বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২১, ২০২৪
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
|
শিরোনাম : * বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ভুটানের রাষ্ট্রদূত   * ভারত-পাকিস্তান ইস্যু না, দেশ হিসেবে সিন্ডিকেট হলে সমস্যা   * দাবি আদায় না হলে আমরণ অনশনের ঘোষণা নকলনবিশদের   * সশস্ত্র বাহিনী দিবস ২১ নভেম্বর, থাকছে যত আয়োজন   * পাকিস্তানে খেলা, দৃৃষ্টিহীনদের বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত   * গাজায় ১৭ হাজারের বেশি শিশুকে হত্যা করেছে ইসরায়েল   * যে কারণে দ্য উইচার ছাড়ছেন সুপারম্যান তারকা   * বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না ঢাকার যেসব এলাকায়   * বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি এখন যুক্তরাষ্ট্রে   * ফিরতি লেগে নেদারল্যান্ডসকে রুখে দিলো বসনিয়া  

   জাতীয়
ভেজাল ক্যাবলসে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, বিশাল রাজস্ব ফাঁকি
  Date : 21-10-2024
Share Button

বিশেষ প্রতিনিধি:

দেশের সর্বত্র নামি-দামি ব্রান্ডের বৈদ্যুতিক ক্যাবলস নানাভাবে নকল, ভেজাল হয়ে চলেছে। সাথে ফাঁকি পড়ছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব। মার্কেটে ভালো ব্রান্ডের ক্যাবলস কিনতে গেলে দেখাযাবে বেশিরভাগ বড়বড় দোকানে এক নম্বরটা ও দুই নম্বরটা উভয়ই আছে। মানহীন নকল ক্যালস ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে সাথে জনজীবন হয়ে পড়ছে মারাত্নক ঝুঁকিপূর্ণ। তথ্যমতে, প্রতিবছর শুধু নকল ক্যাবলসের কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার জান মালের ক্ষয়-ক্ষতি হয়ে চলেছে। অসাধু বিভিন্ন নকলবাজ কোম্পানি নামিদামি কোম্পানির লোগো হুবহু মোড়কে ব্যবহার করে তা কমদামে দেদারছে বাজারজাত করছে। যেকারণে প্রতিনিয়তই বেড়ে চলেছে অগ্নিকান্ডের ঘটনা।

দেশে বর্তমানে ১৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্যাবল, আটটি প্রতিষ্ঠানের সুইচ-সকেট ও ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ফ্যান তৈরির লাইসেন্স আছে। এছাড়া, অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম তৈরির লাইসেন্স আছে মাত্র ২২টি প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্স ছাড়া প্রায় শতাধিক কারখানায় তৈরি নকল পণ্য দিয়ে বাজার সয়লাব। এরসঙ্গে কিছু ব্যবসায়ী যারা, বৈধ-অবৈধভাবে বিদেশ থেকে অতি নিম্নমানের পণ্য আমদানি করে দেশে বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করছে।

একাধিকবার র‌্যাবের অভিযান থেকে দেখা যায়, ক্যাবলস নকলকারী সবচেয়ে বড় সিন্ডিকেট রয়েছে ঢাকার নবাবপুরে। কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে তারা যেসব বৈদ্যুতিক পণ্য বিক্রি করে সবই নকল। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান নকল ও আসল দুটোই বিক্রি করে। নামিদামি ব্রান্ডের নামে নকলকারী কোম্পানি নিম্নমানের কপার ও প্লাস্টিক ব্যবহার করে নকল ক্যাবল তৈরি করছে, যা সরকার ও জনসাধারণের সঙ্গে প্রতারণা করা। ক্যাবলস নকল করা ঢাকার অন্যান্য এলাকার অসাধু কোম্পানিগুলো বংশাল, সুত্রাপুর, সিদ্দিকবাজার, শ্যামপুর, রায়েরবাগ, মাতুয়াইল, কাঁচপুর, জিঞ্জিরা, সাভার, মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, উত্তরা,কালিগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ প্রভৃতি এলাকা পর্যন্ত কারখানা বিস্তৃত করেছে। কেউ চাকরি ছেড়ে সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তৈরি বানাচ্ছে নকল কারখানা। আবার দেশের বাইরে থেকেও আসছে নিম্নমানের পণ্যের একটা বড় অংশ। অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর নবাবপুরের কাপ্তান বাজার দেশের সবচেয়ে বড় বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকিকিনির এই এলাকার প্রতিটি দোকানেই পাওয়া যায় স্বনামধন্য কেবল কোম্পানির নকল বৈদ্যুতিক তার। এমনকী কোনো কোনো দোকানে কোম্পানির স্টিকার দেওয়া থাকলেও সে স্টিকারও নকল করে সাঁটানো হয় তারের কয়েলে। এরা কেউকেউ চীন থেকেও নিম্নমানের ক্যাবলস আমদানি করে তার উপর সেরা ব্রান্ডের লোগো বসিয়ে বাজারজাত করছে। আবার কেউকেউ সরাসরি নিম্নমানের কাঁচামাল দিয়ে ক্যাবলস নকল করছে। এদের মধ্যে রয়েছে সিন্ডিকেট, এলাকা ভিত্তিক, জেলাভিত্তিক এসোসিয়েশন। নকল ধরতে কিছুদিন অভিযান হলেও আবার নতুন করে নতুন নামে ক্যাবলস নকল শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার অধিদফতর মাশোয়ারা পেয়ে প্রয়োজনীয় অভিযানে না যাবার অভিযোগ রয়েছে।

অন্যদিকেএই খাতে রয়েছে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকির সুযোগ। একটি প্রতিষ্ঠান শুল্ক দিয়ে কাঁচামাল আমদানী করার পর তা দিয়ে কি পরিমাণ ফিনিশড গুডস তৈরি হয় সেটি ক্যালকুলেটিভ বিষয়। সেসব বিক্রয়কালে মূল্য সংজোযন কর কি পরিমাণ হবে এটি হিসাব করা যায়। স্থানীয় বাজার থেকে কাঁচামাল ক্রয় বিক্রয় উভয় সময় ভ্যাট-ট্রাক্স যুক্ত হবার কথা। কিন্তু তা হয় না। একাধিক প্রতিষ্ঠান আমদানী কাঁচামালে যে পরিমাণ সরাঞ্জাম উৎপাদন হবার কথা এর চেয়ে বহুগুন বেশি পণ্য উৎপাদনও করে। এরা নয়তো আমদানি কাঁচামালের হিসেবে ফাঁকি দিচ্ছে অথবা স্থানীয় স্ত্রাব দিয়ে মালামাল বানাচ্ছে। এভাবে অসাধু প্রতিষ্ঠান ফুলে ফেপে বিশাল অর্থের মালিক হয়ে যাচ্ছে। কেউকেউ ব্যাংকের পরিচালক চেয়ারম্যান পর্যন্ত হয়ে ডাচ্ছে। এরফলে সঠিক নিয়মে ভ্যাট দেওয়া বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং ছোটো প্রতিষ্ঠান ক্রমে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

এই সেক্টরের বাজার পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, ১০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান যারা মার্কেটে প্রথম সারির বলে দাবী করছে। দেশজুড়ে এসব কোম্পানির শতশত কোটি টাকার ক্যাবলস, ফ্যান, বালব, সুইস, সার্কিট সহ বিভিন্ন ইলেকট্রিক ইলেকট্রোনিক্স মালামাল বিক্রয় হচ্ছে। বিভিন্ন মিডিয়া ঘিরেও এদের প্রচারণা ব্যাপক ও চোখ ধাধানো পর্যায়ের। মার্কেটে, এদের শোরুমে পণ্যের সমাহার দেখলেও বুঝা যায় এরা ১ম সারির। নিজস্ব শোরুম বা সেলস সেন্টার, পাশাপাশি ছোটোবড় ইলেকট্রিক দোকানের মাধ্যমে দেশের সর্বত্র ব্যাপক হারে বৈদ্যুতিক সরাঞ্জাম সরবরাহ রয়েছে এদের। বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সব স্থানে ভ্যাট দেওয়ার নিয়ম যদিও এক। কিন্তু দু’একটা কোম্পানি ছাড়া বাকী প্রতিষ্ঠানগুলোর রাজস্ব দেওয়ার চিত্র প্রচারণা এবং প্রতিষ্ঠানিক কলেবরের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাজার প্রতিযোগীতার দিক দিয়ে বড় অবস্থানে থাকলেও এরা রাজস্ব দিচ্ছে ছোটো খাটো কোম্পানির আদলে।

ফাঁকির অন্য কৌশলও রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন। জানাগেছে, ভ্যাট গোয়েন্দাদের অভিযানে জরিমানা থেকে বাচতে বড়বড় দোকান, শোরুমে প্রদর্শনের জন্য অনেকে কৌশলে ভুয়া ভ্যাট চালান বানিয়ে কাছে রাখে। কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট চালান ইস্যু হয় ঠিকই কিন্তু তা ট্রেজারিতে জমা হয় না। এই ফাঁকিবাজদের অনেকে রেয়াদ সুবিধাও নিয়ে নিচ্ছে। এদের ডিসকাউন্ট, কমিশন এবং বিদেশ ভ্রমণসহ বিভিন্ন লোভনীয় অফারের মধ্যেও থাকে শতশত কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকির ইশারা। রাজস্ব প্রশাসন অফিসের মুল ভ্যাট চালানের সাথে ভুয়া চালান মিলালেই এদের ফাঁকির তথ্য বেরিয়ে পড়বে। সাথে ফাঁকি রোধে দোকানদার, উৎপাদনকারীরা কি পরিমাণ মালামাল বিক্রি করছে সে বিষয়ে রাজস্ব প্রশাসনের কার্যকরি ভেরিফিকেশন এবং অডিট থাকতে হবে।

প্রথম সারির বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ফ্যাক্টরীই ঢাকার বাইরে। বিশেষ সুবিধার জন্য কেউ কেউ ইকোনোমিক জোনেও ফ্যাক্টরী করেছে। কারো রয়েছে ভারতের সিমান্তবর্তী এলাকায় ফ্যাক্টরী। অভিযোগ রয়েছে, সুদুর এলাকায় শিল্পায়ন বিস্তারের আড়ালে রাজস্ব আড়াল করার সুবিধাও ব্যবহার হচ্ছে নানা কৌশলে।

এসব পণ্য তৈরির কাঁচামালের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এলুমনিয়াম, তামা, প্লাষ্টিক প্রভৃতি। আমদানী করা কাঁচামালের পাশাপাশি জাহাজ ভাঙ্গা, স্থানীয় বাজারের ভাঙ্গাড়ীও রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কাঁচামালে বানানো পণ্যে ভ্যাট ফাঁকি পড়ছে বেশি হারে। এলুমনিয়াম ও তামার ভাঙ্গাড়ী বা স্ক্রাপ কেনার ক্ষেত্রে প্রায় পুরো ভ্যাটই ফাঁকি পড়ে থাকে। অন্যদিকে স্ক্রাব সঠিক মাত্রায় পরিশুদ্ধ না করে উৎপাদিত সরাঞ্জাম ব্যবহারের কারণে ক্রমে মূল্য বৈষম্য, ভ্যাট ফাঁকিসহ ভয়ানক অগ্নি-দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। দেশে সংস্কারের উদ্যোগে এই সেক্টরেও সংস্কার করতে হবে। না হলে জনজীবনে ঝুঁকি আরো বাড়বে। বাড়তে থাকবে আরো অগ্নিকান্ড, সিস্টেম লস, সরকারের রাজস্ব লস।



  
  সর্বশেষ
সচিবের ফাঁদে দিশেহারা নিহতের পরিবার, বেরিয়ে আসছে-ক্ষমতার থলের বিড়াল
চেয়ারম্যান পালায়নের পর মেঘনা ব্যাংকে উজমা চৌধুরীর প্রশ্নবোধক আধিপত্য
শতকোটি টাকার মালিক রাজস্ব বোর্ডের ড্রাইভার আরজু
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাসহ ১১ মামলা বাতিল

প্রধান সম্পাদক: এনায়েত ফেরদৌস , অনলাইন সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত ) কামরুজ্জামান মিল্টন |
নির্বাহী সম্পাদক: এস এম আবুল হাসান
সম্পাদক জাকির হোসেন কর্তৃক ২ আরকে মিশন রোড ঢাকা ১২০৩ থেকে প্রকাশিত ও বিসমিল্লাহ প্রিন্টিং প্রেস ২১৯ ফকিরাপুল, মতিঝিল ঢাকা ১০০০ থেকে মুদ্রিত। সম্পাদকীয়, বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ২/২, ইডেন কমপ্লেক্স (৪র্থ তলা) সার্কুলার রোড, ঢাকা ১০০০। ফোন: ০১৭২৭২০৮১৩৮, ০১৪০২০৩৮১৮৭ , ০১৫৫৮০১১২৭৫, ই-মেইল:bortomandin@gmail.com