খুলনা ডেস্ক:
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক অস্থির ও অনিশ্চিত পর্যায়ে পৌঁছেছে। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার জনসমর্থনের বিশাল ভিত্তিতে ক্ষমতায় এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আস্থার জায়গাটি নড়বড়ে হয়ে উঠেছে। জনগণের প্রত্যাশা ছিল, সরকার দুর্নীতি দমন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যের অবসান এবং একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ সুগম করবে। কিন্তু বাস্তবে এসবের অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়, বরং দেশজুড়ে একধরনের রাজনৈতিক বিভ্রান্তি ও শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক গোষ্ঠী এখন নিজেদের দাবিদাওয়া নিয়ে সক্রিয়ভাবে সড়কে নামছে। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মব তৈরি করে সরকারকে চাপে ফেলছে এবং সরকারও অনেক সময় তাদের দাবি পূরণে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে সমাজে একটি ভুল বার্তা যাচ্ছে—যার জোরে হুমকি দিতে পারে, তার দাবি মেনে নেওয়া হয়। ফলে প্রশ্ন উঠছে, এই অবস্থায় জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কতটা নিরাপদ।
সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে বিভক্তি ও গ্রুপিংয়ের গুঞ্জন রয়েছে। অনেক সিদ্ধান্তের উৎস অজানা, এমনকি সরকারের উপদেষ্টারাও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের অন্ধকারে থাকার কথা বলছেন। এতে দেশের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। নির্বাচনের সময়কাল নিয়ে স্পষ্টতা না থাকায় বিভ্রান্তি আরও বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী না থাকলেও প্রধান উপদেষ্টার বিভিন্ন বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে যে একটি সম্ভাব্য সময়সীমা হিসেবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর কিংবা ২০২৬ সালের জুন বিবেচনায় রয়েছে।
বিএনপি এই সময়সীমা মেনে নিতে না পেরে ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া এনসিপি এখনো নির্বাচনের আগে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যকর করার পক্ষে। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেই মতভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। সরকারের ভেতরের একটি অংশ দীর্ঘমেয়াদি ক্ষমতায় থাকার পক্ষেও অবস্থান নিচ্ছে বলে নানা আলোচনা চলছে।
জনগণ এখন প্রশ্ন তুলছে, অন্তর্বর্তী সরকার কি শুধুই হাসিনার পতনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি সুশাসন ও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনের দিকে বাস্তব পদক্ষেপ নেবে? দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিচিত্র দাবি, মব সংস্কৃতি, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে অস্থিরতা এবং রাজনৈতিক সমন্বয়ের অভাব বর্তমান বাস্তবতাকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ক্রান্তিকালে সশস্ত্র বাহিনী যেন নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতি ইতিবাচক বার্তা দিলেও বাস্তব অগ্রগতি দেখতে চায় সাধারণ মানুষ।
বর্তমান সংকট নিরসনে রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, বিএনপি, এনসিপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক পক্ষদের মধ্যে বোঝাপড়া ও সমঝোতা ছাড়া এই অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে এবং একটি গণতান্ত্রিক, স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে এখন সময় দ্রুত ও সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়ার।