীকে একটি দালাল সিন্ডিকেটের ইসিজি রিপোর্টেরভিত্তিতেই চলে রিং পরানোর পায়তারা। ইয়াসিনের সরলতার সুযোগে নামমাত্র খরচে রিং পরানোর জন্য তার রোগীকে তাড়াহুড়া করে ওটি-তে ঢুকিয়েফেলা হয় হয়রানির প্যাচে। চলে অবৈধভাবে মোটা অংকের টাকা আদায়েরযত ফন্দি ফিকির।
এক পর্যায়ে তাকেও পোহাতে হয়-নাজেহাল, গুনতে হয়-খেশারতি। অথচহাসপাতালে ভেতরে প্রত্যেক মোড়ের দেয়ালে পোস্টার-ব্যানার সাটানোরআছে-দালালের খপ্পরে পড়বেন না। কাউকে কোন টাকা-পয়সাদিবেন না।যা দেখে আগত রোগীর সজনদের মনে একটু আশার সঞ্চার হলেও কার্যতঃযখন সেখানে চিকিৎসা নেয়ার সব প্রস্তুতি শেষ হলে শুরু হয়-ওইঅবৈধভাবে পয়সা আদায়ের নানাবিদ হয়রাণি। বিশেষ করে ওই প্রান্তিকআয়ের মানুষগুলো যখন হৃদরোগ জনিত সমস্যার কারণে নিরুপয় হয়েসেখানে ভর্তি হয়, তাদেরই বেশীর ভাগ নিরবে নাস্তানাবুদ হতে হয়। আরঅসহয়াত্বের সুযোগে অবৈধভাবে টাকা-পয়সা হাতানোর চলে নানাতৎপরতা।
বহিরাগত দালাল, আনসার ও সিকিউরিটিগার্ডের এ হয়রানির নেপথ্যেরয়েছেন-কতিপয় চিকিৎসকও। হাসপাতালের ঔষধ দেয়ার কথা বলাবাহল্য। উল্টো চাপ দিয়ে বাহির থেকে প্রয়োজন অতিরিক্ত ঔষধ কেনানোরপর তা বাহিরে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হয়। এমন কি-রোগীকে চিকিৎসার নামেজিম্মি করে (বিশেষ করে হৃদরোগ জনিত সমস্যাক্রান্ত) অন্যত্র পাঠিয়েবাইপাস সার্জারি বা রিং’পরানোর নামে মোটা টাকা হাতানোর অপতৎপরতাসেখানে অনেকটা ওপেন-সিক্রেট।
মোট কথায়-সেখানে চিকিৎসা সেবা নিতে পদে পদে খরচা আদায়েরঅভিযোগ অনেকটা গতানুগতিক।
কর্মচারীদের খুশি না করলে সিট তো মেলেই না। জরুরী বিভাগ থেকে ওয়ার্ডপর্যন্ত যেতেই ব্যয় হয় দেড় থেকে দুইশ টাকা। টাকা না দিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টাঅপেক্ষা করেও প্যাথলজিসহ বিভিন্ন পরীক্ষার সিরিয়াল পাওয়া যায় না।বেলা দুইটার পর হাসপাতালে খুঁজে পাওয়া যায় না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।বহির্বিভাগে চিকিৎসকের সিরিয়াল পেতেও গুনতে হয় বাড়তি টাকা।
কম খরচে সরকারি চিকিৎসা গ্রহণ করতে গিয়ে রোগীদের পড়তে হয় ফেরে।গুনতে হয় একটি বেসরকারি হাসপাতালের সমান চিকিৎসার খরচ। ফলেসরকারি চিকিৎসা সেবায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেরওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারাচ্ছে, বাড়ছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
সহকারি অধ্যাপক ডাক্তার শফিকুল ইসলামের কাছে এব্যাপারে জানতেচাইলে তিনি জানান, এসব বিষয়ে কোন প্রমাণ নাই। তাই এসব অভিযোগওসত্য নয়।
আর হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক মীর জামাল উদ্দিনেরকাছে এ ব্যাপরে জানার জন্য যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।