অনলাইন ডেস্ক:
‘আলিফের একমাত্র মেয়ে মাসুরা ইসলাম তাসফিয়া এখনো বুঝতে পারেনি সে তার বাবাকে আর দেখতে পাবে না। যখন বাড়িতে লোকজনকে জড়ো হতে দেখছে, তখন আধো আধো স্বরে ডেকে ফিরছে, ‘বাবা বাবা...।’
বৃহস্পতিবার সকালে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের শ্যালক কাজী মাওলানা বদরুদ্দিন সাদী প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সদা হাস্যোজ্জ্বল তাসফিয়ার মন এখন দুঃখে ভরা। পরিস্থিতি পুরোপুরি অনুধাবন করতে না পারলেও বাবাকে হারানোর শূন্যতায় তার ছোট্ট হৃদয় স্পর্শ করেছে। তার অশ্রুসিক্ত মুখের বেদনা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবাড়ি।’
অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের একমাত্র মেয়ে তাসফিয়া এবং তার স্ত্রী ইসরাত জাহান তারিন দ্বিতীয় সন্তানের চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। সাইফুল তার সেই অনাগত সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারেননি।
সাইফুলের বড় বোন জান্নাত আরা বলেন, ‘আমার ভাইয়ের তিন বছরের মেয়ে সারাদিন বাবাকে খুঁজছে। বাড়িতে যারা আসে সে সবার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, যেন তার বাবার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার দাবি করছি।’
নিহত সাইফুল ইসলাম আলিফের বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ এলাকায়। সম্প্রতি সাইফুল চট্টগ্রাম আদালতে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। সাত ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।
সাইফুল একজন অসাধারণ ছাত্র ছিলেন। তিনি আধুনগর ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। দাখিল শেষ করার পর তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে অধ্যয়ন করেন। সেখানেও তিনি একাডেমিকভাবে সমান সাফল্য অর্জন করেন। পরে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম থেকে এলএলবি ও এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করে আইন পেশায় যোগ দেন।
মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রাম আদালত ভবনের মূল ফটকের সামনে রঙ্গম কনভেনশন হল সংলগ্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের। এ সময় চিন্ময়ের অনুসারীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, আইনজীবী হত্যায় জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- রুমিত দাশ, সুমিত দাশ, গগন দাশ, নয়ন দাশ, বিশাল দাশ, আমান দাশ, রাজীব ভট্টাচার্য ও মনু মেথর।
কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ফারেঙ্গা গ্রামে দুটি জানাজা শেষে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এর আগে চট্টগ্রাম নগরে তিন দফা জানাজায় মানুষের ঢল নামে।
আইনজীবী সাইফুল হত্যার ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী শামশুল আলম।