খুলনা ডেস্ক:
কুড়িগ্রামে গত কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজানের ঢলের প্রভাবে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরাম ও দুধকুমার নদ-নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। অনেক এলাকায় আবাদি জমি ও ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে, বিশেষ করে কাউন, ধান, বাদাম, পেঁয়াজ ও সবজির খেত ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সোমবার সকালে সরেজমিনে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদীর তীরবর্তী দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী ও বিদ্যানন্দ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকেরা হঠাৎ করে পানি বাড়ার কারণে আধা-পাকা ধান ও অপরিপক্ব বাদাম-পেঁয়াজ ক্ষেত থেকে ফসল উঠিয়ে নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই সময়মতো ফসল সংগ্রহ করতে না পারায় তা পানিতে ডুবে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
রাজারহাটের কৃষক মো. ফয়জার আলী বলেন, মাত্র আরও কয়েক দিন সময় পেলে বাদাম ঘরে তোলা যেত, কিন্তু হঠাৎ তিস্তার পানি এসে সবকিছু ডুবিয়ে দিয়েছে। অপর কৃষক হবিবর রহমান জানান, পাঁচ বিঘা জমিতে কাউনের চাষ করেছিলেন, কিন্তু পানি বেড়ে যাওয়ায় পুরো ফসল তলিয়ে গেছে এবং এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিনি।
ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট এলাকায় দেড় শতাধিক বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও বিদ্যুতের খুঁটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিপদের মুখে রয়েছে আরও প্রায় তিন শত বসতভিটা। নদীভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয়রা গাছ কেটে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছেন, কেউ কেউ ইতোমধ্যেই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
উলিপুরের বাসিন্দা আছিয়া বেগম জানান, তার ১৫ বিঘা জমি ও ভিটেমাটি নদীতে ভেঙে গেছে এবং বর্তমানে তিনি আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অপর এক বাসিন্দা সাজু মিয়া বলেন, এবারই তার জীবনে প্রথম নদীভাঙনের অভিজ্ঞতা, তিনি তিনটি ঘর, সুপারির বাগান হারিয়েছেন এবং ফলজ গাছ কেটে নিচ্ছেন নতুন ক্ষতির আশঙ্কায়।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানায়, আসাম ও মেঘালয়ে টানা ভারী বর্ষণের ফলে আগামী ৫ দিন জেলার প্রধান চারটি নদ-নদীতে পানি বাড়তে পারে। যদিও পানি এখনো বিপৎসীমার নিচে রয়েছে, তবে নিচু চরাঞ্চলগুলোতে সাময়িক জলাবদ্ধতা ও প্লাবনের আশঙ্কা রয়েছে। পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম জানান, আগামী এক সপ্তাহ বন্যার সম্ভাবনা না থাকলেও সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে স্থানীয়দের, কারণ নদীভাঙনের ঝুঁকি বেড়েই চলেছে।
এই অবস্থায় নদীপাড়ের মানুষজনের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নদী ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।